Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সাড়ে ৬ হাজারের বোতল ৩ হাজারে, ‘ডিউটি ফ্রি’ মদে ভরছে অবৈধ বিক্রেতার পকেট

অলস সময় অতিরিক্ত লাভের প্রলোভনে ওই গাড়িচালকও শুরু করে দেন বিদেশি মদ সরবরাহের কাজ। তাঁর পকেটে কিছু টাকাও আসতে শুরু করে। রোজগার বাড়তে থাকায় গাড়িচালকের কাজ ছেড়ে দেন।

সম্প্রতি এক পার্টিতে বাজেয়াপ্ত করা বেআইনি মদ। নিজস্ব চিত্র

সম্প্রতি এক পার্টিতে বাজেয়াপ্ত করা বেআইনি মদ। নিজস্ব চিত্র

সুনন্দ ঘোষ
শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:৪১
Share: Save:

এক সময়ে কলকাতা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের এক কর্তার গাড়ি চালাতেন তিনি। সকালে কর্তাকে বিমানবন্দরে পৌঁছে দিয়ে বিকেল পর্যন্ত আর কাজ থাকত না। সারা দিন এ দিক সে দিক ঘুরে বেড়াতেন।তখনই জানতে পারেন, কলকাতা বিমানবন্দর থেকে কোনও এক ‘অজ্ঞাত উপায়ে’ বেরিয়ে আসে দামি বিদেশি মদ — স্কচ, ভদকা, ওয়াইন। বাজারে ৭৫০ মিলিলিটার বোতলের যে মদের দাম ছ’হাজার টাকার কাছাকাছি, সেই একই বিদেশি মদের ১ লিটারের বোতলের দাম তিন থেকে চার হাজার টাকা। ওই মদ ক্রেতার কাছে পৌঁছে দিতে পারলে বোতল প্রতি ২০০ টাকা পর্যন্ত লাভ রয়েছে। এই ব্যবসায় জড়িয়ে বিমানবন্দরের বাইরের এক দল দালাল।

অলস সময় অতিরিক্ত লাভের প্রলোভনে ওই গাড়িচালকও শুরু করে দেন বিদেশি মদ সরবরাহের কাজ। তাঁর পকেটে কিছু টাকাও আসতে শুরু করে। রোজগার বাড়তে থাকায় গাড়িচালকের কাজ ছেড়ে দেন। কলকাতা বিমানবন্দরে ‘ডিউটি ফ্রি শপ’ থেকে বেআইনি ভাবে বাইরে বেরিয়ে আসা বিদেশি মদ নিয়মিত সরবরাহ করতে শুরু করেন। যাঁরা এ ভাবে কর না দেওয়া মদ সরবরাহ করেন, তাঁদের ‘বুটলেগার’ বলে।

রাজ্য আবগারি দফতরের অফিসারদের হাতে মাঝেমধ্যে ধরা পড়ছেন এই বুটলেগারেররা। তাতেও ব্যবসা কমছে না। কিছু দিন আগে আবগারি দফতরের উত্তর শাখার অফিসারেরা ক্রেতা সেজে এক বুটলেগারকে ফোন করেন। তাঁর কাছ থেকে প্রথমে দু’বোতল মদ কিনে তাঁর বিশ্বাস অর্জন করা হয়। গত শুক্রবার আবার তাঁর কাছ থেকে বেশি পরিমাণে বিদেশি মদ চাওয়া হয়। কাশীপুরের একটি এলাকায় মদ নিয়ে আসেন ওই বুটলেগার। দেখা যায়, অন্য ক্রেতাদের সরবরাহ করার জন্য তাঁর সঙ্গে আরও বোতল রয়েছে। মদ-সহ গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। জানা যায়, এই বুটলেগার আর কেউ নন, বিমানবন্দরের এক কর্তার সেই প্রাক্তন গাড়িচালক।

রাজ্য আবগারি দফতর সূত্রের খবর, দিনে দিনে কলকাতায় বুটলেগারের সংখ্যা বাড়ছে। অবস্থাপন্ন ক্রেতাদের অনেকেই বাড়িতে বসে নিয়মিত মদ্যপান করেন। বাজারে যে ৭৫০ মিলিলিটার মদের দাম প্রায় ছ’হাজার টাকা, সেই মদ ১ লিটারের বোতলে তাঁরা পেয়ে যাচ্ছেন সাড়ে তিন হাজার টাকায়। ফলে বিদেশি মদের চাহিদা দিনে দিনে বাড়ছে। যদিও এই ক্রেতাদের হদিস পাওয়া দুষ্কর। পেলেও তাঁদের নাগাল পাওয়া মুশকিল। কেউ বলতেই পারেন, তাঁর বন্ধু বিদেশ থেকে এনে উপহার দিয়েছেন সেই মদ। ফলে অধরা থেকে যান তাঁদের মদ সরবরাহকারী বুটলেগারেরাও।

শহরের ছোট-খাটো পার্টি, বার এবং কিছু ক্লাবেও বিদেশি মদের সরবরাহ করে এই বুটলেগারের দল। সেখানে বেশি পরিমাণে মদ সরবরাহ করায় বুটলেগারদের লাভের অঙ্কও বেশি হয়। এ ভাবে ডিউটি ফ্রি মদ কেনায় সম্প্রতি মধ্য কলকাতার এক অভিজাত হোটেলের বার সিল করে দিয়েছে আবগারি দফতর। মাঝেমধ্যেই হানা দিয়ে অফিসারেরা দেখছেন, তাঁদের অনুমতি ছাড়া বেআইনি মদ্যপানের আসর বসেছে। সম্প্রতি পার্ক সার্কাসের এমনই এক পার্টি থেকে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই সব পার্টিতে যে বুটলেগারেরা মদ সরবরাহ করছেন, তাঁদের হদিসও পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু তাঁদের ধরে এখনও বিমানবন্দরের দালালদের কাছে পৌঁছনো যাচ্ছে না। বুটলেগার গ্রেফতার হলেই সতর্ক হয়ে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট দালাল। বন্ধ করে দিচ্ছেন মোবাইল। বদলে ফেলছেন মোবাইল নম্বর।

অফিসারদের বক্তব্য, বিমানবন্দরের ডিউটি ফ্রি শপ থেকে এই মদ বেরনো বন্ধ করা গেলেই বুটলেগারদের রমরমা কমবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Liquor Illegal Duty Bootlegger
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE