Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

নির্বিবাদে ট্যাক্সি পেতে চান? তা হলে আগে পুলিশ ডাকুন

দমদম স্টেশনে যেতে ধর্মতলা মোড়ে ট্যাক্সির জন্য দাঁড়িয়েছিলেন দক্ষিণেশ্বরের বাসিন্দা দেবজ্যোতি গুপ্ত। ঘড়ির কাঁটা পাঁচটা ছুঁইছুঁই। পরপর কয়েকটি ট্যাক্সি প্রত্যাখ্যান করার পরে সিগন্যালে দাঁড়ানো একটি ট্যাক্সিকে ধরেন তিনি। কিন্তু তার চালকও জানিয়ে দেন, যাবেন না। কারণ, তাঁর ট্যাক্সির মিটার কাটা। ক্ষুব্ধ দেবজ্যোতিবাবু এর পরে কাছেই কর্তব্যরত পুলিশ সার্জেন্টকে অভিযোগ জানান। তিনি সঙ্গে সঙ্গে ট্যাক্সিটিকে আটক করেন। পরে ওই সার্জেন্টেরই ডেকে দেওয়া ট্যাক্সিতে দমদম স্টেশন রওনা দেন ওই দম্পতি।

ডাকাডাকিই সার। কানে কথাই তুলছেন না ট্যাক্সিচালক। মঙ্গলবার ধর্মতলায়। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য

ডাকাডাকিই সার। কানে কথাই তুলছেন না ট্যাক্সিচালক। মঙ্গলবার ধর্মতলায়। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য

সায়নী ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৪ ০১:৫৮
Share: Save:

দমদম স্টেশনে যেতে ধর্মতলা মোড়ে ট্যাক্সির জন্য দাঁড়িয়েছিলেন দক্ষিণেশ্বরের বাসিন্দা দেবজ্যোতি গুপ্ত। ঘড়ির কাঁটা পাঁচটা ছুঁইছুঁই। পরপর কয়েকটি ট্যাক্সি প্রত্যাখ্যান করার পরে সিগন্যালে দাঁড়ানো একটি ট্যাক্সিকে ধরেন তিনি। কিন্তু তার চালকও জানিয়ে দেন, যাবেন না। কারণ, তাঁর ট্যাক্সির মিটার কাটা। ক্ষুব্ধ দেবজ্যোতিবাবু এর পরে কাছেই কর্তব্যরত পুলিশ সার্জেন্টকে অভিযোগ জানান। তিনি সঙ্গে সঙ্গে ট্যাক্সিটিকে আটক করেন। পরে ওই সার্জেন্টেরই ডেকে দেওয়া ট্যাক্সিতে দমদম স্টেশন রওনা দেন ওই দম্পতি।

নিয়ম মাফিক ট্যাক্সি পেতে শহরে এখন কার্যত পুলিশই ভরসা। পুলিশ সাহায্য করলে তবু মিলতে পারে, না হলে কোনও কোনও ক্ষেত্রে ট্যাক্সিতে চড়াই দুষ্কর। যাত্রীরা গাঁটের কড়ি খরচ করে ট্যাক্সিতে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছতে চাইলেও পারবেন না। ইচ্ছেমতো চালক বলে দেবেন, ‘যাব না’। অথবা যা ভাড়া, তার দ্বিগুণ বা তিন গুণ দিয়ে পৌঁছতে হবে গন্তব্যে। দিন হোক বা রাত, উত্তর কিংবা দক্ষিণ কলকাতার ট্যাক্সি-চিত্র এখন এ রকমই।

ট্যাক্সি না-পেয়ে পুলিশের সাহায্য নেবেন, এমন সুযোগ ছিল না চিকিৎসক চয়ন গঙ্গোপাধ্যায়ের। হাইল্যান্ড পার্কের সামনে বিরাট বড় পুুলিশ-কিয়স্ক ছিল ঠিকই। কিন্তু সকাল সাড়ে আটটায় সেখানে পুলিশ ছিল না। অগত্যা এক ট্যাক্সিচালকের বেয়াদপি সহ্য করে ৭০ টাকা দিয়ে চয়নবাবুকে যেতে হয়েছে কাছেই কালিকাপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে। যেখানে ওই দূরত্বে ট্যাক্সির মিটারে ভাড়া হয় ২৫-৩০ টাকা। পরে অভিযোগ করায় পুলিশ তাঁকে ওই ট্যাক্সিচালককে আটক এবং ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

শ্বেতশ্রী বা পুলকদের আবার পুলিশের কাছে যাওয়ার কোনও অবস্থাই ছিল না। ব্যস্ত শিয়ালদহে পুলিশ কোথায়!

দুপুর আড়াইটে নাগাদ ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামল শিয়ালদহে। শ্বেতশ্রী কুণ্ডু ও তাঁর বোনের তখন মাথায় হাত। বৃদ্ধ মা-বাবাকে বি আর সিংহ হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে এসে মহা ফাঁপরে পড়েছেন। নাগেরবাজার যাবে কি না জিজ্ঞেস করতেই পরপর চারটে ট্যাক্সি সাফ জানিয়ে দিয়েছে, ‘যাব না’। এক চালক আবার কোনও জবাব না দিয়েই স্রেফ ট্যাক্সিটা জোরে চালিয়ে দিয়েছেন। এ দিকে নাগাড়ে বৃষ্টি। অগত্যা এক চালককে অনেক করে অনুরোধ করলেন শ্বেতশ্রীরা। প্রত্যাখ্যান করায় অভিযোগের হুমকিও দিলেন। চালক চোখ রাঙিয়ে পাল্টা বললেন, “ও-সব পুলিশ-টুলিশ দেখাবেন না। বললাম তো, যাব না।”

শেষমেশ সহৃদয় এক ব্যক্তির চেষ্টায় এক ট্যাক্সিচালককে রাজি করানোর পরে বাবা-মাকে নিয়ে নাগারেবাজারের দিকে রওনা হলেন শ্বেতশ্রীরা। যাওয়ার আগে বললেন, “হাসপাতালে আসার সময়েও একই হেনস্থা। ট্যাক্সিচালকদের দৌরাত্ম্যে তো এখন রাস্তায় চলাই দায়!”

শ্বেতশ্রীদের মতোই হয়রানি হয়েছে তারকেশ্বরের বাসিন্দা পুলক মল্লিকেরও। তাঁর বাবা বিশ্বনাথ মল্লিকের চোখে অস্ত্রোপচার করানো হয়েছে। তাঁকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন পুলকবাবু। বললেন, “ডাক্তার বলেছিলেন, বাবার যাতে ঝাঁকুনি কম লাগে। কিন্তু সব ট্যাক্সিই তো দ্বিগুণের বেশি ভাড়া চাইছে। অগত্যা বাসেই ফিরতে হবে।”

বি আর সিংহ থেকে একটু এগিয়ে শিয়ালদহ স্টেশনের ছবিটাও একই রকম। শিয়ালদহ থেকে হাওড়ায় বাড়ি ফিরতে ট্যাক্সি খুঁজছিলেন সুনীল প্রসাদ। কিন্তু দুপুরে ও-দিক থেকে যাত্রী মিলবে না, এই অজুহাতে দ্বিগুণ ভাড়া চাইছেন চালকেরা। সুনীলবাবু বলেন, “যা দেখছি, তাতে বেশি ভাড়া না-দিলে ট্যাক্সি জুটবে না। দেখি, এর মধ্যে যে কম টাকা চাইবে, তার ট্যাক্সিতেই যাব।”

শনিবার থেকে পরপর ট্যাক্সিচালকদের গুন্ডামি এবং প্রত্যাখ্যানের অভিযোগ। প্রত্যাখ্যানের প্রতিবাদ করায় চালকের হাতে মারও খেতে হয়েছে প্রবাসী ব্যবসায়ীকে। পরপর এ সব ঘটনা সামনে আসার পরে প্রশাসন থেকে মন্ত্রী সকলেই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। দিয়েছেন ‘কড়া ব্যবস্থা’ নেওয়ার প্রতিশ্রুতিও। কিন্তু যাবতীয় প্রতিশ্রুতিই যে সার, তার তোয়াক্কা যে ট্যাক্সিচালকেরা করেন না, তার প্রমাণ মিলল মঙ্গলবারের কলকাতায় ট্যাক্সি-রাজের ছবিতেই।

পরিবহণ দফতরের কর্তাদের বক্তব্য, ট্যাক্সির বেয়াদবি নিয়ে হইচই হলে কড়া হয় প্রশাসন। দিন পনেরোর মধ্যেই ফের যে-কে সেই। ঢিলেঢালা ভাব ফিরে আসে প্রশাসনের অন্দরে। অথচ, পুলিশি নজরদারি কড়া হলে যে ট্যাক্সির বেয়াদবি বন্ধ করা যায়, তা মানছেন প্রশাসনের তাবড় কর্তারাই। কড়াকড়ি যে বেশি দিনের নয়, তা জানেন ট্যাক্সিচালকেরাও। সে কারণে তাঁরাও প্রশাসনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে অবাধে চালিয়ে যান প্রত্যাখ্যান আর গুন্ডামি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

taxi refusal taxi bullying sayani bhattacharya
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE