Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পুজোর মুখেই কাজ হারিয়ে অকূল পাথারে

ওঁরা কেউ দোকানের মালিক নন। সকলেই বাগড়ি মার্কেটের বিভিন্ন দোকানের কর্মচারী। কেউ মাস গেলে ছ’হাজার কেউ বা সাত হাজার, বড়জোর দশ হাজার টাকা বেতন পান। দোকান পুড়ে গিয়েছে মানে ওঁরা বুঝে গিয়েছেন যে, আপাতত কর্মহীন হয়ে পড়লেন

পোড়া বাজারের সামনে উদ্বিগ্ন কর্মচারীরা। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

পোড়া বাজারের সামনে উদ্বিগ্ন কর্মচারীরা। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

আর্যভট্ট খান
শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:২১
Share: Save:

রবিবার শেষ রাতে আগুন লাগার খবর পেয়ে ছুটে এসেছিলেন ওঁরা। তার পর থেকে ওখানেই ছিলেন। রবিবার অনেক চেষ্টা করেও ঢুকতে পারেননি মার্কেটের ভিতরে। সোমবার সকালে ফের চলে আসেন বাগড়ি মার্কেটের সামনে। সকালের দিকে কোনও রকমে এ-ব্লকের কালো ধোঁয়া ঠেলে পোড়া দোকানের সামনে পৌঁছে কান্নায় গলা বুজে এসেছিল। আশঙ্কা ঘিরে ধরেছিল, এর পরে কী ভাবে সংসার চলবে?

ওঁরা কেউ দোকানের মালিক নন। সকলেই বাগড়ি মার্কেটের বিভিন্ন দোকানের কর্মচারী। কেউ মাস গেলে ছ’হাজার কেউ বা সাত হাজার, বড়জোর দশ হাজার টাকা বেতন পান। দোকান পুড়ে গিয়েছে মানে ওঁরা বুঝে গিয়েছেন যে, আপাতত কর্মহীন হয়ে পড়লেন। পুজোর মুখে এমন অতর্কিত বিপদের পরে কী ভাবে সংসার চলবে ভেবে থই পাচ্ছেন না কেউই।

ওই কর্মচারীরাই জানালেন, বাগড়ি মার্কেটে দেড় থেকে দু’হাজারের মতো দোকান, গুদাম, অফিসঘর রয়েছে। এক-একটা দোকানে গড়ে তিন থেকে চার জন করে কর্মচারী কাজ করেন। মার্কেটের উল্টো দিকের গলিতে দাঁড়িয়ে থাকা সঞ্জয় মণ্ডল, বিশ্বজিৎ রায়, সমর দে, ভিকি পাণ্ডেরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন কী ভাবে তাঁদের বাজার এখনও জ্বলছে। তাঁরা জানান, সব মিলিয়ে বাগড়ি মার্কেটের বিভিন্ন দোকানে রয়েছেন ৬ হাজারের মতো কর্মচারী। সঞ্জয় মণ্ডল নামে এক কর্মচারী বলেন, ‘‘এই মার্কেটে সবথেকে বেশি রয়েছে ওষুধের দোকান। সেখানে অনেকে কাজ করেন। ওইসব ওষুধের দোকানগুলিই সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুজোর মুখে সকলেই এখন কাজহারা।’’

একটি দোকানের কর্মী বিশ্বজিৎ রায় বললেন, ‘‘মাসে আট-ন’হাজার টাকার মতো বেতন পেতাম। এই টাকাতেই কোনও রকমে টেনেটুনে সংসার চলত। তবুও তো চলছিল। এ বার কী হবে?’’ বিশ্বজিৎ বাগড়ি মার্কেটের এ ব্লকের তিনতলার একটি ওষুধের দোকানে কাজ করতেন। সোমবার দেখেন, সেই দোকান ছাই হয়ে গিয়েছে। তিনি জানান, পোড়া দোকান থেকেই কিছু জিনিস বার করে এনেছেন তাঁরা। পাশের একটি গুদামে সেগুলি রেখেও দিয়েছেন। দোকানের মালিক জানিয়েছেন, পরিস্থিতি খানিকটা স্বাভাবিক হলে দেখা করতে। ভিকি পাণ্ডে নামে এক কর্মচারী বলেন, ‘‘১৫ বছর ধরে কাজ করছি। ওষুধের দোকানের কাজটাই আমি জানি। এই কাজ এখন হঠাৎ করে কে দেবে?’’ ওই কর্মীরা জানান, তাঁরা পুজোয় মাইনের সমপরিমাণ টাকা বোনাস পেতেন। এ বার তা-ও মিলবে না।

শুধু বাগড়ি মার্কেটের বিভিন্ন দোকানের কর্মচারীরাই নন, অনিশ্চয়তায় ভুগছেন ওই বাজারের ঠিক উল্টো দিকে মেহতা বিল্ডিংয়ের দোকানের কর্মচারীরাও। সেখানেও ১৫০০-র মতো দোকানে হাজার ছয়েক কর্মচারী রয়েছেন। তাঁদেরই কয়েক জনকে দেখা গেল গলির মুখে বন্ধ দোকানের চাতালে বসে থাকতে। একটি প্লাস্টিকের দোকানের কর্মচারী কানহাইয়া সিংহ জানান, বাগড়ি মার্কেটে আগুন লাগার পরে তাঁদের দোকানও নিরাপত্তার কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দু’দিন ধরে দোকানে আলো নেই। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে কেউ জানেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE