Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ফেলে রেখে রক্ত নষ্টের অভিযোগ মানিকতলায়

ট্রিপল ব্যাগ অর্থাৎ, যেই ব্যাগে সংগৃহীত এক ইউনিট রক্ত থেকে তিন ধরনের উপাদান পৃথক করা যেতে পারে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৪৬
Share: Save:

সামনে পরীক্ষার মরসুম। গরমও বেড়ে যাবে। প্রতি বারই এই সময়ে রক্তদান শিবিরের সংখ্যা কমে যায়। রক্তের আকাল শুরু হয়। ফলে রক্ত আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতেরা জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে বেশি করে রক্তদান শিবিরের উপরে জোর দেন। অথচ এই গুরুত্বপূর্ণ সময়েই একটি শিবির থেকে ট্রিপল ব্যাগে সংগৃহীত ৩০ ইউনিট রক্ত ব্যবহার না করে ফেলে রেখে নষ্ট করার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে মানিকতলার কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে। পয়লা জানুয়ারি অশোকনগরের কল্যাণগড়ের একটি শিবির থেকে ওই রক্ত সংগ্রহ করা হয়। শিবিরের আয়োজক ছিল অশোকনগর ৭ নম্বর ওয়ার্ড তৃণমূল কংগ্রেস। ব্লাড ব্যাঙ্কের খাতায় শিবিরের নম্বর ছিল— ‘আই-বি-আই-১৮-৩।’ গত ৫ ফেব্রুয়ারি, মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ার কারণে সেই রক্তগুলি ফেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।

ট্রিপল ব্যাগ অর্থাৎ, যেই ব্যাগে সংগৃহীত এক ইউনিট রক্ত থেকে তিন ধরনের উপাদান পৃথক করা যেতে পারে। প্লেটলেট বা অণুচক্রিকা, প্লাজমা এবং কনসেনট্রেটেড আরবিসি বা গাঢ় লোহিত রক্ত কণিকা। আরও ব্যাখ্যা করলে, এই ধরনের একটি ব্যাগ থেকে তিন জন গুরুতর অসুস্থ মানুষ তিন ধরনের রক্তের উপাদান পেতে পারতেন। অর্থাৎ, ওই ৩০ ইউনিট রক্ত থেকে ৯০ জন অসুস্থকে রক্তের উপাদান দেওয়া যেত। তা না হলেও অন্তত ৩০ জনকে হোল ব্লাডটুকু দেওয়া যেত। তাও দেওয়া হয়নি।

ব্লাড ব্যাঙ্ক সূত্রের খবর, এমন নয় যে, নিতান্ত নিরুপায় হয়ে ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ ওই রক্ত ব্যবহার করতে পারেননি। বরং সেগুলি ব্যবহারে কোনও সমস্যাই ছিল না। কিন্তু টেকনিশিয়ানদের একাংশ রক্তের উপাদান পৃথকীকরণের খাটনি খাটতে নারাজ। তাঁদের ব্লাড ব্যাঙ্কেরই কিছু কর্তা ইন্ধন জোগাচ্ছেন বলে অভিযোগ। তার জেরেই রক্ত ব্যবহার না করেই তা ফেলে রেখে মেয়াদ পার করা হয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরে তাঁরাই এখন উঠেপড়ে লেগেছেন বিষয়টি ধামাচাপা দিতে। কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্কের অধিকর্তা কুমারেশ হালদার এ ব্যাপারে বলেন, ‘‘ঘটনার কারণ জানলেও আপনাকে তা বলব না। যা পারেন লিখুন।’’ সেখানকার রক্ত পৃথকীকরণ ইউনিটের ইনচার্জ ধ্রুব মণ্ডল টেলিফোনে বিষয়টি শোনার পরেই ফোন নামিয়ে দেন।

এই ঘটনায় কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্কের টেকনিশিয়ান ও কর্মচারীদের একটি অংশ ক্ষুব্ধ। তাঁরা বিষয়টি স্বাস্থ্য ভবনে জানিয়েছেন। যদিও বিষয়টির দায়িত্বে থাকা সুরেন্দ্র গুপ্ত এ ব্যাপারে মুখ খুলতে চাননি। ব্লাড ব্যাঙ্কের ওই ক্ষুব্ধ অংশের দাবি, একটি গোষ্ঠীর উপাদান পৃথকীকরণে প্রবল অনীহা। তাই তাঁরা বেশির ভাগ শিবিরে রক্ত সংগ্রহের জন্য ডবল ব্যাগ বা ট্রিপল ব্যাগ পাঠাতে চান না। শুধু সিঙ্গল ব্যাগ-এ হোলব্লাড সংগ্রহ করে আনেন। তাই পূর্বাঞ্চলের মডেল ব্লাড ব্যাঙ্ক হিসেবে পরিচিত মানিকতলা ব্লাড ব্যাঙ্কে সংগৃহীত রক্তের মাত্র ৬০-৬৫ শতাংশ থেকে উপাদান বার করা যায়।

তাঁরা আরও জানান, পয়লা জানুয়ারির রক্তদান শিবিরেও ট্রিপল ব্যাগ নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল না। কিন্তু যাঁরা শিবিরে গিয়েছিলেন, তাঁরা ২০টি সিঙ্গল ব্যাগের সঙ্গে ‘ভুলবশত’ ৩০টি ট্রিপল ব্যাগ নিয়ে গিয়েছিলেন। তাতেই কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্কের রক্ত পৃথকীকরণ ইউনিটের দায়িত্বে থাকা কিছু অফিসার ও টেকনিশিয়ান রেগে যান। এক কর্মীর কথায়, ‘‘উঁচু পদে থাকা এক টেকনিশিয়ান জানিয়ে দেন, ভুল যখন হয়েছে, তখন ওই ৩০টি ব্যাগে সংগৃহীত রক্ত থেকে উপাদান পৃথক করতে পারবেন না। তখন আমরা অনুরোধ করি, অন্তত হোল ব্লাড হিসেবে যেন রক্তগুলি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু ওঁরা জেদ ধরে থেকে সেটাও করেননি।’’ রক্ত আন্দোলন কর্মী দীপঙ্কর মিত্রের কথায়, ‘‘এটি ভয়ানক প্রবণতা। এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Manicktala Central Blood Bank Blood Wasted
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE