Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

ববির পরে শোভনকে তির এ বার জাভেদের 

তৎকালীন দমকলমন্ত্রী জাভেদ খানের স্পষ্ট দাবি, পুরসভার রাজস্বের ক্ষতি হচ্ছে জানিয়ে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় অনুরোধ করাতেই অগ্নিপ্রবণ ভবনগুলিকে এনওসি দিয়েছিল দমকল।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

দেবাশিস ঘড়াই
শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:২১
Share: Save:

শোভন চট্টোপাধ্যায়ের আমলে নয়, শহরের বিপজ্জনক ও অগ্নিকাণ্ডপ্রবণ ভবনগুলিতে ব্যবসার ছাড়পত্র দেওয়া শুরু হয়েছিল জাভেদ খানের আমলেই। তার পর থেকে শুধুমাত্র সেই রীতিই বজায় রেখেছে কলকাতা পুরসভা। বাগড়ি-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে পুরসভা একটি রিপোর্ট তৈরি

করছে, যার সারমর্ম এমনটাই বলে সূত্রের খবর। যদিও কর্তৃপক্ষের দাবি, শুধুমাত্র ‘নোটস’ আকারে সমস্ত তথ্য তুলে ধরা হচ্ছে। কোনও ব্যাখ্যা করা হচ্ছে না সেখানে।

কিন্তু সেই রিপোর্টকে কেন্দ্র করেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দমকলের এ কাল এবং সে কাল। কারণ তৎকালীন দমকলমন্ত্রী জাভেদ খানের স্পষ্ট দাবি, পুরসভার রাজস্বের ক্ষতি হচ্ছে জানিয়ে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় অনুরোধ করাতেই অগ্নিপ্রবণ ভবনগুলিকে এনওসি দিয়েছিল দমকল। যার ভিত্তিতে ব্যবসার ছাড়পত্র দিতে শুরু করেছিল পুরসভা! উল্লেখ্য, বাগড়ি-কাণ্ডের দায় যে মেয়র তথা দমকলমন্ত্রী এড়াতে পারেন না, দিন দুই আগে নাম না-করে সে কথা বলেছিলেন খোদ পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও।

সূত্রের খবর, বাগড়ি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের পরে শহরের ৩৭টি ভবন, যেগুলির অগ্নিসুরক্ষা পরিকাঠামো বর্তমানে আতসকাচের তলায় আছে, সেগুলিকে নিয়ে একটি বিশেষ রিপোর্ট তৈরি করছেন পুর কর্তৃপক্ষ। মেয়র তথা দমকলমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশেই সেই রিপোর্ট হচ্ছে বলে খবর।

সেই রিপোর্টে বিপজ্জনক বাড়িগুলিতে এক বছরের জন্য ব্যবসার ছাড়পত্র দেওয়ার সমস্ত তথ্য কালানুক্রমিক ভিত্তিতে একত্রিত করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট রিপোর্টে এই ইঙ্গিতই থাকছে যে, শোভনবাবু দমকলমন্ত্রী হওয়ার আগে, ২০১৩-’১৪ সাল থেকেই ওই

ভবনগুলিকে ‘এনওসি’ দিয়ে এসেছে দমকল। তখন দমকলমন্ত্রী ছিলেন জাভেদ খান। ওই সমস্ত ভবনে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার সেই শুরু। তার পর থেকে বছর বছর পুরসভা শর্তসাপেক্ষে এক বছরের মেয়াদে ওই ভবনগুলিতে ব্যবসা করার ছাড়পত্র দিয়েছে মাত্র! ফলে শোভনবাবু দমকলমন্ত্রী হওয়ার পরে মোটেই ওই ভবনগুলিকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। দমকলের এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘‘দমকলমন্ত্রী হিসেবে শোভনবাবুর এ ক্ষেত্রে দোষ নেই। তিনি দায়িত্ব পাওয়ার আগেই ওই বাড়িগুলি ছাড়পত্র পেয়েছিল।’’

দমকল সূত্রের খবর, জাভেদ খানের সময়েই বাগড়ি মার্কেট-সহ ১৩টি বাড়িকে প্রাথমিক ভাবে ‘এনওসি’ দেওয়া হয়েছিল। তার আগে ২০০৮ সালে নন্দরাম মার্কেট এবং ২০১০ সালে স্টিফেন কোর্টে অগ্নিকাণ্ডের প্রেক্ষিতে শহরের মোট ৪২টি ভবনকে ‘এনডেঞ্জারড’ ও ‘ফায়ারপ্রোন’ হিসেবে চিহ্নিত করে সেগুলিতে ব্যবসা বন্ধ রাখা হয়েছিল। পরে পাঁচটি ভবন অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা করায় ছাড়পত্র পায়। তালিকায় পড়ে থাকে ৩৭টি বাড়ি। জাভেদ খানের পাল্টা দাবি, ‘‘মেয়র শোভনবাবু অনুরোধ করেছিলেন দমকলের ছাড়পত্র দিতে। কারণ, ৪২টি ভবনে ব্যবসা বন্ধ থাকায় পুরসভার রাজস্বের ক্ষতি হচ্ছিল। তার পরেই আমরা এনওসি দিয়েছিলাম। কিন্তু তা এক বছরের জন্য। তার মধ্যে অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা হল কি না, সেটা পুরসভা দেখবে না! তাদেরই তো দেখার কথা ছিল!’’

প্রশাসনেরও একাংশের বক্তব্য, দায় এড়ানোর জন্যই এখন এই রিপোর্টকে ঢাল করতে চাইছেন পুর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু শোভন নন, জাভেদের আমলই দায়ী, এই যুক্তি কতটা গ্রাহ্য হবে, সে প্রশ্ন রয়েছেই। কারণ, শোভনবাবুর আমলেই ৩৭টি ভবনের ট্রেড লাইসেন্স নবীকরণের জন্য লেট ফি-সহ সমস্ত ফি মকুব করা হয়। এমনকি, গত জুলাইয়েই বাগড়ি মার্কেট-সহ সংশ্লিষ্ট ভবনগুলিতে ব্যবসার ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল। প্রাক্তন মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যও বলেন, ‘‘সকলে সমান দায়ী। আমার দায় নেই, এটা কেউ শুনবেন না!’’

সূত্রের খবর, সংশ্লিষ্ট রিপোর্টে এ-ও বলা হচ্ছে যে, পুরসভা ট্রেড লাইসেন্স দেয় না। শুধু ‘সার্টিফিকেট অব এনলিস্টমেন্ট’ দেয়। ব্যবসা বন্ধের ক্ষমতা লাইসেন্স দফতরের হাতে নেই। এ বিষয়ে শোভনবাবু বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে রিপোর্ট নিয়ে মন্তব্য করব না। যা বলার পরে বলব।’’

এ দিকে, পুর বিল্ডিং দফতর শহরের সমস্ত বাজার সমীক্ষা করে দেখবে বলে পুরসভা সূত্রের খবর। বাজারে বেআইনি নির্মাণ ভেঙে দেওয়া হবে। পুরসভার অন্য সমস্ত দফতরও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে। বাগড়ি মার্কেটের বর্তমান কাঠামো পরীক্ষা করবেন পুর ইঞ্জিনিয়ারেরা। মেয়র বলেন, ‘‘আগুন নিভলে ইঞ্জিনিয়ারেরা ভবনটি পরীক্ষা করবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE