ঘটনা ঘটেছিল সোমবার রাতে।তখন থেকে অনেক টালবাহনার শেষে, প্রায় ৪২ ঘণ্টা পর মেট্রো কর্তৃপক্ষ শেষ পর্যন্ত মেনে নিলেন, সে দিন রাতে ঘটনাটি ঘটেছিল। সেই সঙ্গে প্রকাশ্যে চলে এল, মেট্রোর আপাত আঁটোসাটো নিরাপত্তা বাস্তবে ফস্কাগেরো। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করার পাশাপাশি, মেট্রোর তরফ থেকে ঘটনার কথা জানানো হয়েছে কলকাতা পুলিশকে। “আমরা মেট্রোর তরফ থেকে অভিযোগ পেয়েছি। সিঁথি থানার পক্ষ থেকে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করা হয়েছে”, জানিয়েছেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান প্রভীন ত্রিপাঠী।
সোমবার রাতে একদল সহযাত্রীর হাতে দুই তরুণ-তরুণীর হেনস্থার ঘটনা প্রকাশ্যে চলে আসার পরই শহর জুড়ে প্রতিবাদের ঢেউ ওঠে। বুধবারও দমদমের মতো টালিগঞ্জ মেট্রো স্টেশনের সামনে দুপুর থেকে শুরু হয়ে যায় একই রকম প্রতিবাদ। তার পরেই তড়িঘড়ি মেট্রো ভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন কলকাতা মেট্রোর জেনারেল ম্যানেজার অজয় বিজয়র্গীয়। তাঁর সঙ্গে ছিলেন মেট্রোর সিনিয়র নিরাপত্তা আধিকারিক মহম্মদ মানোয়ার খান।
অজয় বিজয়বর্গীয় প্রথমেই ঘটনার নিন্দা করেন, কিন্তু সেই সঙ্গে যোগ করেন যে তাঁরা এমন কোনও ফুটেজ পাননি প্ল্যাটফর্মের সিসিটিভি থেকে, যেখানে ওই যুগলকে মারধর করতে দেখা যাচ্ছে। সে দিনের কোনও যাত্রী বা যাঁদের হেনস্তা করা হয়েছে বলে অভিযোগ, তাঁরাও কেউ অভিযোগ জানাননি, বলেন বিজয়বর্গীয়। তিনি জানান, “দমদম স্টেশনে মঙ্গলবার কয়েকজন একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন ঘটনার তদন্ত চেয়ে। সেই অভিযোগপত্র আমরা সিঁথি থানার হাতে তুলে দিয়েছি। কলকাতা পুলিশ তদন্ত করবে। আমরা তাঁদের সহযোগিতা করব।” যদি সিসিটিভির ফুটেজে কিছুই না দেখা গিয়ে থাকে, অভিযোগ না থাকে, তা হলে কিসের ভিত্তিতে কলকাতা পুলিশের কাছে অভিযোগ পাঠালো মেট্রো?
এই প্রশ্নের উত্তরেই বেরিয়ে আসে মেট্রো নিরাপত্তার বেহাল দশা। নিরাপত্তা আধিকারিক মানোয়ার খান বলেন, “ট্রেনটি দমদমে ঢোকার পর, ঠিক ৯টা ৫৫ মিনিটে প্ল্যাটফর্মের দক্ষিণ দিকে একটা একটা জটলা দেখা গিয়েছে ফুটেজে। পিছনের দিকের একটি কামরা থেকে এই জটলাটা নামতে দেখা যায়। কিন্তু সেখানে মারধরের ঘটনা দেখা যায়নি। কারণ ওই জায়গা থেকে ক্যামেরার দূরত্ব অনেকটা বেশি।”
বিজয়বর্গীয়ও স্বীকার করে নেন, প্ল্যাটফর্মের ওই অংশটি কার্যত ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার নজরদারি সীমার বাইরে।মানোয়ার খানও স্বীকার করেন, আরপিএফের নিরাপত্তা কর্মীরা মূলত ঢোকা বেরোনোর জায়গায় মোতায়েন থাকেন। ওই সময়ে প্ল্যাটফর্মে যে নিরাপত্তা রক্ষীরা ছিলেন না তা মেনে নেন তিনি। “ক্যামেরায় স্পষ্ট দেখা না গেলেও কিছু একটা ঘটনা ঘটেছে”— স্বীকার করেন মানোয়ার খান। ওই প্ল্যাটফর্মে চারটি ক্যামেরা থাকার পরও, সেখানকার অনেকটা অংশই যে ক্যামেরার নজরদারির বাইরে তা এ দিন মেনে নেয় মেট্রো কর্তৃপক্ষ। বিজয়বর্গীয় জানান, আরও সিসি-ক্যামেরা লাগানো হবে স্টেশনে, যাতে কোনও অংশ নজরদারির বাইরে না থাকে। তেমনি, চলন্ত মেট্রোতেও নজর রাখতে, নতুন কোচে সিসি-ক্যামেরা লাগানোর কথা ঘোষণা করেন তিনি। এ ছাড়াও প্ল্যাটফর্ম ও চলন্ত ট্রেনে টহলদারির জন্য আরপিএফের বিশেষ দল তৈরির কথা বলেন তিনি, যে দলে অন্তত একজন মহিলা নিরাপত্তারক্ষী থাকবেন।
যে প্রশ্নটা প্রতিবাদকারীরা বার বার তুলেছেন তা হল— সে দিন কোনও পুলিশ কর্মী কেন ওই দুর্বৃত্তদের রুখলেন না! তার উত্তর বেরিয়ে এল বিজয়বর্গীয়র এই বাড়তি নিরাপত্তার ঘোষণাতেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy