Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Murder

ঘর থেকে উদ্ধার বাবা-মেয়ের ক্ষতবিক্ষত দেহ

পুলিশ সূত্রের খবর, বাসুদেববাবু ও সুনীতার দেহ আলাদা ঘর থেকে উদ্ধার হয়েছে। বাসুদেববাবুর দেহে গভীর আঘাতের একাধিক চিহ্ন রয়েছে। এমনকি, তাঁর যৌনাঙ্গও কাটা।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২০ ০৩:১২
Share: Save:

বাড়ির ভিতর থেকে উদ্ধার করা হল বাবা ও মেয়ের ক্ষতবিক্ষত দেহ। শনিবার সকালে সোনারপুর থানার সুকান্ত সরণি এলাকার একটি বাড়ি থেকে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম বাসুদেব গঙ্গোপাধ্যায় (৭২) এবং সুনীতা পণ্ডিত (৪০)। দেহ দু’টি ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ সূত্রের খবর, বাসুদেববাবু ও সুনীতার দেহ আলাদা ঘর থেকে উদ্ধার হয়েছে। বাসুদেববাবুর দেহে গভীর আঘাতের একাধিক চিহ্ন রয়েছে। এমনকি, তাঁর যৌনাঙ্গও কাটা। প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, কুড়ুল দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে তাঁকে। বিয়ারের বোতলের ভাঙা অংশ সুনীতার গলায় গেঁথে খুন করা হয়েছে। সুনীতার দেহে একাধিক কালশিটে দাগ রয়েছে। যা দেখে তদন্তকারীদের অনুমান, তাঁকে প্রথমে পিটিয়ে মেরে পরে বিয়ারের বোতলের ভাঙা অংশ দিয়ে গলার নলি বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

বারুইপুর পুলিশ জেলার কর্তারা এই মৃত্যুর ঘটনায় মূল অভিযুক্ত হিসেবে সন্দেহ করছেন সুনীতার স্বামী রমেশ পণ্ডিতকে। ঘটনার পর থেকে তিনি ফেরার বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন সকালে প্রতিবেশী এক মহিলা ফুল তুলতে বেরিয়ে ওই বাড়ির দরজা খোলা দেখে উঁকি মারেন। তখনই দেখেন, ঘরে পড়ে রয়েছে সুনীতার দেহ। চারদিক রক্তে ভেসে যাচ্ছে। এর পরেই সোনারপুর থানায় খবর দেওয়া হয়। পুলিশ গিয়ে দেহ দু’টি উদ্ধার করে। পরে সেখানে পৌঁছন পুলিশকর্তারা।

তদন্তে জানা গিয়েছে, বাসুদেববাবুর পালিতা কন্যা সুনীতা। বছর ছয়েক আগে রমেশের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। রমেশ পেশায় দর্জি। বিয়ের পর থেকে তাঁর মা অঞ্জলিকে নিয়ে সুনীতাদের বাড়িতেই ঘরজামাই হিসেবে থাকতেন রমেশ। তাঁদের চার বছরের একটি মেয়েও রয়েছে। ওই বাড়ির একাধিক ঘরেই বাসুদেব, সুনীতা, রমেশ ও রমেশের মা অঞ্জলি আলাদা আলাদা থাকতেন।

স্থানীয় সূত্রের খবর, বিয়ের বছর দুয়েক পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অশান্তি হত। সুনীতাকে মারধর করতেন রমেশ। মেয়েকে মারধরের প্রতিবাদ করতেন বাসুদেববাবু। কিন্তু কী কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অশান্তি হত তা জানতে অঞ্জলিকে আটক করে জেরা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।

বারুইপুর পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসু বলেন, “বাড়ির শৌচাগার থেকে রমেশের রক্তমাখা জামা প্যান্ট উদ্ধার হয়েছে। এ দিকে ফেরার রমেশ। অনুমান, দু’জনকে খুন করার পরে তাঁর জামা-প্যান্টে রক্তের দাগ লেগে গিয়েছিল। সেই কারণে শৌচাগারে তা বদলে পালিয়েছেন তিনি। তবে এই ঘটনায় রমেশ ছাড়া আর কেউ জড়িত রয়েছেন কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

ঘর থেকেই একটি কুড়ুল, কাঠের বাটাম ও ভাঙা বিয়ারের বোতলের টুকরো উদ্ধার হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তের পরে অনুমান, কাঠের বাটাম দিয়ে মেরে কুড়ুলের সাহায্যে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে। পুলিশের বক্তব্য, খুনের ধরণে আন্দাজ করা হচ্ছে ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে এই খুন।

জেরায় পুলিশকে অঞ্জলি জানিয়েছেন, রাতে তিনি নাতনিকে নিয়ে আলাদা ঘরে শুয়েছিলেন। শুক্রবার রাতেও ছেলে এবং বৌমার মধ্যে ঝগড়া হয়েছিল বলে তিনি জানান। ওই রাতে সুনীতা তাঁকে কাঠের বাটাম দিয়ে মারধর করেছিলেন বলে দাবি অঞ্জলির। কিন্তু কেন মারধর করা হয়েছিল তার স্পষ্ট উত্তর দেননি তিনি। তদন্তকারীরা দাবি করেছেন, অঞ্জলির কথায় অনেক অসঙ্গতি রয়েছে। তাই প্রকৃত ঘটনা জানতে তাঁকে আরও জেরা করা হবে। পাশাপাশি রমেশ ও সুনীতার দাম্পত্য কলহের কারণ জানতেও তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

রমেশের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Crime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE