Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

ভেঙে পড়তে পারে বাগড়ির দেওয়াল

তিন দিন পরেও বাগড়ি মার্কেটের ‘এ’ ব্লক এবং ‘বি’ ব্লকের কয়েকটি জায়গায় আগুন জ্বলছে। বিভিন্ন অংশ থেকে বেরোচ্ছে কালো ধোঁয়া। দমকল কর্মীরাই জানাচ্ছেন, ভবনের ওই দুই ব্লকের তিন, চার, পাঁচতলা এখন এতটাই বিপজ্জনক যে দেওয়াল বা ফলস সিলিংয়ের কোনও অংশ ভেঙে পড়ারও সম্ভাবনা আছে।

মাথায় হাত: চোখের সামনেই পুড়ে খাক দোকান। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলেন হতাশ ব্যবসায়ী। —ফাইল চিত্র।

মাথায় হাত: চোখের সামনেই পুড়ে খাক দোকান। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলেন হতাশ ব্যবসায়ী। —ফাইল চিত্র।

আর্যভট্ট খান এবং শিবাজী দে সরকার
শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:৩৮
Share: Save:

তিন দিন পরেও বাগড়ি মার্কেটের ‘এ’ ব্লক এবং ‘বি’ ব্লকের কয়েকটি জায়গায় আগুন জ্বলছে। বিভিন্ন অংশ থেকে বেরোচ্ছে কালো ধোঁয়া। দমকল কর্মীরাই জানাচ্ছেন, ভবনের ওই দুই ব্লকের তিন, চার, পাঁচতলা এখন এতটাই বিপজ্জনক যে দেওয়াল বা ফলস সিলিংয়ের কোনও অংশ ভেঙে পড়ারও সম্ভাবনা আছে। ক্যানিং স্ট্রিটের দিকে এবং আমড়াতলা গলি লাগোয়া বাগড়ির দেওয়ালের কোনও কোনও জায়গায় দেখা গিয়েছে ফাটলও।

মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাস্থলে আসেন দমকলের ডিজি জগমোহন। তিনি ভিতরে ঢুকে পুরো বাড়ি পর্যবেক্ষণ করেন। পরে বলেন, ‘‘বাড়ির তাপমাত্রা কয়েকটি জায়গায় বেশি। কিছু কিছু জায়গায় আগুনের পকেট থাকায় দমকল কর্মীরা এখনও ঢুকতে পারেনি।’’ আগুন নেভাতে প্রথমেই কেন হাইড্রলিক ল্যাডার ব্যবহার করা হল না? ডিজি বলেন, ‘‘তা হলে দমকলের কাজ শুরু করতে আরও ৪৫ মিনিট দেরি হয়ে যেত।’’

সোমবার ফরেন্সিক অধিকর্তা ওয়াসিম রাজা এলেও মার্কেটের ভিতরে ঢুকে নমুনা সংগ্রহ করতে পারেননি। বাইরে থেকে ‘থার্মাল ইমেজিং ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল, বাড়ির তাপমাত্রা ১৭৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ দিন কোনও পরীক্ষা হয়নি। তবে ভিতরে ঢোকা দমকল কর্মীরা জানিয়েছেন, ‘এ’ ব্লকে দেওয়ালগুলো এতটাই গরম যে হাত দেওয়া যাচ্ছে না। কয়েকটি জায়গায় খসে পড়ছে চাঙড়, এমনকি সিঁড়ির একটি অংশও। মার্কেটের সামনের রাস্তায় সকলকেই হেলমেট পরে হাঁটতে বলেছে পুলিশ। যদিও উল্টোদিকে মেহতা বিল্ডিংয়ে কিছু কিছু দোকান এ দিন থেকেই খোলা হয়েছে।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড মেটিরিয়াল বিভাগের অধ্যাপক সোমনাথ ঘোষ বলেন, ‘‘তাপমাত্রা ২০০ ডিগ্রির বেশি থাকলে কংক্রিট তার ধারণক্ষমতা হারাতে থাকে। বাগড়ির যে যে অংশে আগুন রয়েছে, সেই আগুনের সংস্পর্শে থাকা কংক্রিটের তাপমাত্রা ২০০ ডিগ্রির থেকে অনেক বেশি। ফলে সেই জায়গার কংক্রিট ধারণক্ষমতা হারিয়েছে। আবার তাপমাত্রা বেশি হলে ঢালাইয়ের কংক্রিটের সঙ্গে থাকা লোহা বা স্ট্রিলের সম্প্রসারণ হয়। সব মিলিয়ে কংকিটের স্ল্যাব দুর্বল হয়ে প্রথমে বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা যায়। চাঙড় খসে পড়ে। এর পর পুরো অংশই ভেঙে পড়তে পারে।’’ সোমনাথবাবুর মতে, ‘‘বাগড়ির যে যে অংশে কংক্রিটের চাঙড় খসে পড়ছে, সেই অংশগুলো মেরামতি করার যোগ্য কি না, তা দেখতে হবে। মেরামতযোগ্য হলে দ্রুত তা করে নিতে হবে। না হলে কিন্তু পরে পুরোটাই মাঝেরহাট সেতুর মতো হুড়মুড় করে ভেঙে পড়তে পারে।’’

কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত নগরপাল (৪) কে জয়রামনের নেতৃত্বে দমকল এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী মঙ্গলবার সকাল ১০টা নাগাদ ‘এ’ ব্লকেরই দোতলার গ্রিল কেটে ভেতরে ঢোকেন। তবে সিঁড়িতে বড় বড় চাঙড় পড়ে থাকায় ওপরে উঠতে অসুবিধা হয় দমকল কর্মীদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE