Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সাত হাসপাতাল ঘোরা দগ্ধ শিশু মারাই গেল

শিশুর মা চায়না দাস কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না। হাসপাতালের সিঁড়িতে বসে বারবার সংজ্ঞা হারাচ্ছিলেন তিনি।

দিয়া দাস

দিয়া দাস

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৯ ০২:১৬
Share: Save:

ছ’টি হাসপাতালে ঘুরে ঠাঁই মেলেনি। সপ্তম হাসপাতালেও জায়গা পাওয়া সহজ হয়নি। গত শনিবার আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে রীতিমতো অবস্থান-বিক্ষোভের পরে অগ্নিদগ্ধ মেয়েকে অবশেষে ভর্তি করাতে পেরেছিলেন বাবা-মা! তার পর থেকে আইসিইউ-তে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছিল একরত্তি মেয়েটি। বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, দিয়া দাস নামে সেই শিশুকন্যার মৃত্যু হয়েছে। আর জি কর হাসপাতালের সুপার মানস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘চিকিৎসকেরা সব সময়ে সজাগ ছিলেন। গত কয়েক দিনে শিশুটিকে সব রকম চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হয়েছে।’’

যদিও দিয়ার বাবা রঞ্জিত দাসের বক্তব্য, ‘‘একটি হাসপাতালও দেখতে চাইছিল না আমার মেয়েকে। আর জি করে এক চিকিৎসক তিন ঘণ্টা ফেলে রাখার পরে বলেছিলেন, মরলে মরবে, আমাদের কী? যে ভাবে ও পুড়ে গিয়েছিল, তাতে হয়তো আশা ছিল না। কিন্তু সময়ে চিকিৎসা শুরু করলে মেয়েটা আরও এক-দুটো দিন বাঁচতে পারত! এখনও বলব, চিকিৎসা না পেয়েই আমার মেয়ের মৃত্যু হয়েছে।’’ শিশুর মা চায়না দাস কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না। হাসপাতালের সিঁড়িতে বসে বারবার সংজ্ঞা হারাচ্ছিলেন তিনি।

গত শুক্রবার সন্ধ্যায় গোবরডাঙা ইছাপুর এলাকার বাসিন্দা দিয়া অগ্নিদগ্ধ হয়। নতুন বাড়িতে গৃহপ্রবেশের পুজোয় ব্যবহৃত মোমবাতি থেকে তার গায়ে আগুন ধরে যায় বলে জানিয়েছে পরিবার। ওই রাতেই দিয়াকে হাবড়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে বারাসত হাসপাতালে রেফার করে দেওয়া হয়। রাতে বারাসত হাসপাতালে থাকার পরে শনিবার সকালেই শিশুটিকে কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (এনআরএস) রেফার করা হয়। দিয়ার পরিবারের অভিযোগ, এনআরএস কর্তৃপক্ষ দু’ঘণ্টা ফেলে রাখার পরে দিয়াকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। এসএসকেএম হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে দিয়াকে শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হয় বলে রঞ্জিতদের দাবি। এর পরে শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালও জানিয়ে দেয়, অগ্নিদগ্ধ রোগীকে রাখার ব্যবস্থা তাঁদের নেই। এর পরে নারকেলডাঙা মেন রোডের বি সি রায় শিশু হাসপাতালে দিয়াকে নিয়ে যেতে বলেন শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে বি সি রায় শিশু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও দিয়াকে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে দেন।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

দিয়ার পরিবার দাবি করে, শনিবার দুপুর ২টো নাগাদ আর জি করে পৌঁছনোর পরে শয্যা ফাঁকা নেই বলে জানিয়ে দেওয়া হয় তাদের। বিকেল সাড়ে ৪টের পরেও মেয়েকে ভর্তি করাতে না পেরে এর পরে অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু করেন দিয়ার বাবা-মা। চাপের মুখে ওই শিশুকন্যাকে ভর্তি নেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তার পর থেকেই আইসিইউ-তে ছিল দিয়া। এ দিন সকাল ৮টা নাগাদ সেখানেই তার মৃত্যু হয়।

আরও পড়ুন: আজ-হারেও সব ‘দোষ’ নেহরুর! মাসুদ নিয়ে বিজেপি-কংগ্রেসের নতুন বিতর্কের চিত্রনাট্য

ছ’টি হাসপাতাল ঘুরে, সপ্তম হাসপাতালে ভর্তি হতে পারা অগ্নিদগ্ধ এই শিশুকন্যার মৃত্যু রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। শিশুর পরিবার এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আইনের দ্বারস্থ হওয়ার কথাও ভাবছে। গত শনিবারই এ বিষয়ে স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা প্রদীপ মিত্রের জবাব ছিল, ‘‘এমন তো কতই ঘটছে। এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে, খোঁজ নিয়ে দেখব।’’

আরও পড়ুন: মুম্বইয়ে ভেঙে পড়ল ফুটব্রিজ, চাপা পড়ে মৃত্যু অন্তত ৬ জনের

আর রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেছিলেন, ‘‘বিনামূল্যের চিকিৎসা পেতে একসঙ্গে অনেকে আসেন সরকারি হাসপাতালে। রোগীর পরিবারকেও একটু ধৈর্য ধরতে হবে।’’ দুই স্বাস্থ্যকর্তার মন্তব্যেই বিতর্ক হয়। দিয়ার বাবা রঞ্জিত পাল্টা বলেন, ‘‘অগ্নিদগ্ধ মেয়েকে নিয়ে আর কতক্ষণ ধৈর্য ধরতে হত? আর কত হাসপাতাল ঘুরলে মেয়েটা বাঁচত?’’ এ দিন ওই শিশুকন্যার মৃত্যুসংবাদ শুনে প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘নতুন করে কিছু বলার নেই।’’ আর অজয়বাবু বলেন, ‘‘মিটিংয়ে ব্যস্ত রয়েছি।’’ ময়না-তদন্তের পরে মেয়ের মরদেহ নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে রঞ্জিত বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যকর্তারা এ ভাবেই এড়িয়ে যাবেন। আমরা আইনের দ্বারস্থ হব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

R G Kar Hospital Death Girl
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE