ঋতব্রত চন্দ
এক সময়ে ডান হাত দিয়ে ঝড়ের বেগে লিখতে পারত সাউথ পয়েন্ট স্কুলের ছাত্র ঋতব্রত চন্দ। গত বছর এক দুর্ঘটনায় চোট পাওয়ার পরে টানা দশ মিনিট লিখলেই সেই হাত ফুলে যায়। শুরু হয় অসহ্য যন্ত্রণা। তখন আঙুলও নাড়াতে পারে না সে। তবু রাইটার নিয়ে পরীক্ষা দিয়ে সিবিএসই-র দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ডের পরীক্ষায় ৮৮.৪ শতাংশ নম্বর পেয়েছে ঋতব্রত। তা সত্ত্বেও আফশোস যাচ্ছে না তার। ফোনে সে বলল, “শুধু মনে হচ্ছে, ইস যদি নিজের হাতে লিখতে পারতাম। তা হলে আরও নম্বর পেতাম। রাইটার নিয়ে পরীক্ষা দিতে তো অভ্যস্ত নই।”
দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল গত বছরের জানুয়ারি মাসে, স্কুলে হ্যান্ডবল খেলতে গিয়ে। ঋতব্রত জানায়, সে ছিল গোলকিপার। গোল বাঁচাতে গিয়ে ঝাঁপ দেওয়ায় ডান হাতে চোট পায়। হাত কিছুটা ফুলে যায়। মা মৌসুমীদেবী বলেন, ‘‘ওকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার পরে জানা যায়, হাত ভাঙেনি। হাতের ফোলা কমানোর কিছু ওষুধ দেন চিকিৎসক। এর কিছু দিন পরেই ওই হাতে হঠাৎ অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয়। তড়িঘড়ি চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে তিনি এমআরআই করতে বলেন। এমআরআই করে জানা যায়, ওর ডান হাতের অনেকগুলো ধমনীতে চোট লেগেছে। চিকিৎসকেরা জানান, ওর ‘ডিপ ভেন থ্রম্বোসিস’ হয়েছে।’’
মৌসুমীদেবী জানান, অবস্থা ক্রমেই খারাপ হচ্ছিল। হাতে কিছু ক্ষণ কলম ধরে থাকলেই যন্ত্রণা হচ্ছিল। ঋতব্রতকে দিল্লির এমস-এ নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও কোনও আশার আলো দেখাতে পারেননি চিকিৎসকেরা। বরং এমস জানিয়ে দেয়, হাতের আরও কিছু ধমনী জখম হয়েছে। বেশ কিছু অংশ দিয়ে রক্ত চলাচলও ব্যাহত হচ্ছে।
এ দিকে, দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ডের পরীক্ষা এগিয়ে আসছিল। ঋতব্রত জানায়, প্রথমে সে ভেবেছিল পরীক্ষা এ বার আর দিতে পারবে না। তার কথায়, ‘‘মনে হল, পেনই যখন ধরতে পারছি না, পরীক্ষা দেব কী ভাবে? পরে মনে হল, বছরটা নষ্ট করব কেন? বরং রাইটার নিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করি।’’
শেষ পর্যন্ত তা-ই করেছে সে। ঋতব্রতর কথায়, ‘‘এত দিন নিজের হাতে লিখে পরীক্ষা দিয়েছি। রাইটার নিয়ে পরীক্ষা দিতে গিয়ে অনেক বার হোঁচট খেয়েছি। মনে হচ্ছিল, যা বললাম, ঠিক মতো লিখতে পারলেন তো? আমি বিজ্ঞানের ছাত্র। ফিজিক্সের বেশ কিছু বিষয় আমি নিজের হাতে যত ভাল করে লিখতে পারতাম, আমি বলার পরে রাইটার কি সে ভাবে লিখতে পারলেন? এটাই মনে হত সব সময়ে।’’
শেষ পর্যন্ত ৮৮.৪ শতাংশ নম্বর পেয়ে খুশি ঋতব্রত। ভবিষ্যতে সে অর্থনীতি নিয়ে পড়তে চায়। এ দিন পরীক্ষার ফল জানার পরে বাড়িতে খুশির হওয়া। মৌসুমীদেবী বললেন, ‘‘নিজের হাতে লিখলে হয়তো আরও ভাল করত। কিন্তু যে প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে পরীক্ষা দিয়েছে, তাতে ওর এই ফলে আমরা খুব খুশি। ওইটুকু ছেলের মনের জোর দেখে আমরা অবাক।’’ আর ঋতব্রত বলছে, ‘‘আশা করি, হাতটা দ্রুত ঠিক হয়ে যাবে। সামনে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষার যে পরীক্ষা দেব, আবার নিজের হাতেই লিখব। তখন আবার এই ডান হাতেই লেখার ঝড় উঠবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy