সন্তানের জন্ম দিলেও বাচ্চাকে নিতে রাজি হননি অবিবাহিত মা, পেশায় ‘বার ডান্সার।’ তাই জন্মের দেড় মাসের মাথায় বাচ্চাকে ‘সারেন্ডার’ করতে পৌঁছে গিয়েছিলেন নিউ টাউন থানায়। আইন মেনে সইসাবুদ করে সেখানেই বাচ্চাকে দিয়ে চলে যান তিনি। সেখান থেকে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার শিশুকল্যাণ সমিতির নির্দেশের ভিত্তিতে শিশুটি যায় সরকার অনুমোদিত একটি হোমের হেফাজতে। কিন্তু অভিযোগ, সব আইন মেনে বাচ্চাকে দেওয়ার পরেও জেলার শিশুকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান ‘সারেন্ডার ফর্মে’ সই না করায় এক বছর ধরে কোনও ‘লিগাল স্ট্যাটাস’ ছাড়াই হাওড়ার ওই হোমে পড়ে রয়েছে শিশুটি। ফলে তার ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন জেলার শিশুকল্যাণ দফতরের তরফে।
নিউ টাউন থানা সূত্রের খবর, ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে দেড় মাসের এক শিশু কোলে বছর কুড়ির ওই তরুণী থানায় হাজির হন। নিজের পরিচয় গোপন করে সন্তানকে সরকারি হেফাজতে রাখার জন্য পুলিশকে অনুরোধ করেন তিনি। পুলিশের দাবি, ওই তরুণী জানিয়েছিলেন, শিশুটি তাঁরই। কিন্তু তাকে নিজের কাছে রাখতে চান না। জানিয়েছিলেন, ভবিষ্যতেও বাচ্চাকে ফেরত চান না। পুলিশ জানায়, ওই দিনই আইন মেনে বাচ্চাকে সরকারি হেফাজতে ‘সারেন্ডার’ করে উধাও হয়ে যান তরুণী।
ফলে পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার শিশুকল্যাণ সমিতির সঙ্গে যোগাযোগ করে শিশুটিকে নিয়ে কী করণীয় জানতে চায়। এর পরেই শিশুকল্যাণ সমিতির নির্দেশে বাচ্চাটিকে হাওড়ার ওই সরকার অনুমোদিত হোমে পাঠানো হয়।
কিন্তু অভিযোগ, পরে তাকে সরকারি ভাবে নিজেদের আশ্রয়ে রাখার জন্য এবং দত্তকের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ-সহ সইয়ের জন্য শিশুটিকে নিয়ে ওই হোমের তরফে সমিতির কাছে গেলেও সমিতির চেয়ারম্যান অরবিন্দ দাশগুপ্ত ফর্মে সই করতে রাজি হননি। উল্টে দু’-তিন মাসের মাথায় ওই তরুণীকে খুঁজে বার করে এবং বারবার ডেকে পাঠিয়ে ‘সিঙ্গল মাদার’ হিসেবে সন্তানকে নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন।
হাওড়ার হোম সূত্রের খবর, অরবিন্দবাবুর ডাকে ওই তরুণী সমিতিতে আসেন। তখন হাওড়ার হোম থেকে শিশুটিকেও সমিতির সামনে হাজির করানো হয়। কিন্তু সে দিনও ওই তরুণী বাচ্চাকে ফেরত নিতে চাননি। পরে ২০১৫ সালের অগস্ট মাসে এ নিয়ে একটি হোম কর্তৃপক্ষ ও সমিতির বৈঠক হয়। সেখানেও সকলে ওই তরুণীর কথা শুনে বাচ্চাটিকে ‘দত্তকের’ জন্য উপযুক্ত বলে মেনে নিয়েছিলেন। সেইমতো জেলার শিশুকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যানকে সই করতে বললেও, তখনও অরবিন্দবাবু সই করেননি বলে অভিযোগ।
এর পরে কেটে গিয়েছে এক বছর। ‘লিগ্যাল স্ট্যাটাস’ ছাড়াই শিশুটি পড়ে রয়েছে হাওড়ার ওই হোমে। মাসখানেক আগে উত্তর ২৪ পরগনার জেলা শিশুকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান অরবিন্দবাবুই ওই শিশুটিকে কলকাতার একটি হোমে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু নানা জটিলতায় সেই হোমও বাচ্চাটিকে নিজেদের হেফাজতে নেয়নি। চেয়ারম্যান সই না করায় খাতায়-কলমে লিগাল স্ট্যাটাসহীন শিশুটিকে দত্তকও দেওয়া যাবে না।
প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে মা নিজেই আইন মেনে বাচ্চাকে সরকারি হেফাজতে দিয়ে গিয়েছেন, সেখানে সেন্ট্রাল অ্যাডপশন রিসোর্স এজেন্সি (কারা আইন) মেনে সমিতির চেয়ারম্যান ফর্মে সই করলেন না কেন? কেনই বা এক বছর ধরে শিশুটিকে এ ভাবে হোমে ফেলে রাখা হয়েছে? অরবিন্দবাবুর দাবি, ‘‘মেয়েটি দোটানায় ছিল। তাই সময় নিয়েছিলাম, যাতে বাচ্চাটিকে মায়ের কাছে ফেরত পাঠানো যায়।’’
সন্তানকে নিতে চান না মা। তিনি ফিরেও আসেননি আর। আপাতত তাই একটি সইয়ের উপরেই নির্ভর করছে শিশুর ভবিষ্যৎ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy