Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

গ্রামের হাত ধরল শহরের কলেজ

বুধবার, স্বাধীনতা দিবসে ভৈরব গাঙ্গুলি কলেজ দত্তক নিল বাঁকুড়ার রানিবাঁধ ব্লকের জুভি গ্রামকে। লেখাপড়া শিখে কী ভাবে সেখানকার মানুষ নিজেদের জীবনধারা উন্নত করতে পারেন, সেই দিশা দেখানোই মূল উদ্দেশ্য এই উদ্যোগের।  

সহায়তা: কলেজের উদ্যোগের সূচনা হল স্বাধীনতা দিবসে। জুভি গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

সহায়তা: কলেজের উদ্যোগের সূচনা হল স্বাধীনতা দিবসে। জুভি গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

মধুমিতা দত্ত
শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৮ ০৩:৩৬
Share: Save:

শহর পৌঁছচ্ছে গ্রামের কাছে।

বুধবার, স্বাধীনতা দিবসে ভৈরব গাঙ্গুলি কলেজ দত্তক নিল বাঁকুড়ার রানিবাঁধ ব্লকের জুভি গ্রামকে। লেখাপড়া শিখে কী ভাবে সেখানকার মানুষ নিজেদের জীবনধারা উন্নত করতে পারেন, সেই দিশা দেখানোই মূল উদ্দেশ্য এই উদ্যোগের।

এই ভাবনার সূত্রপাত গত বছর। কলেজের সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষ কী ভাবে উদ্‌যাপন করা যায়, তা নিয়ে ভাবনা–চিন্তা করছিলেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। বেলঘরিয়ার ভৈরব গাঙ্গুলি কলেজের প্রাক্তন ছাত্র অসীম কিস্কুর বাড়ি জুভি গ্রামে। কলেজের পরিকল্পনা জানতে পেরে নিজের গ্রামের উন্নতিতে উদ্যোগী হওয়ার প্রস্তাব দেন অসীম। প্রাক্তন ছাত্রকে নিরাশ করেননি কলেজ কর্তৃপক্ষও। কলেজের উপাধ্যক্ষ সঞ্জিত দাস বৃহস্পতিবার জানালেন, আদিবাসী ও শবর অধ্যুষিত ওই অঞ্চলের মানুষ-জনের আর্থিক স্বনির্ভরতার পাশাপাশি শিক্ষা, সামাজিক কল্যাণ ও সুরক্ষার দায়িত্ব নিচ্ছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।

এই কাজের আনুষ্ঠানিক সূচনার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল ১৫ অগস্ট দিনটিই। স্বাধীনতা দিবসে অসীমের গ্রামে গিয়ে পৌঁছন কলেজের উপাধ্যক্ষ, পরিচালন সমিতির সদস্য সমরেন্দ্র বারিক, বেশ কয়েক জন অধ্যাপক, পড়ুয়া ও শিক্ষাকর্মী। তাঁদের স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় খাতরা মহকুমার সার্কল ইনস্পেক্টর।

শাল জঙ্গলে ঘেরা জুভি গ্রামের বাসিন্দারা মূলত শালপাতার থালা-বাটি তৈরির কাজ করেন। কলেজের উদ্যোগে প্রথম দফায় তাই সেখানকার ২৭টি পরিবারের হাতে ন’টি শালপাতা তৈরির মেশিন ও দু’টি ডাইস মেশিন তুলে দেওয়া হয়েছে। এই উদ্যোগের ফলে মেশিনের মাধ্যমে শালপাতার থালা তৈরি করলে তাঁদের দৈনিক উপার্জন আগের থেকে অনেক বেশি হবে বলে জানালেন অসীম। এর পাশাপাশি, ধামসা-মাদল কেনার জন্য এ দিনই কলেজের পক্ষ থেকে আর্থিক সাহায্য করা হয় বেশ কয়েক জনকে। দেওয়া হয় ফুটবলও। এ দিন রানিবাঁধ হাইস্কুলে বিজ্ঞান প্রদর্শনীরও আয়োজন হয়েছিল। থ্রি ডি-তে ডায়নোসরের জীবনযাত্রা দেখে উত্তেজিত পড়ুয়ারাও।

অসীমের বাবা অমর কিস্কু খেতমজুর। সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন তিনি। মা বাসকি অক্ষরজ্ঞানহীন। অসীমের দাদা মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসলেও উত্তীর্ণ হতে পারেননি। পড়াশোনার সেখানেই ইতি। সেই পরিবারেরই আর এক ছেলে অসীম ভৈরব গাঙ্গুলি কলেজ থেকে ভূগোলে অনার্স নিয়ে বিএসসি পাশ করার পরে এমএসসি করেছেন পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। অধ্যাপক হতে চাওয়া অসীম ইতিমধ্যে নেট-ও উত্তীর্ণ হয়েছেন। তিনি জানালেন, তাঁর গ্রামে তিনিই প্রথম কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে পড়ে এমএসসি পাশ করেছেন। এ ছাড়া, আর দু’-তিন জন দূরশিক্ষার মাধ্যমে এমএ পাশ করেছেন। অসীম বলেন, ‘‘লেখাপড়া যে করতে হবে, এই তাগাদা দেওয়ার মতো চেতনাই বেশির ভাগ অভিভাবকের নেই। ফলে ছেলেমেয়েরা এক বার ফেল করে গেলে পড়াশোনা সেখানেই বন্ধ হয়ে যায়।’’ উপাধ্যক্ষ জানালেন, পড়ুয়াদের লেখাপড়ায় আগ্রহ যাতে বাড়ে, সে বিষয়ে তাঁরা কর্মসূচি নেবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE