Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ম্যারাথনে পা মিলিয়েই জয়ী ওঁরা

‘‘ঠাকুমা আরও জোরে। সবাই যে এগিয়ে গেল!’’ 

 অদম্য: উৎসাহের কাছে হার মেনেছে বয়স। ম্যারাথনে শামিল ১০২ বছরের রতনবালা মাইতি। রবিবার, গার্ডেনরিচে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

অদম্য: উৎসাহের কাছে হার মেনেছে বয়স। ম্যারাথনে শামিল ১০২ বছরের রতনবালা মাইতি। রবিবার, গার্ডেনরিচে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

‘‘ঠাকুমা আরও জোরে। সবাই যে এগিয়ে গেল!’’
নাতনির এই চিৎকার শুনেই আটপৌরে ভাবে পরা শাড়ি সামলে হাঁটার গতি কিঞ্চিৎ বাড়িয়ে দিলেন বছর পঁচাশির শান্তি লাহা। ষাটোর্ধ্বদের জন্য আয়োজিত এক ম্যারাথন প্রতিযোগিতায় প্রথমে খানিকটা পিছিয়েই পড়েছিলেন ছাপা শাড়ির উপরে টি-শার্ট, টুপি, কেডস পরা শান্তিদেবী। নাতনির চিৎকারেই সম্বিৎ ফেরে তাঁর। তার পরেই জোর কদমে এগিয়ে চলা।
রবিবার গার্ডেনরিচের একটি ফুটবল ক্লাবের আয়োজিত চতুর্থ বছরের ওই ম্যারাথনের অন্যতম আকর্ষণ ছিলেন ১০২ বছরের রতনবালা মাইতি। ম্যারাথনের প্রথম বছর থেকেই এর নিয়মিত প্রতিযোগী তিনি। রামনগর মোড় থেকে অ্যাসবেস্টস মোড়, পাহাড়পুর রোড, বাঁধা বটতলা মোড়, ফতেপুর দ্বিতীয় সরণি হয়ে খেয়ালি খেলাঘর মাঠ পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার রাস্তা একবারও না থেমে গটগটিয়ে হেঁটে গেলেন শতবর্ষ পার করা, স্থানীয় এই বৃদ্ধা! আর পুরো সময়ে হাততালি দিয়ে তাঁকে উৎসাহ যুগিয়ে গেলেন রাস্তায়-বাড়ির বারান্দায় জড়ো হওয়া অগণিত দর্শক। কেউ কেউ আবার ব্যস্ত রইলেন হাঁটতে থাকা রতনবালাদেবীর ছবি তুলতে। এই বয়সেও কোনও সাহায্য ছাড়া সেঞ্চুরি পেরোনো বৃদ্ধাকে এ ভাবে হাঁটতে দেখে অবাক অনেকেই। তাঁদের বিস্ময়, ‘‘এই বয়সেও এতটা পথ এ ভাবে হাঁটছেন কী করে!’’ কিন্তু হাঁটা থামাননি রতনবালাদেবী। বরং রাস্তার দু’ধারে থাকা দর্শককে দেখে হাত নেড়ে অভিবাদন জানিয়েছেন। তাঁকে উৎসাহ দিতে এ দিন সঙ্গে হেঁটেছেন তাঁর ছেলে মানিকলাল মাইতিও। বয়স ৭৮ বছর। শুধু কি ম্যারাথন বলেই হাঁটতে এসেছেন? রতনবালাদেবীর উত্তর, ‘‘রোজ ভোর ৪টেয় উঠে উঠোনে জল দিয়ে হাঁটতে বেরোই। আর আগেও তিন বছর আমি হেঁটেছি।’’ প্রতিযোগীদের দলে ছিলেন ৯১ বছরের বাদলচন্দ্র হালদারও। লাঠি হাতে অন্যদের সঙ্গে দিব্যি পাল্লা দিয়েছেন তিনি। এটা তাঁর তৃতীয় ম্যারাথন।
তবে রতনবালাদেবী বা বাদলবাবুর মতো শুধু ম্যারাথনে হেঁটেই খুশি নন শান্তিদেবী। কেডস্‌ পরে হেঁটে দশম স্থানে ম্যারাথন শেষ করে এ দিন বেশ মনমরাই দেখিয়েছে অশীতিপর এই বৃদ্ধাকে। গত দু’বছর চটি পরে বাজিমাত করেছিলেন তিনি। ম্যারাথনে গত বছর দ্বিতীয় হয়েছিলেন, তার আগের বছর এক্কেবারে প্রথম! কিন্তু এ বছর থেকেই উদ্যোক্তারা নিয়ম করে দিয়েছিলেন, ১৯৭ জন ষাটোর্ধ্ব প্রতিযোগীদের প্রত্যেককে হাঁটতে হবে কেডস্‌ পরেই। প্রতিযোগিতার শেষে তাই নাতনি সায়নীর কাছে শান্তিদেবীর আক্ষেপ, ‘‘পরের বছর থেকে আর কেডস্ নয়, চটিই পরব। কেডস্ পরে হাঁটতে অসুবিধা হয় যে!’’
কিন্তু এমন ম্যারাথন কেন? উদ্যোক্তাদের তরফে প্রবীর দাস বলছেন, ‘‘এলাকার অনেক বয়স্ককেই দেখা যায় প্রাতর্ভ্রমণে বেরোতে। গ্রীষ্ম, বর্ষা কিংবা শীত— কখনওই প্রাতর্ভ্রমণ বাদ দেন না তাঁরা। তাই তাঁদের উৎসাহ দিতে এবং সকলকে নিয়ে একটু আনন্দের জন্যই এই আয়োজন।’’ তবে শুধু স্থানীয় বয়স্কেরাই নন, মেদিনীপুর, উত্তর ২৪ পরগনা থেকে গার্ডেনরিচে আত্মীয়ের বাড়িতে এসেও এই ম্যারাথনে যোগ দেন অনেকে। পুজোর পর থেকে অনেকে আবার এর জন্যে রীতিমতো প্র্যাকটিস করা শুরু করেন।
ম্যারাথন-যুদ্ধে জিততে হবে যে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Woman Marathon Centurion
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE