Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

কুমোরটুলিতে জুজু তিতলিই

সোমবার থেকেই হাওয়া অফিসের মন খারাপ করা খবর শুনে মাথায় হাত পড়েছিল কুমোরটুলির শিল্পীদের। একই সঙ্গে চিন্তা বেড়েছিল পুজো উদ্যোক্তাদেরও।

আবরণ: মণ্ডপের পথে প্রতিমা। বুধবার, কুমোরটুলিতে। নিজস্ব চিত্র

আবরণ: মণ্ডপের পথে প্রতিমা। বুধবার, কুমোরটুলিতে। নিজস্ব চিত্র

মেহবুব কাদের চৌধুরী
শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৮ ০১:১৩
Share: Save:

‘তিতলি’ই এখন ‘অসুর’ কুমোরটুলির শিল্পী ও পুজো উদ্যোক্তাদের কাছে।

সোমবার থেকেই হাওয়া অফিসের মন খারাপ করা খবর শুনে মাথায় হাত পড়েছিল কুমোরটুলির শিল্পীদের। একই সঙ্গে চিন্তা বেড়েছিল পুজো উদ্যোক্তাদেরও। মঙ্গলবার রাতে আবহাওয়া অফিসের সতর্কবার্তায় আর বসে থাকেননি গিরিশ পার্ক, দমদম বা খড়্গপুরের পুজোকর্তারা। ওঁদের কারও চতুর্থী, কারও বা পঞ্চমীর দিনে প্রতিমা কুমোরটুলি পাড়া থেকে মণ্ডপে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওড়িশা উপকূলে ঘূর্ণিঝড় ‘তিতলি’র সতর্কবার্তা পেয়ে ওঁরা বুধবার সকালেই কুমোরটুলিতে এসে ভিড় জমান। খারাপ আবহাওয়ার জন্য অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বার দ্বিতীয়ার দিনেই কুমোরটুলি থেকে প্রতিমা নিয়ে যাওয়ার ভিড় ছিল দেখার মতো।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের জেরে বুধবার সকাল থেকেই আকাশ মেঘলা ছিল। বৃষ্টি আসার আগাম আঁচ পেয়ে ত্রিপল, প্লাস্টিক নিয়ে প্রস্তুত ছিলেন শিল্পীরা। দুপুরে কুমোরটুলিতে ঝেঁপে বৃষ্টি নামার সঙ্গে সঙ্গে শিল্পীরা তখন যে যাঁর প্রতিমা প্লাস্টিকে ঢাকতে ব্যস্ত। হাওয়া অফিসের সতর্কবার্তা পেয়ে যে সব পুজো উদ্যোক্তা আগেভাগে প্রতিমা নিতে এ দিন দুপুরে এসেছিলেন, তাঁদেরও মাথায় হাত। বরাহনগরের একটি ক্লাব ঠাকুর নিতে কুমোরটুলিতে যখন হাজির হয়েছে, তখন রীতিমতো ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি পড়ছে। বাড়তি দামে বেশ কয়েকটি প্লাস্টিক কিনে প্রতিমাকে ঢেকে গাড়িতে তুলে কোনও রকমে মণ্ডপের উদ্দেশে রওনা দিলেন পুজো
কমিটির সদস্যেরা।

কুমোরটুলির শিল্পী সুজিত পাল চলতি বছরে প্রায় চল্লিশটি দুর্গা প্রতিমা তৈরির বায়না পেয়েছেন। শিল্পীর কথায়, ‘‘শুধু দুর্যোগের ভয়েই মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকালের মধ্যে কুড়িটি প্রতিমা নিয়ে চলে গিয়েছেন পুজো উদ্যোক্তারা।’’ শিল্পী মিন্টু পালের তৈরি চারটি প্রতিমা পঞ্চমীর দিন যাওয়ার কথা ছিল। তিনি বলেন, ‘‘দুর্যোগের চিন্তায় উদ্যোক্তারা মঙ্গলবার বিকেলেই ফোন করেছিলেন। কাজ শেষ হয়ে যাওয়া চারটি প্রতিমা নিয়ে চলে গিয়েছেন তাঁরা।’’ শিল্পী কাঞ্চি পালের কথায়, ‘‘মহালয়ার পরে প্রতিমার কাজ প্রায় শেষ হয়ে যায়। অথচ তৃতীয়ার দিন থেকে যে ভাবে দুর্যোগ দেখা দিল, তা শিল্পী বা পুজো কমিটি, সকলের পক্ষে চিন্তার বিষয়।’’

তবে দুর্যোগের সময়ে কুমোরটুলিতে পড়ে থাকা প্রতিমাগুলি নিয়ে মাথায় হাত শিল্পীদের। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, বুধবার রাত থেকে কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। কুমোরটুলির আর এক শিল্পী তপন পালের কথায়, ‘‘চার মাস ধরে শিল্পীরা মায়ের রূপ ফুটিয়ে তোলেন। কুড়িটি প্রতিমার বায়না রয়েছে। চতুর্থী থেকে প্রতিমা নিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু আবহাওয়ার কথা শুনে বেশ ভয় লাগছে।’’ তিনি জানান, এখন প্লাস্টিক, ত্রিপল দিয়ে প্রতিমা ঢেকে রাখতে হচ্ছে। কারণ, বৃষ্টি না কমলে উদ্যোক্তারাও তা নিয়ে যেতে পারবেন না।

শহরের অধিকাংশ পুজো মণ্ডপের কাজ এখনও শেষ হয়নি। কুমোরটুলি পাড়ার লাগোয়া কুমোরটুলি সর্বজনীন দুর্গোৎসবের কাজ এখনও বেশ কিছুটা বাকি। এক পুজোকর্তার কথায়, ‘‘বৃষ্টিতে কাজ করা বেশ কষ্টকর। বিশাল বড় এলাকা। এতটা ত্রিপলে ঢাকা দেওয়াও অসম্ভব। বৃষ্টি না থামলে যে কী হবে!’’ বাগবাজার পল্লিপুজো প্রদর্শনীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘মণ্ডপের কাজ শেষ হতে পঞ্চমী গড়িয়ে যাবে। এখন ‘তিতলি’ই আমাদের যত বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’’ তাঁর বক্তব্য, বরুণ দেবতার কাছে তাঁদের একটাই প্রার্থনা, যত তা়ড়়াতা়ড়ি সম্ভব রোদ ঝলমলে আকাশ ফিরে আসুক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE