Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

দু’বার আগুনেও হুঁশ ফেরেনি ২২ তলা বাড়ির

দেওয়াল জুড়ে ‘নো স্মোকিং জোন’ লেখা নোটিস! তবে তার পরোয়া নেই। বিপদ চিন্তা ঝেড়ে ফেলে চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারের সিঁড়িতে দাঁড়িয়েই ‘সুখটানে’ ব্যস্ত কর্মীরা। 

নো- স্মোকিং জোনেই অবাধে চলে ধূমপান (নীচে)। বুধবার, চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনালে। নিজস্ব চিত্র

নো- স্মোকিং জোনেই অবাধে চলে ধূমপান (নীচে)। বুধবার, চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনালে। নিজস্ব চিত্র

মেহবুব কাদের চৌধুরী
শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:৪৬
Share: Save:

দেওয়াল জুড়ে ‘নো স্মোকিং জোন’ লেখা নোটিস! তবে তার পরোয়া নেই। বিপদ চিন্তা ঝেড়ে ফেলে চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারের সিঁড়িতে দাঁড়িয়েই ‘সুখটানে’ ব্যস্ত কর্মীরা।

একদা পূর্ব ভারতে অন্যতম বহুতল হিসাবে পরিচিত চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারের উচ্চতা ৯১ মিটার। ১৯৭৫ সালে তৈরি এই বহুতলে ৩৩৪টি অফিস রয়েছে। প্রায় সাত হাজার কর্মী সেখানে কাজ করেন। ১৯৯১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি এই ভবনে প্রথম আগুন লাগে। তখন বহুতলটির অগ্নি-নির্বাপক ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে সরকারের তরফে কমিটিও গঠিত হয়েছিল। অভিযোগ, সেই কমিটির কোনও সুপারিশ বাস্তবায়িত হয়নি। যেমন, বিপদের সময় বা়ড়ির পিছনের দিক থেকে বেরোনোর সিঁড়ি বা বহুতলের বিভিন্ন অংশে আগুন নেভানোর জন্য প্ল্যাটফর্ম তৈরির সুপারিশ আজও কার্যকর হয়নি। ২০১৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর ফের আগুন লাগে এই বহুতলে। প্রায় পাঁচ ঘণ্টার চেষ্টায় সে বার আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা গিয়েছিল।

দু’বার আগুন লাগার পরেও চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার যে এখনও সুরক্ষিত নয়, তা বুধবার বাইশ তলার প্রতিটি আনাচকানাচ ঘুরে ফের পরিষ্কার হল। অগ্নি-সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার না থাকার জন্য কর্মীরা বিল্ডিং কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছেন। অন্য দিকে কর্তৃপক্ষের দাবি, এক শ্রেণির কর্মীর জন্যই অগ্নি-সুরক্ষায় খামতি রয়ে গিয়েছে।

বুধবার ওই বহুতলে ঘুরে দেখা গেল, এক থেকে বাইশ তলা পর্যন্ত বিভিন্ন সিঁড়িতে পড়ে রয়েছে আধপোড়া সিগারেট, বিড়ি, ফাঁকা দেশালাই ও সিগারেটের বাক্স। এ দিন দুপুরে ওই ভবনের কুড়ি তলার এক কোণায় বেশ কিছু কর্মীকে সিগারেট খেতে দেখা গেল। নিষিদ্ধ জানা সত্ত্বেও কেন ধূমপান করছেন? এই প্রশ্ন শুনতেই ওই কর্মীরা কোনও উত্তর না দিয়েই কার্যত পালিয়ে যান। ভবনের এক নিরাপত্তারক্ষীর কথায়, ‘‘আমরা বহু বার কর্মীদের সতর্ক করেছি। কিন্তু ওঁরা সচেতন না হলে আমরা তো জোর করতে পারি না।’’

চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, সিঁড়িতে সিগারেট খাওয়ার জন্য মাস কয়েক আগে এক কর্মীকে সংশ্লিষ্ট অফিস কর্তৃপক্ষ বরখাস্ত করেছেন। বহুতলের সব ক’টি অফিস কর্তৃপক্ষের মানসিকতা যদি একইরকম কঠোর হত তা হলে সিঁড়িতে পো়ড়া সিগারেট, বিড়ি পড়ে থাকত না।

শনিবার মাঝ রাতে বড়বাজারের বাগড়ি মার্কেটে লাগা আগুন বুধবার রাত পর্যন্তও পুরো নেভেনি।

অতীতেও এ শহর একাধিক বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ড দেখেছে। দু’বার নিজেদের অফিস ভবনেই আগুনের ভয়াল স্মৃতি এখনও তাড়া করে দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা রমেন সাউকে। তিরিশ বছর ধরে চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারের কুড়ি তলার এক সংস্থায় কাজ করছেন তিনি। তিনি বললেন, ‘‘পাঁচটি লিফটের চারটিই চলতে চলতে মাঝে মধ্যে আটকে পড়ে। দিন পনেরো আগে কুড়ি তলা থেকে একটি লিফট ছিড়ে সটান ছ’তলায় এসে পড়েছিল। বরাতজোরে অনেকে বেঁচে গিয়েছিলেন। বছর কয়েক আগে কুড়ি মিনিট লিফট আটকে থাকায় এক জন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। কর্তৃপক্ষকে বারবার লিফট সংস্কার করতে বলেও লাভ হয়নি।’’ এ দিন বহু কর্মীই অবশ্য লিফট নিয়ে নিজেদের ক্ষোভের কথা জানান।

এ দিন চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনাল বিল্ডিংয়ের বিভিন্ন তলায় গিয়ে দেখা গেল, বেশ কিছু অগ্নি-নির্বাপক গ্যাস সিলিন্ডারের কার্যকালের মেয়াদ পেরিয়ে গিয়েছে। কোথাও আবার বিভিন্ন তার বিপজ্জনক ভাবে ঝুলছে। কোথাও লিফটের পাশে ডাঁই করে রাখা কাঠের সরঞ্জাম-দাহ্য পদার্থ।

বহুতলের অগ্নি-সুরক্ষা ব্যবস্থায় এখনও যে খামতি রয়েছে, তা স্বীকার করে নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। ছ’তলায় রয়েছে চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারের প্রশাসনিক অফিস। ওই অফিসের এক কর্মীর অভিযোগ, ‘‘পুরো বিল্ডিংয়ের মালিক রয়েছেন প্রায় ২৫০ জন। তাঁদের মধ্যে ৬-৭ জনের বাধায় নতুন করে লিফট বসানো থেকে শুরু করে ইলেকট্রিক প্যানেল গড়ার কাজ সম্ভব হচ্ছে না। পুরো বিষয়টি পুলিশ, রাজ্য সরকারকে জানানো হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE