বর্ষবরণের উৎসবে আবেগপ্লুত বো ব্যারাকের এক বাসিন্দা মার্গারেট।
অন্যদিন নিঝুম থাকলেও বছরের এই কটা দিন বিশেষ আনন্দে মেতে ওঠে বৌবাজারের ছোট্ট পাড়াটা। আলো, ক্রিসমাস ক্যারল, খাওয়াদাওয়া আর প্রিয়জনের বাড়ি ফেরার আনন্দে মাতোয়ারা সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা লাল বাড়িগুলি। উৎসবের মেজাজ আর থিক থিকে ভিড়ে চেনা ছন্দে বো ব্যারাক। পার্টি, পিকনিক, খাওয়াদাওয়ায় যতই বৈচিত্র্য আসুক না কেন ভাঁটা পড়েনি এখানকার ঐতিহ্যে। তবে জেন ওয়াই আর ফটোগ্রাফারদের ভিড় চোখে পড়ার মত।
আলোর মালায় সেজে ওঠা রাস্তার একপাশে তৈরি হয়েছে স্টেজ। মাঝে একটা বড়সড় ক্রিসমাস ট্রি। বাড়ির সামনের উঠোনে বসে গল্প আড্ডা আর খাওয়াদাওয়ার মাঝে চলছে কুশল বিনিময়। ক্রিসমাস টুপি মাথায় দিয়ে চলছে জোরদার সেলফি সেশন। এখানে সান্তা স্লেজ গাড়িতে আসেন না। আসেন রিকশোতে চড়ে। চকোলেট, খেলনা ছুঁড়তে থাকেন রাস্তার দুই পাশে সার বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকা বাচ্চাদের দিকে।
প্রায় ছয় দশক ধরে বো ব্যারাকের বাসিন্দা অ্যানা আন্টি। তাঁর বাড়ির তৈরি ওয়াইনের আস্বাদ নিতে হাজির বহু মানুষ। রাস্তার দুইধারে সেলফি শিকারি আর ফটোগ্রাফারদের ভিড় দেখে তাঁর উপলব্ধি, আগের বছরের তুলনায় এ বছর বেশি সংখ্যক মানুষ বো ব্যারাকে এসেছেন। আজ থেকে দশ বছর আগেও চিত্রটা এরকম ছিল না।
আলোয় সেজে উঠেছে গোটা বো ব্যারাক।
আরও পড়ুন:
বৃদ্ধার আদরে এ শহরে জেগে এক টুকরো গ্রিস
মাদক রুখতে বছরশেষে কড়া নজর পানশালায়
লাল বাড়ির আরেক বাসিন্দা মার্গারেট জানালেন, ছোটবেলায় ট্যাক্সি চালক বাবার সামর্থ্য ছিল না চার ভাইবোনকে মানুষ করার। তাই পড়াশোনার জন্য ছোটবেলা অনাথআশ্রমে কাটলেও প্রায় চার দশক ধরে এখান কার বাসিন্দা তিনি। কর্মসূত্রে ভাইরা এখন দেশের বাইরে থাকেন। তবে এবছর তারা আসতে না পারায় মন খারাপ মার্গারেটের। কিন্তু পাড়ার অন্যান্য বাসিন্দারা তাঁর সেই মন খারাপ অনেকটাই ভুলিয়ে দিয়েছে। হাতে হাত মিলিয়ে তৈরি করেছেন ক্রিসমাস কেক।
সবাই হাতে হাত মিলিয়ে ত্রিসমাস কেক তৈরি করেছেন
সন্ধ্যায় তাঁদের হাত ধরেই যাবেন চার্চে। চলবে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপণের পালা। ঘড়ির কাঁটা ১১টা ছুঁলেই শুরু হবে বর্ষবরণের উৎসব। মঞ্চের আশেপাশে নাচ শুরু করবেন এলাকার যুবক- যুবতী আর যুগলেরা। ভোর রাত অবধি চলবে সেই নাচ। থাকবে খাবার দাবারের ব্যবস্থাও। চারদিকের কমবয়সী ছেলে মেয়েদের ভিড় দেখে নস্ট্যালজিক হয়ে পড়ছেন তিনি।
জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবাই ভিড় জমান উৎসবের আঙিনায়।
আসলে এই উৎসব এখন আর কেবলমাত্র অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবাই ভিড় জমান আঙিনায়। স্রেফ হুজুগেও আসেন বহু মানুষ। বিদায় নেবার সময় চোখের কোণ চিকচিক করছে মার্গারেটের। বাইরে তখন ভিড় জমতে শুরু করেছে। সাউন্ড বক্সে বাজছে ইংরেজী গান। রাস্তার দুইধারে কেক, মোমো, ওয়ান্টন, কাবাব, চা,কফির পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। হ্যাপি নিউ ইয়ার মার্গারেট। ভাল কাটুক নতুন বছর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy