Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

চাহিদার অভাবে ভুগছে ব্লাড ব্যাঙ্ক

এত দিন রক্তের প্রয়োজনে ভরসা ছিল কলকাতা। সল্টলেক-সহ পূর্ব কলকাতার মানুষের তাই দীর্ঘদিন ধরে চাহিদা ছিল একটি ব্লাড ব্যাঙ্কের। সেই মতো বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে তৈরিও হয় একটি ব্লাড ব্যাঙ্ক। অথচ ছ’মাস পার করেও সেখান থেকে রক্ত নিতে মানুষের চাহিদাই নজরে আসছে না বলে অভিযোগ উঠছে।

—প্রতীকী ছবি

—প্রতীকী ছবি

কাজল গুপ্ত
শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:৫৭
Share: Save:

রক্তের খোঁজে মানুষ হন্যে হয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন, এমন দৃশ্য দেখতেই সকলে অভ্যস্ত। অথচ রক্ত পড়ে রয়েছে কিন্তু গ্রহীতা নেই, এমন দৃশ্যটা বেমানান বইকি। দূরে নয়, বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে গেলেই দেখা যাবে এমনই দৃশ্য।

এত দিন রক্তের প্রয়োজনে ভরসা ছিল কলকাতা। সল্টলেক-সহ পূর্ব কলকাতার মানুষের তাই দীর্ঘদিন ধরে চাহিদা ছিল একটি ব্লাড ব্যাঙ্কের। সেই মতো বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে তৈরিও হয় একটি ব্লাড ব্যাঙ্ক। অথচ ছ’মাস পার করেও সেখান থেকে রক্ত নিতে মানুষের চাহিদাই নজরে আসছে না বলে অভিযোগ উঠছে।

বিধাননগর হাসপাতাল সূত্রের খবর, ব্লাড ব্যাঙ্কের তরফে রক্ত সংগ্রহের জন্য একাধিক শিবির করা হয়েছে। গত সপ্তাহের শুক্রবার ১৮০ ইউনিট রক্ত ছিল ওই ব্লাড ব্যাঙ্কে। অথচ রক্ত নেওয়ার কোনও আবেদনই জমা পড়েনি। ওই রক্ত ব্যবহারের সময়সীমা ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছিল। তাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দ্রুত স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। স্বাস্থ্য দফতর তখন খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, কলকাতার একটি হাসপাতালে রক্তের প্রয়োজন রয়েছে। পরের দিন বিধাননগর হাসপাতাল থেকে প্রায় ১৫০ ইউনিট রক্ত দিয়ে দেওয়া হয় কলকাতার ওই হাসপাতালকে।

প্রশ্ন উঠছে, তবে কি প্রচারের অভাবেই এই পরিস্থিতি? সে কারণেই মানুষ এই ব্লাড ব্যাঙ্ক সম্পর্কে খবর পাচ্ছেন না? স্থানীয় মানুষের দাবি, বিধাননগর মহকুমা হাসপাতাল থেকে যে রক্ত পাওয়া যায়, তা-ই তাঁদের জানা নেই। আর প্রশাসনের একাংশের কথায়, কোনও সরকারি হাসপাতাল এ নিয়ে প্রচার করতে পারে না।

হাসপাতাল সূত্রের খবর, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে অগস্ট পর্যন্ত ২৫টি শিবির করা হয়েছে, সেখান থেকে ১১৫৮ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ছাড়াও নিজস্ব এবং অন্যান্য সংগ্রহ মিলিয়ে মোট রক্ত সংগ্রহ হয়েছে ১২৩১ ইউনিট। কিন্তু এখনও পর্যন্ত রক্ত নেওয়ার আবেদন হয়েছে মাত্র ৩৪২টি। মাসে গড়ে রক্ত সরবরাহ করা হয়েছে ৫৫ ইউনিট। বাকি ৮০০-র বেশি ইউনিট রক্ত দেওয়া হয়েছে পুরুলিয়া, কাকদ্বীপ এবং কলকাতার দু’টি সরকারি হাসপাতালকে।

তবে সূত্রের খবর, আরও একটি কারণে ওই ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে রক্তসংগ্রহে আগ্রহ প্রকাশ করছেন না অনেকে। তা হল ওখানে রক্তের উপাদান বিভাজন করার পরিকাঠামোই তৈরি করা হয়নি। অথচ বিধাননগর-সহ কয়েকটি পুর এলাকায় মশাবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব যথেষ্ট। সেখানে প্লেটলেটের প্রয়োজন হলেও বিধাননগর মহকুমা হাসপাতাল তা সরবরাহ করতে পারছে না। ওখান থেকে রক্ত না নেওয়ার এটা একটা কারণ বলে জানা যাচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, আগে বিধাননগরে ব্লাড ব্যাঙ্ক ছিল না। এখন সেটা হয়েছে। মুখে মুখে প্রচার হলে মানুষ জানতে পারবেন। তবে রক্তের উপাদান বিভাজনের পরিকাঠামো তৈরি করা যথেষ্ট খরচসাপেক্ষ। সেই বিষয়টি বর্তমানে আলোচনার স্তরে রয়েছে।

তবে স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা জানান, এখনই সমস্ত ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের উপাদান বিভাজনের পরিকাঠামো তৈরি করা সম্ভব নয়। তবে পরিষেবায় যাতে কোনও সমস্যা না হয়, তার জন্য যে সব জায়গায় এই ধরনের পরিকাঠামো রয়েছে, তার সঙ্গে এই পরিকাঠামোহীন ব্লাড ব্যাঙ্কগুলোর একটা সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করা হচ্ছে।

বিধায়ক সুজিত বসুর মতে, এত দিন তো কিছুই ছিল না। মানুষের দাবি মেনে ব্লাড ব্যাঙ্ক তৈরি করা হয়েছে, প্রচারের জন্য বিভিন্ন শিবিরও করা হচ্ছে। রক্তের উপাদান বিভাজনের পরিকাঠামোও ভবিষ্যতে তৈরি করা হবে। তবে এ জন্য কিছুটা সময় লাগবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Blood Bank Demand
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE