Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

দীপাবলির রাতে চাল ফুঁড়ে ছুটে এল গুলি!

উৎসবের রাতে ঘটনাটি ঘটেছে মানিকতলার ক্যানাল ইস্ট রোডে। চাল ফুঁড়ে এ ভাবে ঘরের ভিতরে গুলি ঢুকে যাওয়ার ঘটনায় মানিকতলা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন গৃহকর্তা রতন সরকার।

আতঙ্ক: এই বুলেটটি (বাঁ দিকে) চাল ফুঁড়ে ঢুকে আঘাত করে বাসনপত্রে। মানিকতলার ক্যানাল ইস্ট রোডে। নিজস্ব চিত্র

আতঙ্ক: এই বুলেটটি (বাঁ দিকে) চাল ফুঁড়ে ঢুকে আঘাত করে বাসনপত্রে। মানিকতলার ক্যানাল ইস্ট রোডে। নিজস্ব চিত্র

নীলোৎপল বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৮ ০২:৫৩
Share: Save:

দীপাবলির রাত। খাওয়ার পরে শেষ পাতের গল্প চলছে। বাইরে বাজির প্রবল আওয়াজ। বাড়ির ছোট মেয়ে রান্নাঘর লাগোয়া বেসিনে হাতে ধুতে যেতেই ঘটে বিপত্তি। জোর আওয়াজ করে বেসিন এবং বেসিনের উপরে রাখা থালা ফুটো করে কিছু একটা নীচে ঢুকে যায়! প্রথমে সকলেই ভাবেন, ঘরের মধ্যে বাজি ঢুকেছে। কয়েক মিনিটেই অবশ্য ভুল ভাঙে। দেখা যায়, বেসিনের ঠিক উপরের চালেও ছিদ্র। সামান্য খোঁজাখুঁজির পরে ঘরের ভিতরেই উদ্ধার হয় দেড় ইঞ্চির একটি গুলির খোল!

উৎসবের রাতে ঘটনাটি ঘটেছে মানিকতলার ক্যানাল ইস্ট রোডে। চাল ফুঁড়ে এ ভাবে ঘরের ভিতরে গুলি ঢুকে যাওয়ার ঘটনায় মানিকতলা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন গৃহকর্তা রতন সরকার। শনিবার তিনি বলেন, ‘‘আমার মেয়ে পূজা অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছে। আমরা খুব আতঙ্কে রয়েছি। আবার এ রকম ঘটতে পারে।’’ মানিকতলা থানা সূত্রের খবর, পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। গুলির খোলটিকে সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক বলেন, ‘‘গুলির মতো ওই জিনিসটা কী বা কোন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র থেকে তা ছোড়া হয়েছিল, তা পরীক্ষার পরে বোঝা যাবে। খোলটি উদ্ধারের সময়ে তাতে অবশ্য বারুদের গন্ধ মেলেনি। তবে এটা প্রাণঘাতী হতেই পারত।’’

রতনবাবু পেশায় কেব্‌ল অপারেটর। তাঁদের তিনতলা বাড়ির উপরে টিনের চাল। দোতলার ঘরগুলি ভাড়ায় দেওয়া। এক এবং তিনতলার ঘর নিয়ে থাকে রতনবাবুর পরিবার। ওই দিন ঘটনার সময়ে পরিবারের সকলেই তিনতলার ঘরে ছিলেন। খাটের উপরে বসে ছিলেন রতনবাবু। স্ত্রী আলোদেবী, পুত্র শানু এবং মেয়ে পূজা খাওয়া শেষে গল্প করছিলেন। রাত সওয়া বারোটা নাগাদ পূজা বেসিনে হাত ধুতে যান। রতনবাবু বলেন, ‘‘সেই সময়েই জোর আওয়াজে ঘরের মধ্যে চাল ফুটো করে কিছু একটা ঢুকে যায়। মেয়ে ভয়ে পিছিয়ে আসে। গিয়ে দেখি, বেসিন আর বেসিনে রাখা থালা ফুটো হয়ে গিয়েছে।’’ কলেজপড়ুয়া পূজা বলেন, ‘‘খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। গুলিটা এত জোরে নেমেছে যে, সামনে যা পেয়েছে ফুটো করে দিয়েছে। একটু এ দিক-ও দিক হলে আমার মাথাও গুলির লাইনেই থাকত।’’ ঘটনার পরেই বাড়ির সামনে লোক জমে যায়। প্রতিবেশীরাই মানিকতলা থানায় খবর দেন।

আততায়ীর খোঁজে তদন্ত শুরু করেছে মানিকতলা থানার পুলিশ। রতনবাবুর পরিবারের লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পাশাপাশি তাঁর প্রতিবেশীদের সঙ্গেও কথা বলেছেন তদন্তকারীরা। এই ঘটনায় এখনও কাউকে আটক বা গ্রেফতার করা যায়নি। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, আশপাশের কোনও উঁচু বাড়ি থেকে গুলিটি ছো়ড়া হয়ে থাকতে পারে।

প্রসঙ্গত, গত জুলাইয়ে কালীঘাটে একই রকম অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলেন স্যমন্তক চট্টোপাধ্যায় নামে এক ব্যক্তি। তাঁদের ফ্ল্যাটের জানলা ফুঁড়েও গুলির মতো কিছু একটা ঢুকেছিল বলে তিনি কালীঘাট থানায় অভিযোগ করেছিলেন। ঘটনার তদন্তে নেমে কালীঘাট থানার পুলিশ অবশ্য গুলির খোল উদ্ধার করতে পারেনি। গ্রেফতারও হননি কেউ। তাঁদের পাড়ায় বেশ কিছু সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্যমন্তক। মানিকতলার ঘটনা শুনে তিনি বলেন, ‘‘মারাত্মক ব্যাপার! এ ভাবে যখন-তখন গুলি চলছে শহরে! আর কেউ ধরাও পড়ছে না! বারুদের উপরেই রয়েছি হয়তো।’’ লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘রিপোর্ট নিচ্ছি। নিশ্চয়ই তদন্ত শুরু হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime মানিকতলা
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE