Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

রেললাইনের ধার থেকে উদ্ধার দেহ নিয়ে রহস্য দানা বাঁধছে

সোমবার দিনদুপুরে বন্ডেল রোড লেভেল ক্রসিংয়ের কাছে শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার ডাউন লাইনের ধার থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল এক ব্যক্তির রক্তাক্ত দেহ। প্রাথমিক ভাবে মনে হয়েছিল, ট্রেনের ধাক্কাতেই এই মৃত্যু।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৬ ২০:৫১
Share: Save:

সোমবার দিনদুপুরে বন্ডেল রোড লেভেল ক্রসিংয়ের কাছে শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার ডাউন লাইনের ধার থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল এক ব্যক্তির রক্তাক্ত দেহ। প্রাথমিক ভাবে মনে হয়েছিল, ট্রেনের ধাক্কাতেই এই মৃত্যু। কিন্তু ময়নাতদন্তের পরেই দেখা গেল, শুধু ট্রেনের ধাক্কা নয়। মৃত্যুর অন্য কোনও কারও থাকতে পারে।

ময়নাতদন্তে চিকিৎসকেরা মৃত্যুর কারণ জানাতে না পারলেও, ওই ব্যক্তির দেহে এবং মাথায় একাধিক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছেন। তার মধ্যে মাথার একটি ক্ষত বুলেটের ফলে হয়েছে বলে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক রেল পুলিশের তদন্তকারীদের জানিয়েছেন। ময়নাতদন্তকারীদের মতে, মাথার ছিদ্রটি এমন যা একমাত্র গুলিবিদ্ধ হলেই সম্ভব। কিন্তু মস্তিষ্ক থেকে কোনও বুলেট উদ্ধার হয়নি। মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে বার বার নিজেদের মধ্যে কথা বলছেন তদন্তকারীরা। আলোচনায় ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকদেরও রাখা হচ্ছে। মৃতদেহ উদ্ধারের পাঁচ দিন পরেও তাই রহস্যের জট খোলা সম্ভব হয়নি। সব সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখেই তদন্ত চলছে বলে দাবি রেলপুলিশের কর্তাদের। জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকা বাসিন্দাদের।

রেল পুলিশ সূত্রের খবর, গত সোমবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ বালিগঞ্জ জিআরপি থানায় খবর আসে, বন্ডেল গেটের কাছে ডাউন লাইনের ধারে এক ব্যক্তির দেহ পড়ে রয়েছে। রেলের তরফে সেই খবর দেওয়া হয়েছিল পুলিশকে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। দেখা যায়, ডাউন লাইনের ধারে রেললাইনের এক ফুটের মধ্যে ডান দিকে কাত হয়ে পড়ে রয়েছে দেহটি। মাথা এবং দেহের ডান দিকে আঘাত রয়েছে। মৃতদেহের পকেট থেকে উদ্ধার হয় একটি মোবাইল ফোন। সেই সূত্রেই পুলিশ জানতে পারে, মৃত ব্যক্তির নাম দেবলাল মাহাতো (৫১)। পেশায় বেসরকারি গাড়ির চালক ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা দেবলাল বর্তমানে থাকতেন হেস্টিংস থানা এলাকার ক্যানাল রোডে ভাড়াবাড়িতে। তাঁর সঙ্গেই থাকতেন স্ত্রী এবং দুই ছেলে। দেবলালের ছেলে দিলীপ ওই ভাড়াবাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে বালিগঞ্জ জিআরপি থানায় খুনের মামলা দায়ের করেছেন।

আরও পড়ুন- বেহাল দশা কলকাতা পুরসভার বহু স্বাস্থ্য ক্লিনিকেরই

প্রাথমিক তদন্তে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, ঘটনার দিন, অর্থাৎ ৩০ মে সকালে সাড়ে ৯টা নাগাদ বাড়ির মালিকের সঙ্গে কোথাও যাচ্ছেন বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন দেবলাল। বেলা আড়াইটের কিছু পরে রেললাইন থেকে দেহটি উদ্ধারের সময় তার আশপাশে ছিলেন না সেই সঙ্গী। পুলিশ জানায়, বাড়িওয়ালার মোবাইল ফোনটি তখন থেকেই সুইচড অফ।

রেলপুলিশের তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, দেহের বাইরের আঘাত দেখে মনে করা হয়েছিল, ট্রেনের ধাক্কাতেই মৃত্যু হয়েছে দেবলালের। কিন্তু ওই সময় ডাউন লাইন দিয়ে চলাচলকারী ট্রেনের চালকেরা জানিয়ে দেন, তাঁদের গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লাগেনি কারও। ডাউন ডায়মন্ড হারবার লোকালের চালক বালিগঞ্জ স্টেশনকে জানিয়েছিলেন, তিনি একটি দেহ রেললাইনের ধারে পড়ে থাকতে দেখেছেন। এর পরেই ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট থেকে তদন্তকারীরা দেবলালের মাথায় ওই রহস্যজনক ছিদ্রের কথা জানতে পারেন। তাতেই উঠে আসছে খুনের তত্ত্ব।

রেলপুলিশ সূত্রের খবর, বাড়িওয়ালা তাঁদের ওই বাড়ি থেকে উঠে যাওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন বলে মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে বাড়িওয়ালা বেপাত্তা হয়ে যাওয়ায় পুলিশের সন্দেহ আরও জোরদার হয়েছে। এক তদন্তকারী অফিসার শুক্রবার বলেন, ‘‘দেবলালের দেহে যে আঘাত রয়েছে তা সাধারণত দ্রুত গতির ভারী কিছুতে আঘাত লাগলে তবেই হয়। মনে হচ্ছে মাথার ওই ছিদ্র দেখেই সন্দেহ তৈরি হয়েছে। ওই সন্দেহ দূর করার জন্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Body Recovered From Rail Line
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE