Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

নেই ফ্যাকাল্টি কাউন্সিল, জট পছন্দের পাঠে, বেঁকে বসলেন শিক্ষকেরা

প্রায় ছ’বছর ধরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে কোনও ফ্যাকাল্টি কাউন্সিল নেই। অথচ পঠনপাঠন সংক্রান্ত যাবতীয় প্রস্তাব পেশ করার কথা ওই কাউন্সিলেরই। সেটা গঠন না-করেই চয়েস বেসড ক্রেডিট সিস্টেম (সিবিসিএস) বা পছন্দসই মিশ্র পাঠ চালু করার পাশাপাশি নানান সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

ফ্যাকাল্টি কাউন্সিলের ক্ষমতা কতটা, তার উল্লেখ রয়েছে ‘দ্য ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট, ১৯৭৯’- এর এই অংশে।

ফ্যাকাল্টি কাউন্সিলের ক্ষমতা কতটা, তার উল্লেখ রয়েছে ‘দ্য ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট, ১৯৭৯’- এর এই অংশে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:০৯
Share: Save:

ক্ষোভ জমছিল। এ বার সরাসরি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কার্যত ‘বিদ্রোহ’ ঘোষণা করলেন শিক্ষকেরা।

প্রায় ছ’বছর ধরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে কোনও ফ্যাকাল্টি কাউন্সিল নেই। অথচ পঠনপাঠন সংক্রান্ত যাবতীয় প্রস্তাব পেশ করার কথা ওই কাউন্সিলেরই। সেটা গঠন না-করেই চয়েস বেসড ক্রেডিট সিস্টেম (সিবিসিএস) বা পছন্দসই মিশ্র পাঠ চালু করার পাশাপাশি নানান সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর বিরুদ্ধেই রুখে দাঁড়িয়েছে ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন (কুটা)। ‘‘স্নাতকোত্তরে ফ্যাকাল্টি কাউন্সিল ছাড়া অন্য কোনও বোর্ড অ্যাকাডেমিক (শিক্ষা বিষয়ক) সিদ্ধান্ত নিলে সেটা আমরা মানব না। তার জন্য আন্দোলনে যেতে হলে যাব। সিদ্ধান্ত মানছি না,’’ বলেন কুটা-র সাধারণ সম্পাদক পার্থিব বসু।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, ১৯৭৯ সালের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী প্রতিটি বিভাগের বোর্ড অব স্টাডিজ (বিওএস) তৈরি করে ফ্যাকাল্টি কাউন্সিল। বিওএস থেকে পাঠ্যক্রম, পরীক্ষা পদ্ধতি পাঠানো হয় কাউন্সিলে। সেখানে সংশোধন ও পাশ হওয়ার পরে তা সিন্ডিকেটে পৌঁছয়। তার পরে ছাড়পত্র পেলে তা বাস্তবায়িত হয়।

আইনে উল্লিখিত ২২ দফা ক্ষমতার অন্যতম হল: স্নাতকোত্তরে পাঠ্যক্রম সংক্রান্ত নিয়মাবলি তৈরি করবে কাউন্সিল। সেটা পাঠানো হবে সিন্ডিকেটে।

অভিযোগ, এখন সব কিছুই সিন্ডিকেটে ঠিক করা হচ্ছে। প্রস্তাব পেশ ও পাশ করাচ্ছেন সিন্ডিকেটের মুষ্টিমেয় কর্তা। প্রতিটি বিষয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মতামত ছাড়াই পাঠ্যক্রমের খুঁটিনাটি ঠিক করা হচ্ছে।

শিক্ষা শিবিরের পর্যবেক্ষণ, এতে গণতন্ত্র নষ্ট তো হচ্ছেই। যে-উদ্দেশ্যে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কাউন্সিল গড়ার ব্যবস্থা হয়েছিল, সেটাও সফল হচ্ছে না। ওই কাউন্সিলে উপাচার্য, সহ-উপাচার্য (শিক্ষা), ডিন, বিভাগীয় প্রধান, বিভাগের প্রফেসর, উপাচার্য মনোনীত কলেজের শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচিত শিক্ষক-প্রতিনিধিদের থাকার কথা।

একই ভাবে স্নাতক স্তরেও ফ্যাকাল্টি কাউন্সিল গড়া হয়নি। এই ধরনের কাউন্সিলের হাতে কোনও কলেজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া বা পরিচালন সমিতি ভেঙে প্রশাসক বসানোর ক্ষমতা থাকে। এখন ওই সব কাজও করছে সিন্ডিকেট।

কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ২০১২ সালে আইন সংশোধনের পরে ‘স্ট্যাটিউট’ বা বিধি সংশোধন করার কথা।কিন্তু সেটাই করে ওঠা যায়নি। এক শিক্ষক বলেন, ‘‘নিজেরাই সিন্ডিকেটের এজেন্ডা (কর্মসূচি) ঠিক করছেন। নিজেরাই সেটা পাশ করিয়ে নিচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে যা ইচ্ছে তা-ই চলছে।’’ পার্থিববাবু বলেন, ‘‘নির্বাচিত না-হোক, মনোনীত সদস্যদের নিয়েই ফ্যাকাল্টি কাউন্সিল গড়তে হবে। আমরা এই মর্মে উপাচার্যের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছি।’’ ওয়েবকুটা-র সাধারণ সম্পাদক শ্রুতিনাথ প্রহরাজ বলেন, ‘‘স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে ফ্যাকাল্টি কাউন্সিল না-থাকা সত্ত্বেও বোর্ড অব স্টাডিজের মেয়াদ বাড়িয়ে সেটা চালানো হচ্ছে। এটাই তো অনৈতিক। পঙ্গু হওয়া যাওয়া এই ব্যবস্থার সরাসরি প্রভাব পড়ছে পঠনপাঠনেও।’’

এই বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) দীপক করের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু তিনি ফোন তোলেননি। জবাব দেননি মেসেজেরও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE