Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

‘দর্শক’ পুলিশই আচমকা মারমুখী

পুলিশ গোড়ায় কার্যত দর্শকের ভূমিকায় ছিল। বিক্ষোভকারীদের হঠাতে পুলিশ যখন সক্রিয় হয়, তখন আবার ‘বাড়াবাড়ি’র অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে।

তুলকালাম: দুর্ঘটনার পরে রণক্ষেত্র চিংড়িঘাটায় পুলিশের সামনে মারমুখী জনতা। শনিবার দুপুরে। ছবি: শৌভিক দে

তুলকালাম: দুর্ঘটনার পরে রণক্ষেত্র চিংড়িঘাটায় পুলিশের সামনে মারমুখী জনতা। শনিবার দুপুরে। ছবি: শৌভিক দে

শমীক ঘোষ
শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:২০
Share: Save:

বেলা ১২টা থেকে দুপুর দুটো। টানা দু’ঘণ্টা ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাস বন্ধ করে চলল তাণ্ডব। সল্টলেকের সুকান্তনগর, শান্তিনগর থেকে ছোড়া হল ইট, পাথর। জ্বালানো হল একের পর এক বাস। তার পরে আরও ঘণ্টাখানেকের বেশি সময় লাগল যান চলাচল স্বাভাবিক হতে।

অভিযোগ, পুলিশ গোড়ায় কার্যত দর্শকের ভূমিকায় ছিল। বিক্ষোভকারীদের হঠাতে পুলিশ যখন সক্রিয় হয়, তখন আবার ‘বাড়াবাড়ি’র অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। শান্তিনগরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মৃতের বাবাকেও লাঠিপেটা কেন করা হল, সেই প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার বাসিন্দারা।

পুলিশের দেরিতে পদক্ষেপের অভিযোগ কার্যত স্বীকার করে নিয়ে বিধাননগর কমিশনারেটের এক শীর্ষ কর্তার দাবি, দুর্ঘটনার পরে বিক্ষোভ অনেকটাই সামাল দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আচমকা একাধিক গলি থেকে ইটবৃষ্টি শুরু হয়। সেই সময়ে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশকর্মী সেখানে ছিলেন না। পরে পুলিশের সংখ্যা বাড়িয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। তবে পরিস্থিতি কেন হিংসাত্মক হয়ে উঠল, তা খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হবে।

পুলিশ সূত্রে খবর, বাস ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, অবরোধের পরে দুপুর দুটো নাগাদ পুলিশ বিক্ষোভকারীদের হঠাতে তৎপর হলে শান্তিনগরের ভিতরের রাস্তা থেকে ইট ছোড়া শুরু হয়। এর পরেই দুর্ঘটনায় মৃত বিশ্বজিৎ ভুঁইয়ার বাড়িতে ঢুকে পড়ে পুলিশ। তার বাবা সুশীল ভুঁইয়ার অভিযোগ, ‘‘বললাম, আমি ছেলের বাবা। কোনও কথা শুনল না। মারতে লাগল।’’ লাঠিচার্জ নিয়ে ক্ষোভ স্থানীয় বাসিন্দাদের গলাতেও। স্কুল থেকে দিদির সঙ্গে মধুমিতা আচার্য। তাঁর দিদির ক্ষোভ, ‘‘আমাদের কেন লাঠিপেটা করা হল?’’ পুলিশের বক্তব্য, উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করতে কড়া পদক্ষেপ ছাড়া উপায় ছিল না। বস্তুত, বিক্ষোভকারীদের ইটের ঘায়ে বেশ কয়েক জন পুলিশকর্মীও জখম হয়েছেন।

দীর্ঘ ক্ষণ বিক্ষোভের মূলে শুধুই কি এ দিনের দুর্ঘটনা? বাসিন্দারা জানিয়েছেন, চিংড়িঘাটা মোড়ে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে পুলিশের গড়িমসি নিয়েও দীর্ঘ দিন ধরে ক্ষোভ জমছিল তাঁদের। ট্র্যাফিক পুলিশের বিরুদ্ধে টাকা আদায়ের অভিযোগও তুলেছেন তাঁরা। পুলিশ অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ওই মোড়ে যান নিয়ন্ত্রণ করে কলকাতা পুলিশ। পরবর্তী এলাকা বিধাননগর পুলিশের। দুই এলাকার মোড়ে দুর্ঘটনা ঘটলে অহরহ দায় এড়ানোর চেষ্টা চলে। এ দিনও তার ব্যতিক্রম হয়নি বলে অভিযোগ। বাসিন্দাদের দাবি, দুর্ঘটনার পরে ঘাতক বাসের চালককে আটকানোর কোনও চেষ্টা পুলিশকে করতে দেখা যায়নি।

রাজা ভৌমিক নামে এক অটোচালক দাবি করেন, তিনি যাত্রী নিয়েই বাসটিকে ধাওয়া করেন। কয়েক জন মোটরবাইক চালকও বাসটিকে তাড়া করেন। বাসচালক সুকান্তনগরের লোহারপুলে বাস থামিয়ে পালানোর চেষ্টা করলে তাঁকে ধরে ফেলা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE