Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ছাই হওয়া বাজারে খেটে বাড়তি উপার্জন

শনিবার মাঝরাতে বাগড়ি মার্কেটে আগুন লাগার পরের দিন পুলিশ কাউকে সেখানে ঢুকতে দেয়নি। এ দিন আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসার পরে পোড়া বাজারে মোটবাহকদের ঢোকার অনুমতি মিলেছে

পোড়া বাজারের জিিনসপত্র বার করে আনার জন্য ডাক পড়েছে মুটেদের। সোমবার, বড়বাজারে। ছবি:সুমন বল্লভ

পোড়া বাজারের জিিনসপত্র বার করে আনার জন্য ডাক পড়েছে মুটেদের। সোমবার, বড়বাজারে। ছবি:সুমন বল্লভ

মেহবুব কাদের চৌধুরী
শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:৩০
Share: Save:

বাগড়ি মার্কেটের বি ব্লকের ‘এইচ’ গেট দিয়ে ঢুকছিলেন-বেরোচ্ছিলেন ওঁরা। মাথায় প্রমাণ সাইজের বস্তা আর গাঁটরি। মুখ-চোখ ঘামে ভেজা। ঘাম-জবজবে জামাটা শরীরের সঙ্গে লেপ্টে আছে। চারপাশে থিকথিকে ভিড় পুলিশ, দমকলকর্মী আর ব্যবসায়ীদের। তার মধ্যেই মাথায় বড় বোঝা নিয়ে অনায়াসে ভিড়ের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন তাঁরা। সামনের একটি গুদামে বস্তা নামিয়ে রেখে ফের দাঁড়িয়ে পড়লেন ‘এইচ’ গেট দিয়ে ঢোকার লাইনে। গন্তব্য পোড়া বাজার।

ওঁরা সকলে বড়বাজারের মোটবাহক। সোমবার সারা দিন কেটেছে চূড়ান্ত ব্যস্ততায়। শনিবার মাঝরাতে বাগড়ি মার্কেটে আগুন লাগার পরের দিন পুলিশ কাউকে সেখানে ঢুকতে দেয়নি। এ দিন আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসার পরে পোড়া বাজারে মোটবাহকদের ঢোকার অনুমতি মিলেছে। তাঁদের নিয়োগ করেছেন দোকানের মালিকেরা। প্রায় ছাই হয়ে যাওয়া দোকানের ভিতরে যেটুকু মালপত্র অবশিষ্ট আছে, তা-ই নিয়ে আসছেন ওই মোটবাহকেরা।

তবে এই কঠিন কাজই ওঁদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। এ দিন সকাল থেকে বড়বাজার এলাকার প্রচুর মোটবাহক চলে এসেছেন পোড়া বাগড়ি মার্কেটের সামনে। কাজও মিলছে প্রচুর। সেই সঙ্গে তাঁরা জানালেন, এই কাজের জন্য পারিশ্রমিকও মিলছে একটু বেশি।

এক মোটবাহক রাকেশ যাদব জানালেন, বাজারের ভিতরের অবস্থা একেবারেই ভাল নয়। ধোঁয়ায় ঢেকে আছে চার দিক। দু’দিন পরেও দেওয়াল থেকে আগুনের হলকা বেরোচ্ছে। তার মধ্যেই পুড়ে যাওয়া দোকান থেকে জিনিসপত্র কিছুটা গুছিয়ে বস্তায় ভরে আনতে হচ্ছে। রাকেশের কথায়, ‘‘কাজটা খুব কঠিন। কখনও দোতলা, কখনও তিনতলা থেকে মাল নামাতে হচ্ছে। কয়েক জন তো ধোঁয়ায় অল্পবিস্তর অসুস্থও হয়ে পড়েছেন।’’

আরও পড়ুন: বিপজ্জনক, তবু ৩৭ বিল্ডিংকে ফি ছাড় পুরসভার

আর এক মোটবাহক গণপত যাদব জানালেন, এমনিতে ৮০-৯০ কেজির জিনিস বহন করার জন্য তাঁরা ৭০ থেকে ৮০ টাকা পান। গণপত বলেন, ‘‘এখানেও ৮০-৯০ কেজি ওজনই বইছি। কিন্তু আগুনের মধ্যে থেকে জিনিস বার করতে হচ্ছে। সেগুলি নিয়ে যেতে হচ্ছে একটু দূরে। তাই রেটটা একটু বেশিই হচ্ছে।’’ রাম সিংহ নামে এক মোটবাহক থাকেন ক্যানিং স্ট্রিটের ফুটপাতে। তাঁর বাড়ি বিহারের সমস্তিপুরে। রাম বলেন, ‘‘ওই পোড়া বাজারে চার বার ঢুকলাম। সোমবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ইতিমধ্যেই ৪৫০ টাকা রোজগার করেছি। এক দিনে এত টাকা উপার্জন কমই হয়।’’

তবে এই মোটবাহকেরা জানেন, অগ্নিকাণ্ডে বাগড়ি মার্কেটের বহু ব্যবসায়ী সর্বস্বান্ত হয়েছেন। অনেকে কাজ হারিয়েছেন। তাই কোনও দরদামের মধ্যে যাচ্ছেন না তাঁরা। দোকানের মালিক যা দিচ্ছেন, তা-ই নিচ্ছেন। গৌরশঙ্কর যাদব নামে এক মোটবাহক জানালেন, ওষুধ, প্লাস্টিকের সামগ্রী, খেলনার দোকান— সব ধরনের দোকান থেকেই মাল বওয়ার কাজ পেতেন তাঁরা। ওই শ্রমিকের কথায়, ‘‘যে দোকানগুলো পুরো পুড়ে গিয়েছে, তা থেকে আমরা তো আর কাজ পাব না। সে কথা ভেবে খারাপও লাগছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Porters Fire Bagri Fire Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE