Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

‘গাফিলতি’তে পিজির সুপারের নামে পরোয়ানা

বলাকা ঘোষ নামে ওই রোগিণীর পরিবারের দাবি, এসএসকেএমে বলা হয়, তিনি ৫-১০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছেন। কিন্তু এম আর বাঙুরে সেই পোড়ার বহরই ৩০ শতাংশ বলা হয়।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:৫২
Share: Save:

রান্না করতে গিয়ে পুড়ে যাওয়া রোগিণীর ক্ষত গুরুতর নয় বলে ভর্তি নিতে অস্বীকার করেছিলেন এসএসকেএমের ডাক্তারেরা। তিন দিন বাদে ওই রোগিণী ফের বহির্বিভাগে এলেও ভর্তি করা হয়নি বলে অভিযোগ। ক’দিন পরে যন্ত্রণায় কাতর রোগিণী এম আর বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি হতে পারেন।

বলাকা ঘোষ নামে ওই রোগিণীর পরিবারের দাবি, এসএসকেএমে বলা হয়, তিনি ৫-১০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছেন। কিন্তু এম আর বাঙুরে সেই পোড়ার বহরই ৩০ শতাংশ বলা হয়। ৪৫ দিন বাঙুরে ভর্তি থাকার পরে রোগিণী সুস্থ হন। তাঁর পরিবারের আরও দাবি, গাফিলতির অভিযোগ কার্যত আমল দেননি এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের তদন্ত কমিটি সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে নির্দোষ আখ্যা দিলেও দীর্ঘ ছ’বছর পরে সেই অভিযোগের তিরেই এসএসকেএমের সুপারকে বিব্রত হতে হচ্ছে।

কলকাতা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের বিচারক গত মার্চে হাসপাতালকে দু’লক্ষ টাকা জরিমানা করেছেন। সেই রায় গ্রাহ্য না করায় এ বার এসএসকেএমের সুপার রঘুনাথ মিশ্রের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত।

এ বিষয়ে রঘুনাথ মিশ্র বলেন, ‘‘অভিযোগটি কয়েক বছরের পুরনো। তখন আমি ছিলাম না। আদালতের রায় নিয়ে আইনি পরামর্শও নিচ্ছি।’’ কিন্তু আগেও হাসপাতালের তরফে ভুল স্বীকার করা হয়নি বলেই আদালতের রায়ে উঠে এসেছে। রায়ে এসএসকেএম কর্তৃপক্ষের সব ক’টি যুক্তিই খারিজ করা হয়। অন্য দিকে, বলাকাদেবীর আইনজীবী বেদ শর্মার দাবি, ‘‘এসএসকেএম ঠিক সময়ে ভর্তি না-করায় ওঁর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারত। তিনি নিরুপায় হয়েই এম আর বাঙুরে গিয়েছিলেন। প্রাণে বাঁচলেও এসএসকেএমে হয়রানি, হেনস্থায় তিনি জেরবার হন।’’ ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের রায়ও কার্যত এই অভিযোগটিই মেলে ধরছে।

সরকারি হাসপাতালে নিখরচার পরিষেবায় রোগিণীকে ক্রেতা বা উপভোক্তা বলা যায় না— এসএসকেএমের তরফে এই দাবিটি সুপ্রিম কোর্টের একটি পুরনো রায়ের উদাহরণ দিয়ে খারিজ করেন বিচারকেরা। এসএসকেএম-এর তরফে বলা হয়, ২০১৩ সালের ৩০ জানুয়ারি বহির্বিভাগে দেখানোর পরে সেখানে আবার না গিয়ে অন্য হাসপাতালে যাওয়াটা রোগিণীরই দোষ। তা ছাড়া এম আর বাঙুর এসএসকেএমের সহযোগী সংস্থা। অভিযোগকারিণী সরাসরি কেন সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেননি, হাসপাতালের তরফে সে প্রশ্নও তোলা হয়।

কোন ডাক্তার বহির্বিভাগ বা জরুরি বিভাগে ছিলেন, রোগিণীর পক্ষে তা জানা সম্ভব নয় বলে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে আদালত। এসএসকেএমের তদন্ত কমিটিতে অ-চিকিৎসক সদস্যের উপস্থিতি নিয়েও প্রশ্ন তুলে রায়ে বলা হয়, ওই কমিটি রোগিণী বা এম আর বাঙুর কর্তৃপক্ষ— কারও সঙ্গেই কথা বলেনি। বিচারকেরা বলেন, ‘‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ১৫ শতাংশ পুড়ে গেলেই রোগীকে ভর্তি করা উচিত। জায়গা না থাকলে এসএসকেএম অন্যত্র রেফার করতে পারত। রোগিণী কতটা পুড়ে গিয়েছেন, তা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টাও হয়ে থাকতে পারে।’’

এই রায়ের বিরুদ্ধে রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছেন এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তার আগেই তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। তাতে স্থগিতাদেশও দেয়নি কমিশন। গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে ২৫ সেপ্টেম্বর ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে ভবানীপুর থানাকে রিপোর্ট দিতে

বলা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

SSKM Hospital Superintendent Medical Negligence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE