স্কুলছুট কমাতে ইতিমধ্যে নানা সরকারি প্রকল্প রয়েছে। এ বার সরকারের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে ‘শিক্ষকছুট’।
অভিযোগ, তাঁরা প্রতি মাসের নির্দিষ্ট দিনে বেতন নেন। কিন্তু ক্লাসে তাঁদের উপস্থিতি নৈব নৈব চ! এ বার তাঁদের স্কুলে ধরে রাখতে উদ্যোগী হয়েছেন বিভিন্ন জেলা স্কুল পরিদর্শক (ডি আই)। তালিকার উপরে রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা। স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, শুধু ওই জেলাতেই প্রায় ৫০ শতাংশ শিক্ষকের হাজিরাই অনিয়মিত। এই চিত্র গোটা রাজ্যেও। তাই বিভিন্ন জেলা থেকে রাজ্য সরকারকে শিক্ষক হাজিরায় বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালুর প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি বাঁকুড়ার জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস শিক্ষকদের হাজিরায় কড়াকড়ি করতে দিনে অন্তত দু’বার প্রধান শিক্ষকদের এসএমএস করে তথ্য জানাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তা নিয়ে গোঁসাও হয়েছিল শিক্ষকদের একাংশের। কিন্তু সম্প্রতি দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় ডি আই-এর তৈরি পরিদর্শন কমিটিতে যে তথ্য উঠে এসেছে তা দেখে তাক লেগে গিয়েছে শিক্ষামহলের।
ওই জেলার ডিআই নজরুল হক সিপাই বলেন, ‘‘এই জেলায় প্রায় ছ’হাজার স্কুল রয়েছে। প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক
স্তরে প্রায় কুড়ি হাজার শিক্ষকের মধ্যে ৫০ শতাংশই অনিয়মিত।’’ কেউ স্কুলে আসেন না, অনেকে আবার এসেও তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যান। মনঃসংযোগ করেন গৃহশিক্ষকতায়। যেখানে বাংলা মাধ্যমের সরকারি ও সরকার পোষিত স্কুলগুলির সঙ্গে বেসরকারি স্কুলের প্রতিযোগিতা শুরু
হয়েছে সেখানে এ ভাবে ক্লাসে অবহেলা গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাকে নড়বড়ে করে দিচ্ছে বলেই মত শিক্ষামহলের।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে স্কুলে না এসেও কী ভাবে হাজিরা খাতায় নাম উঠছে শিক্ষকদের? দফতরের কর্তাদের মত, এ ক্ষেত্রে স্কুলগুলির সঙ্গেও
বোঝাপড়া রয়েছে ওই সব শিক্ষকদের। পাশাপাশি স্কুল পরিদর্শনেও ঘাটতি থাকে। উত্তরবঙ্গের এক জেলা স্কুল পরিদর্শক বলেন, ‘‘কতজন শিক্ষক স্কুলে নিয়মিত আসেন না, তার কোনও তালিকা নেই। কিন্তু অসমর্থিত সূত্রে জানতে পারি, বহু
শিক্ষকই এই তালিকায় রয়েছেন। তাঁদের আটকানোর জন্য বায়োমেট্রিক পদ্ধতি ছাড়া উপায় নেই।’’ অন্য এক ডি আই-এর বক্তব্য, ‘‘শিক্ষকদের যথেষ্ট সম্মান দেওয়া হয়। কিন্তু যে ভাবে শিক্ষকদের একাংশ এ সব গাফিলতি করেন তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।’’ নজরুল হক সিপাই জানান, ওই শিক্ষকদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা
নেওয়া হবে।
‘ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রাইভেট টিউটর্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর তরফে দাবি করা হয়েছিল স্কুলের সময়ে গৃহশিক্ষকতা করতে
বাড়ি চলে যান স্কুল শিক্ষকদের একাংশ। সম্প্রতি ডি আইদের তদন্তও সেই দাবির সত্যতা প্রমাণ করছে। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বারবার আবেদন করেন যে, পড়ুয়াদের পাশাপাশি শিক্ষকদের হাজিরা নিশ্চিত করতে হবে। কলেজে পর্যাপ্ত হাজিরা না থাকলে পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হয় না পড়ুয়াদের। তা হলে
বেতন নেওয়ার পরেও যাঁরা নিয়মিত ক্লাস করেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করা হবে না সেই প্রশ্নই এ বার তুলেছেন বহু শিক্ষক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy