Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

আতঙ্ক কাটিয়ে আনন্দ, উদ্যোগী তরুণ

এক জন কলেজপড়ুয়া হয়ে কোনও আর্থিক সাহায্য ছাড়াই সাধারণ শৌচালয়ে কম দামে স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবস্থা করা— সহজ কাজ তো নয়!  তবু এমন কাজই করছেন শহরের এক তরুণ।

দীপাঞ্জন মাহাতো
শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

এক জন কলেজপড়ুয়া হয়ে কোনও আর্থিক সাহায্য ছাড়াই সাধারণ শৌচালয়ে কম দামে স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবস্থা করা— সহজ কাজ তো নয়! তবু এমন কাজই করছেন শহরের এক তরুণ। তাঁর ইচ্ছে, শহর জুড়ে বেশ কিছু শৌচালয়ে এই ব্যবস্থা করে সে সংক্রান্ত একটি অ্যাপ চালু করবেন। সেই অ্যাপ চালুর আগেই পুজোর মুখে শৌচালয়গুলির অবস্থান গুগ্‌ল ম্যাপে দিয়ে তার লিঙ্ক ফেসবুকে আপলোড করেছেন ওই তরুণ। পুজোর শহরে সেই লিঙ্ক দেখেই মহিলারা চিনে নিতে পারবেন, কোন শৌচালয়ে গেলে মিলবে পরিষেবা।

বছর দেড়েক আগে এই কাজ শুরু হয়েছিল বাঁশদ্রোণীতে শোভন মুখোপাধ্যায় নামে ওই তরুণের বাড়ির কাছের একটি শৌচালয় থেকে। ভূগোল নিয়ে স্নাতকোত্তরের পড়াশোনার পাশাপাশি শোভন এখন বিভিন্ন এলাকার কাউন্সিলরের অনুমতি নিয়ে উত্তর থেকে দক্ষিণ কলকাতায় মোট ৭০টি শৌচালয়ে স্যানিটারি প্যাড রাখার বাক্স বসিয়ে ফেলেছেন। বাক্সগুলি কাঠের পাতলা টুকরো দিয়ে বানানো। শোভনের কথায়, ‘‘ওই বাক্সগুলিতে পরিষ্কার প্লাস্টিকের ভিতরে প্যাড রাখা থাকে। কারও প্রয়োজন হলে অল্প মূল্যের বিনিময়ে শৌচালয়ে থেকে প্যাড কিনতে পারবেন। পরে সেই টাকা দিয়েই আবার নতুন প্যাড কিনে রাখা হয় শৌচালয়ে।’’ প্যাড কেনার ব্যাপারে অনেকে তাঁকে ব্যক্তিগত স্তরে আর্থিক সাহায্য করেন বলেও জানিয়েছেন বছর বাইশের শোভন।

পুজোর সময়ে ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে হঠাৎ রাস্তায় ঋতুস্রাব হলে সমস্যায় যাতে না পড়তে হয় মেয়েদের, তার থেকেই এই ভাবনা। শোভন বলেন, ‘‘পুজোর সময়ে সকলেই রাস্তায় বেরিয়ে আনন্দ করেন। হাতের কাছে থাকা শৌচালয়ের অবস্থান জানলে তাঁদের সুবিধাই হবে। সে কারণেই লিঙ্কটা দিয়ে দিলাম।’’ শোভন জানান, স্মার্ট ফোন থেকে ফেসবুকে গিয়ে সেখানে দেওয়া লিঙ্কে ক্লিক করলেই জেনে যাওয়া যাবে কোথায় কোথায় এমন শৌচালয় রয়েছে। গুগ্‌ল ম্যাপের সাহায্যে বুঝে নেওয়া যাবে পৌঁছনোর পথটাও। শোভনের এই কাজ প্রসঙ্গে অনন্যা নাগচৌধুরী নামে এক কলেজছাত্রী বলেন, ‘‘ওঁর এই কাজে আমাদের খুবই উপকার হবে।’’ শুধু ওই ছাত্রী নন, শোভনের ওই কাজকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অনেকেই।

এই কাজ করতে গিয়ে অবশ্য বেশ কয়েক বার বাধার সম্মুখীনও হয়েছেন শোভন। তিনি জানিয়েছেন, এক-দু’টি শৌচালয়ের দায়িত্বে থাকা কর্মীরা প্যাডের টাকা না দেওয়ার ‘হুমকি’ দিয়েছেন। কোনও কোনও ক্ষেত্রে আবার প্যাডগুলি অপরিষ্কার জায়গাতেই ফেলে দেওয়া হয়েছে।

তবে কাজ করতে গেলে যে কিছু বাধা আসেই, তা জানেন শোভন। তাই এ সবের কারণে দমে যেতে একেবারেই রাজি নন তিনি। মোবাইল অ্যাপটি তৈরি করাই আপাতত তাঁর লক্ষ্য। শোভন জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই ওই অ্যাপ চালুর চেষ্টা করা হচ্ছে। সেই অ্যাপ তৈরিতে শোভনকে সাহায্য করছেন তথ্য ও প্রযুক্তিকর্মী অভিষেক নস্কর। তিনি বলেন, কিছু যান্ত্রিক সমস্যার কারণে একটু দেরি হয়েছে কাজে। তবে এই বছরের শেষের দিকে অ্যাপটি চালু করা যাবে বলেই আমাদের আশা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Puja Durga Puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE