Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
cafe positive

এশিয়ায় প্রথম, ক্যাফে পজিটিভ তৈরি হল কলকাতায়

কেন ক্যাফে পজিটিভ? কারণ ক্যাফের কর্মীদের প্রত্যেকেই নিজের শরীরে এইচআইভি মারণ ভাইরাস বহন করছেন জন্মসূত্রে।

এশিয়ার মধ্যে প্রথমবার ক্যাফে সামলাচ্ছেন এইচআইভি আক্রান্তরাই। ছবি সৌজন্যে ক্যাফে পজিটিভ।

এশিয়ার মধ্যে প্রথমবার ক্যাফে সামলাচ্ছেন এইচআইভি আক্রান্তরাই। ছবি সৌজন্যে ক্যাফে পজিটিভ।

রোশনি কুহু চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১০:০০
Share: Save:

‘এডস রোগী নাকি, ওরে বাবা। দূরে থাকতে হবে।’ এই জাতীয় মন্তব্য বার বার শুনতে হয়েছে ছোটবেলা থেকেই। কিন্তু লড়াইটা ওঁরা ছাড়েননি। ওঁদের প্রত্যেকের লড়াইটা শুরু হয়েছিল জন্মের সময়। বাবা মায়ের পরিচয় জানা ছিল না। ওঁরাই কিন্তু এখন একটা গোটা ক্যাফেটেরিয়া সামলাচ্ছেন। ৫২৪এ যোধপুর পার্কের একটা গ্যারেজ ঘর ভাড়া নিয়েই শুরু হয়ে গিয়েছে কলকাতার ‘ক্যাফে পজিটিভ’।

কেন ক্যাফে পজিটিভ? কারণ ক্যাফের কর্মীদের প্রত্যেকেই নিজের শরীরে এইচআইভি মারণ ভাইরাস বহন করছেন জন্মসূত্রে। এটি এশিয়ার প্রথম ক্যাফে, যা সামলাচ্ছেন শুধুমাত্র এইচআইভি ভাইরাস আক্রান্তরা।

‘ভাইরাস বহন করলেই বা কী। তাদের তো আর এডস নেই। নিয়মিত রেট্রো ভাইরাল চেক আপ করাতে হয়। নিয়ম মেনে চলতে হয়। তা হলেই আর এডস সংক্রমণের সম্ভাবনা নেই। তবে এইচআইভি শরীরে থাকলেই যে তিনি সাধারণের চোখে এখনও এডস রোগী!

ক্যাফেতে এসেছেন চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ এবং সংগীত পরিচালক দেবজ্যোতি মিশ্রও। ছবি সৌজন্যে ক্যাফে পজিটিভ।

এটা অত্যন্ত ভুল একটা ভাবনা। অথচ নিয়ম মেনে চললে এডস রোগের কোনও সম্ভাবনাই নেই”— বললেন কল্লোল ঘোষ। কল্লোল বাবু রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রাক্তন কর্মী, একই সঙ্গে এই ক্যাফের উদ্যোক্তা।

আরও খবর:পাহাড়ের উপর ৫০ ফুটের তিনটি বিশাল আয়না রয়েছে এই শহরে, কেন জানেন?

এরকম একটা ক্যাফে খোলার পথটা কতটা সহজ ছিল?

কল্লোল বাবু জানালেন, “একেবারেই সহজ ছিল না। এই ক্যাফের জন্য জায়গা খুঁজতেই আমাদের কালঘাম ছুটেছে। কেউই চাননি এরকম একটা ক্যাফেকে ভাড়া দিতে। ভয় সংক্রমণের। কিন্তু এইচআইভি পজিটিভ মানুষ মানেই তো এডস রোগী নন। ভাইরাস শরীরে রয়েছে। কিন্তু প্রত্যেকেই এঁরা সুস্থ। এই সচেতনতা গড়তেই কলকাতা থেকে একটা ভাবনা শুরু করতে চেয়েছিলাম। এশিয়ার মধ্যে লড়াইটা প্রথম শুরু করতে চেয়েছিলাম নিজের ঘর থেকেই।”

ক্যাফের মেনুকার্ড।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোবিন্দপুর গ্রাম। সেখানেই এক অনাথ আশ্রমে বড় হয়েছে এই ক্যাফের কর্মীরা। এঁদের বয়স আঠারো থেকে একুশের মধ্যে। কেউ উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছেন সদ্য। কেউ বা স্নাতক স্তরের ছাত্র। কারও রয়েছে হসপিটালিটি, কারও বা রিটেলের ডিগ্রি। কল্লোল বাবুদের পাশে দাঁড়িয়েছে জাপানের একটি সংস্থা। ক্যাফেতে যে চা, কফি, কেক, পেস্ট্রি তৈরি হয়, তা বানানোর আধুনিক যন্ত্রপাতির যোগান দিয়েছে এই সংস্থা।

আরও খবর: রেললাইন ধরে কাঁদতে কাঁদতে হাঁটছিলেন বৃদ্ধা, ছুটে আসছিল ট্রেন, তার পর...​

কল্লোল বাবু বলেন, আস্তে আস্তে সারা দেশে ৩০টা আউটলেট করতে চান তাঁরা। কলকাতার বাইরে থেকে দু’জন এইচআইভি পজিটিভ মানুষ ইতিমধ্যেই তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন কাজ করতে চেয়ে। কারণ এই মানুষগুলো সত্যি হারতে শেখেননি। তাঁরা চান, অধিকার আর সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে। আর ক্যাফের মালিকও তাই এই দশটি ছেলেমেয়েই।

সম্প্রতি কলকাতায় উদ্বোধন হল এই ক্যাফে পজিটিভের। প্রতি দিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা খোলা থাকছে এই ক্যাফে। অন্য গানের ভোরের অপেক্ষায় এই ক্যাফের কর্মীরাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cafe positive AIDS Health Awareness Society
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE