Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

অন্যের শরীরে বেঁচে থাকবে দীপশিখা, বললেন বাবা

হৃৎপিণ্ড তখনও সচল। এমন অবস্থায় বুধবার দীপশিখার দু’টি কিডনি তুলে নিয়ে প্রতিস্থাপন করতে হতো ৪ ঘণ্টার মধ্যে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, একই সঙ্গে তিনটি ওটি সচল রেখে প্রতিস্থাপন করতে হয়েছে। দুর্ঘটনায় মৃত্যু বলে, ময়না তদন্তের প্রয়োজনও ছিল। তাই অঙ্গ নেওয়ার সময়ে অটোপসি সার্জেন এবং পুলিশকেও রাখা হয়।

দীপশিখা সামন্ত

দীপশিখা সামন্ত

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৪৪
Share: Save:

পছন্দের গায়িকা আশা ভোঁসলের গান শুনতে মেলায় গিয়েছিলেন কলেজপড়ুয়া দীপশিখা সামন্ত। ফেরার পথে স্কুটার দুর্ঘটনায় মাথায় গুরুতর চোট পান বছর একুশের ওই তরুণী। শনিবার দুর্গাচকে ওই দুর্ঘটনার পরে স্থানীয় হাসপাতাল ঘুরে মেয়েকে নিয়ে রবিবার এসএসকেএম-এ পৌঁছন হলদিয়ার সমর সামন্ত।

আড়াই দিন চিকিৎসার পরে হাসপাতাল জানায়, সুস্থ হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই মেয়েটির। তাঁর মস্তিষ্কের মৃত্যু হয়েছে। তবে মেয়ে বেঁচে থাকবেন অন্যের শরীরে, দীপশিখার অঙ্গ পেয়ে সুস্থ হবেন অনেকে, এ কথা ভেবে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় পরিবার।

কিন্তু, বিষয়টি এত সহজ ছিল না। হৃৎপিণ্ড তখনও সচল। এমন অবস্থায় বুধবার দীপশিখার দু’টি কিডনি তুলে নিয়ে প্রতিস্থাপন করতে হতো ৪ ঘণ্টার মধ্যে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, একই সঙ্গে তিনটি ওটি সচল রেখে প্রতিস্থাপন করতে হয়েছে। দুর্ঘটনায় মৃত্যু বলে, ময়না তদন্তের প্রয়োজনও ছিল। তাই অঙ্গ নেওয়ার সময়ে অটোপসি সার্জেন এবং পুলিশকেও রাখা হয়।

তার আগে বুধবার বিকেলে স্বাস্থ্য দফতরের অনুমতি সাপেক্ষে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইঞ্জিনিয়ারিং স্নাতকের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী দীপশিখার ‘ব্রেন ডেথ’ ঘোষণা করেন। চিকিৎসকেরা জানান, লিভার বা হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন সম্ভব নয়। তবে দু’টি কিডনি, চোখ ও ত্বক প্রতিস্থাপন করা যেতে পারে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, চল্লিশ বছরের এক মহিলা এবং বছর কুড়ির এক যুবককে কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য নির্বাচিত করা হয়। ত্বক সংরক্ষিত হয় ‘স্কিন ব্যাঙ্কে’।

সমরবাবুর কথায়, ‘‘মেয়েকে তো আর ফিরে পাব না। কিন্তু ওর অঙ্গের মাধ্যমে আরও কয়েক জন সুস্থ হয়ে উঠবে।’’ হাসপাতাল সূত্রের খবর, বুধবার রাতে শুরু হওয়া অস্ত্রোপচার বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ শেষ হয়। এ দিন দুই গ্রহীতার জ্ঞান ফিরেছে। তাঁরা সুস্থও রয়েছেন।

আরও পড়ুন: নির্যাতিতাকে দেখলেন লীনা

অতিরিক্ত স্বাস্থ্য অধিকর্তা অদিতিকিশোর সরকার বলেন, ‘‘কাজ দ্রুত করতে স্বাস্থ্য দফতর তৎপরতা দেখিয়েছে।’’ দীপশিখার উদাহরণ সাধারণ মানুষের মধ্যে অঙ্গদান নিয়ে সচেতনতা বাড়াবে বলেও তিনি মনে করেন।

হাসপাতাল অধিকর্তা অজয়কুমার রায় বলেন, ‘‘মেয়েটির চোট এতটাই গুরুতর ছিল যে সমস্ত চেষ্টা সত্ত্বেও ব্রেন ডেথ হয়ে যায়। এর পরে আমরা পরিবারকে বোঝাই। তাঁরা সহমত হওয়ায় অঙ্গদানের সিদ্ধান্ত হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

SSKM Student brain death Organs replacement
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE