অভিযুক্ত কুমারজিৎ দাশগুপ্ত এবং সেই স্কুটার।— নিজস্ব চিত্র।
হাতিয়ার বলতে চারটি সংখ্যা। সেটিও পুরো ঠিক নয়। স্কুটির রেজিস্ট্রেশনের সেই শেষ চারটি সংখ্যা হাতিয়ার করেই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এক তরুণীর যৌন হেনস্থাকারীকে পাকড়াও করল পুলিশ।
ঘটনাটি রবিবারের। সিঁথি থানা এলাকার সমর সেন সরণির বাসিন্দা এক তরুণী অভিযোগ করেন, রবিবার বাড়ি ফেরার পথে একটি অনলাইন খাবার সরবরাহকারী সংস্থার এক ডেলিভারি বয় তাঁকে উত্ত্যক্ত করা শুরু করেন। তাঁর যৌন হেনস্থা করা হয় বলেও অভিযোগ।
বছর পঁচিশের ওই তরুণীর অভিযোগ, ওই দিন রাত ১০টা নাগাদ তিনি বাড়ি ফিরছিলেন। সেই সময়ে ওই যুবক তাঁর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় অশালীন ইঙ্গিত করেন। এর পর কুপ্রস্তাব দেন। ওই তরুণী প্রথমে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে, স্কুটারে চেপে ওই যুবক বার বার একই ভাবে তাঁকে উত্ত্যক্ত করা হয়। তরুণী তখন প্রতিবাদ করলে স্কুটার থামিয়ে তাঁর গায়ে হাত দিয়ে হেনস্থা করা হয় এক দফা। ওই তরুণী চেঁচিয়ে উঠলে ওই যুবক তখনকার মতো চলে যায়। কিন্তু কয়েক মুহূর্ত পরে ফের এসে তাঁর গায়ে হাত দিয়ে হেনস্থা করেন। ওই যুবকের মুখ হেলমেটে ঢাকা ছিল। ফলে ওই তরুণী অভিযুক্তের চেহারার বর্ণনাও পুলিশকে বিশেষ দিতে পারেননি। কেবল ওই স্কুটারের শেষ চারটি নম্বর তদন্তকারীদের দেন তিনি।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশি বলেই দিতে হবে তোলা! না দেওয়ায় মারধর-ছিনতাই নিউটাউনে
পুলিশ সূত্রে খবর, ওই চারটি সংখ্যাও পুরো ঠিক ছিল না। কিন্তু কলকাতা পুলিশের তথ্যভাণ্ডার ঘেঁটে স্কুটারের বর্ণনা এবং অভিযোগকারিণীর দেওয়া নম্বর মিলিয়ে একটি স্কুটারকে শনাক্ত করা হয়। কিন্তু তাতে সমাধান হওয়ার বদলে তদন্তকারীদের সমস্যা আরও বেড়ে যায়। কারণ, কলকাতা পুলিশের তথ্যভাণ্ডারে ওই স্কুটারের মালিকের নাম ছাড়া আর কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। তদন্তকারীরা বারাসত আরটিএ অফিস থেকে ওই স্কুটারের মালিকের একটি ঠিকানা পান। সেটি মধ্যমগ্রামের। সেখানে মালিকের একটি মোবাইল নম্বর দেওয়া ছিল। সেই মোবাইল নম্বর আবার শ্যামবাজারের একটি ঠিকানার। ধন্ধে পড়ে যান তদন্তকারীরা। ধোঁয়াশা আরও বাড়ে স্কুটারের মালিকের ড্রাইভিং লাইসেন্সের ঠিকানা দেখে। সেই ঠিকানাও আলাদা।
শেষে সূত্র মেলে মোবাইল থেকে। দেখা যায় মধ্যমগ্রামের আশপাশে মোবাইলের মালিকের নিয়মিত যাতায়াত। খানিকটা কপাল ঠুকেই সিঁথি থানার অফিসার শীলভদ্র ঘোষের নেতৃত্বে তদন্তকারীরা দিন ভর ওত পেতে থাকেন মধ্যমগ্রামে। এলাকা থেকেই খোঁজখবর নিয়ে বুঝতে পারেন, স্কুটারের চালক অনলাইন অ্যাপের খাবার ডেলিভারি করেন। নিশ্চিন্ত হয়ে সোমবার রাতে বাড়িতে হানা দিয়ে পাকড়াও করা হয় অভিযুক্ত কুমারজিৎ দাশগুপ্তকে। জেরায় তিনি অভিযোগের কথা স্বীকার করে। পুলিশ সূত্রে খবর, হরেকৃষ্ণ শেঠ লেনের একটি বাড়িতে খাবার ডেলিভারি করে ফেরার পথে ওই তরুণীর যৌন হেনস্থা করেন তিনি। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে কুমারজিতের ওই স্কুটারও।
আরও পড়ুন: নেতাজিনগরে নিঃসন্তান বৃদ্ধ দম্পতির রহস্যমৃত্যু, সম্পত্তির কারণে কি খুন? ধন্দে পুলিশ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy