এই সেই বোমাবাজির এলাকা। সোমবার। — নিজস্ব চিত্র।
সামনে দাঁড়িয়ে পুলিশ। তাঁদের তোয়াক্কা না করেই চলছে বোমা-গুলি। হরিদেবপুরের পরে এমনই ছবি ফের ধরা পড়ল রবিবার রাতে গড়িয়াহাট থানা এলাকার বন্ডেল রোডে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ বন্ডেল রোডের ধারে দোকানপাট বন্ধ করছিলেন ব্যবসায়ীরা। হঠাৎই মোটরবাইকে একদল যুবক এসে আর এক দলের সঙ্গে বচসা শুরু করে। শুরু হয় গুলি, বোমাবাজি। আতঙ্ক ছড়ায় এলাকায়।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। পৌঁছন আশপাশের থানার আধিকারিক-সহ পুলিশের বড়কর্তারা। রাতেই কড়েয়া, কসবা ও তিলজলা এলাকা থেকে পাঁচ জন গ্রেফতার হয়। তবে মূল অভিযুক্ত-সহ এক জন পলাতক। ওই এলাকা থেকে ছ’টি ফাঁকা কার্তুজ ও চারটি তাজা বোমা উদ্ধার হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।
পুলিশ জানায়, তিলজলা, গড়িয়াহাট, কসবা, কড়েয়ায় এলাকা দখল ও প্রোমোটিং ব্যবসা ঘিরে গোলমাল, গুলি-বোমাবাজিতে জড়িয়ে পড়ে দুষ্কৃতীরা। রবিবারও তা-ই হয়েছিল।
স্থানীয় বাসিন্দা রাজীব সাউ জানান, ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলছিলেন ববি সিংহ নামে এক স্থানীয়। তাঁকে ঘিরে ধরেই প্রথমে বচসা শুরু হয়। বোমা-গুলিতে আহত হন ববি-সহ কয়েক জন। পুলিশের সামনেও গুলি-বোমাবাজি চলছিল। পরে আরও পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তাঁর কথায়, ‘‘যারা রবিবার রাতে তাণ্ডব চালালো, তারা এলাকায় পরিচিত, বিভিন্ন ঝামেলায় মাঝেমধ্যেই দেখা যায়। আশপাশের সমস্ত থানার পুলিশকে বার বার জানিয়েও লাভ হয়নি।’’ জিতেন্দ্র শর্মা নামে অন্য আর এক স্থানীয় বলেন, ‘‘অনেক বার থানায় পিটিশন দিয়ে এখানে একটা ফাঁড়ি করতে বলেছি। পুলিশ
কান দেয়নি।’’
পুলিশ জানায়, রেলের সাই়ডিংয়ে মাল সরবরাহ নিয়ে ববির সঙ্গে ওই যুবকদের বচসার শুরু। এই ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া সুরজ সাউ, মুরগি ভোলা ওরফে সুরজিৎ, শেখ আনোয়ার আলি, শঙ্কর পোদ্দার ও প্রেমচাঁদ বর্মার বিরুদ্ধে আগেও গড়িয়াহাট-সহ আশপাশের থানায় বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘মাস দেড়েক আগে রুবি হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনাতেও এই দুষ্কৃতীরাই জড়িত ছিল।’’
বার বার ধরা পড়লেও কী ভাবে জামিন পাচ্ছে এই দুষ্কৃতীরা? এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি ওই পুলিশকর্তা।
প্রসঙ্গত, ২৬ অক্টোবর তিলজলা রোডে বচসার জেরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছিল বিজয় রায় ওরফে কচি নামে এক প্রোমোটারের। পরের দিন ধরা পড়ে সাজিদ আলম ওরফে মাস্টার নামে এক অভিযুক্ত। এ দিনই মহারাষ্ট্র থেকে ধরা পড়ে অন্য এক অভিযুক্ত মিস্টার। পুলিশের একাংশের দাবি, রবিবারের ঘটনা ফের চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল, ক্রাইম কনফারেন্সে কলকাতা পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ করপুরকায়স্থ বার বার বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারের নির্দেশ দিলেও তা এখনও সম্ভব হয়নি।
কী ভাবে পুলিশের সামনেই গুলি-বোমাবাজি হল? কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (এসইডি) গৌরব শর্মা বলেন, ‘‘প্রথমে কিছু অফিসার যান। তখনও গুলি-বোমাবাজি চলছিল। পরে আমাদের বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি সামলায়। স্থানীয় দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছি। তাদের জেরা করে এ নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করছি। খুব শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy