Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

শিশু বিক্রি চক্রের হদিস

কী ভাবে চলত সন্তান বিক্রির এই কর্মকাণ্ড? পুলিশি তদন্তে প্রকাশ, স্ত্রী সন্তানসম্ভবা হলেই হবু মা-বাবা ঠিক করে ফেলতেন, কার কাছে বিক্রি করা হবে শিশুটি। পুলিশ জানায়, ওই দম্পতির বছর দশেকের একটি ছেলে রয়েছে। তবে তার পরে জন্মানো দু’টি মেয়ে এবং সদ্যোজাত এই ছেলে-সহ তিন শিশুকে বিক্রি তাঁরা মসৃণ ভাবেই সেরে ফেলেছিলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৭ ০০:৪০
Share: Save:

ঠিক যেন পেশাদার মা-বাবা! সন্তানের জন্ম দিলেই নগদ প্রাপ্তির হাতছানি। তাই বছর বছর সন্তানের জন্ম দিতে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন মানিকতলার দাস দম্পতি। কলকাতার সাম্প্রতিক শিশু চুরি-কাণ্ডের তদন্তে এমনই তথ্য পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি পুলিশের।

পুলিশ সূত্রে খবর, গত শনিবার দাস দম্পতির আড়াই মাসের এক ছেলে বিক্রি হয়। আগের বছর জন্মানো একটি মেয়েকেও বিক্রি করেন তাঁরা। কিন্তু পুলিশ জানায়, দুই মেয়ের পরে ছেলে হওয়ায় এ বার খানিক দ্বিধায় পড়েছিলেন সঞ্জীব দাস। কিন্তু বাচ্চা বিক্রির ‘কথা দেওয়া’ ছিল, তাই শিশুর মা ঝর্না স্বামীর অনুরোধ উড়িয়ে দেন বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। এক আত্মীয়া তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে শুক্রবার ধরা পড়েন তাঁরা।

পুলিশের দাবি, শিশু বিক্রির এই ঘটনার সঙ্গে একটি বড়সড় চক্রের যোগ আছে। তাদের মধ্যে আরজিকর হাসপাতালের এক আয়াও আছেন। ডলি শেঠ নামে ওই আয়া ও তাঁর ছেলে দেবজিৎকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জেনেছে, কলকাতার দুঃস্থ দম্পতিদের নানা টোপ দিয়ে ওই চক্রটি কাজে লাগাতেন তাঁরা।

পুলিশ জানায়, নিঃসন্তান দম্পতিদের কাছে পৌঁছতে এই চক্রের ডালপালা ছড়িয়ে পড়েছে রাজ্য জুড়েই। অভিযুক্ত চক্রটির সঙ্গে জড়িত আরও তিন জনকেও চিহ্নিত করা হয়েছে। ডলির মেয়ে প্রিয়াঙ্কা শেঠের যদিও দাবি, সঞ্জীব তাঁদের আত্মীয়। তিনি নিজেই ডলির কাছে কান্নাকাটি করে বাচ্চাদের গতি করতে বলেন। ডলি ও দেবজিৎকে ফাঁসানো হচ্ছে।

কী ভাবে চলত সন্তান বিক্রির এই কর্মকাণ্ড? পুলিশি তদন্তে প্রকাশ, স্ত্রী সন্তানসম্ভবা হলেই হবু মা-বাবা ঠিক করে ফেলতেন, কার কাছে বিক্রি করা হবে শিশুটি। পুলিশ জানায়, ওই দম্পতির বছর দশেকের একটি ছেলে রয়েছে। তবে তার পরে জন্মানো দু’টি মেয়ে এবং সদ্যোজাত এই ছেলে-সহ তিন শিশুকে বিক্রি তাঁরা মসৃণ ভাবেই সেরে ফেলেছিলেন। ছ’বছরের মধ্যে জন্মেছিল এই তিন সন্তান। এর মধ্যে শেষ দু’টি গত দু’বছরে। পুলিশ সূত্রের খবর, সাদা কাগজে মা-বাবাকে সই করিয়ে শিশুদের বিক্রি করত চক্রটি।

পুলিশ সূত্রে খবর, গাড়িচালক সঞ্জীব ও স্ত্রী ঝর্না, প্রথম মেয়েটি জন্মানোর পরে ঠিক করেন বিক্রি করে দেবেন। কারণ তাঁরা মেয়ে চান না। এর পরে লোভ তাঁদের পেয়ে বসে। সেই সঙ্গে শিশু বিক্রিতে জড়িত চক্রটির চাপও কাজ করত বলে পুলিশের দাবি। প্রথম মেয়েটির জন্য ২৫ হাজার টাকা এবং পরের মেয়ে ও ছেলের জন্য ৫০ হাজার করে পেয়েছিলেন দাস দম্পতি। কিন্তু লাভের বড় অংশই শিশু বিক্রি চক্রের দালালেরা খেয়ে যেত বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, এক বছর আগে জন্মানো দাস দম্পতির মেয়েটিকে এ দিন বেলগাছিয়া থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। আগের মেয়েটির হদিস এখনও মেলেনি। মার্চে জন্মানো ছেলেটিও উদ্ধার হয়নি এখনও। তবে পুলিশের সন্দেহ, তাকে মালদহে বিক্রি করা হয়েছে। তার খোঁজে পুলিশের একটি দল শনিবার মালদহ গেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE