অবিশ্বাস্য: মায়ের কোলে গুনগুন। নিজস্ব চিত্র
পাঁচ তলা থেকে পড়েও বেঁচে!
গল্প নয়, এটা বাস্তব। আর এই ভাবে বেঁচে যাওয়া আড়াই বছরের শিশুটিকে দেখতে ভিড় ভেঙে পড়েছে এয়ারপোর্ট আড়াই নম্বর গেটের মতিলাল কলোনির ‘পার্পল গ্লো’ আবাসনে। আনন্দে আবাসনের ৫৮টি ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা বিশেষ উৎসবের আয়োজন করেছেন। সেখানে থাকছে নাচ-গান-খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা।
দিন পাঁচেক হাসপাতালে কাটিয়ে রবিবার রথের দিন আড়াই বছরের গুনগুন বাড়ি ফেরার পর হইহই করে মিষ্টিমুখ হয়েছে তার ফ্ল্যাটে এবং পাড়ায়। চিকিৎসকেরা পর্যন্ত বলছেন, পাঁচ তলা থেকে নীচে পড়ে এক বোতল রক্তও লাগল না, মাত্র পাঁচ দিনের মধ্যে আহত হাসপাতাল থেকে ছুটি পেয়ে বাড়ি চলে গেল, এমন ঘটনা বিরল।
অ্যাপোলো গ্লেনেগেলস হাসপাতালের চিকিৎসকেরাই জানিয়েছেন, পাঁচ তলার উপর থেকে গুনগুন পড়েছিল একটি পাঁচিলের উপরে। তবে উপুর হয়ে। উপুর হয়ে পড়ায় মাথায় তেমন আঘাত লাগেনি। আর পাঁচিল থকে নীচে পড়ার সময় পড়ার সময় চিৎ হয়ে পড়েছিল মেয়েটি। কিন্তু তার মাথা বাঁচিয়ে দিয়েছে আবাসনের নীচে ছড়িয়ে থাকা কিছু থার্মোকলের প্যাকেট। অত উঁচু থেকে উপুড় হয়ে পড়াতেও কী ভাবে প্রায় অক্ষত থাকল গুনগুন? ওর তো বুকের পাঁজর ভেঙে যাওয়ার কথা, ফুসফুসও ফেটে যেতে পারত।
আরও পড়ুন:
শরিকি চাপানউতোর, তপ্ত বিহার রাজনীতি
হাসপাতালে গুনগুনের চিকিৎসক শিশু শল্য চিকিৎসক বৈশালী শ্রীবাস্তব ও ইনটেনসিভ কেয়ার চিকিৎসক অভিষেক পোদ্দার জানিয়েছেন, শিশুটির ফুসফুস, প্লীহা, অন্ত্রে ধাক্কা লেগে শরীরের ভিতরে জায়গায় জায়গায় রক্তক্ষরণ হয়েছে। কাঁধের হাড়, শিরদাঁড়ার একটি হাড় ভেঙেছে। কিন্তু কোনও আঘাতই খুব গুরুতর নয়। ফিজিক্যাল মেডিসিন চিকিৎসক রাজেশ প্রামাণিক, মৌলিমাধব ঘটকদের মতে, বাচ্চাদের শরীরে হাড় নরম, আঘাত প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং স্থিতিস্থাপকতা বেশি। ফলে তাদের চোট লাগার আশঙ্কা কম থাকে। তবে পাঁচ তলা থেকে পড়ে এমন ভাবে বেঁচে যাওয়াও বিরল।
এই বারান্দার গ্রিল গলেই পড়ে গিয়েছিল গুনগুন।
সে দিনের ঘটনার কথা মনে করলে এখনও কেঁপে উঠছেন তার বাবা-মা সঙ্গম আর সঙ্গীতা গুপ্ত। আদতে জামশেদপুরের বাসিন্দা গুপ্ত পরিবার এই ফ্ল্যাটে এসেছেন বছর পাঁচেক আগে। গত ২১ জুনের কথা। সকাল এগারোটা নাগাদ ফ্ল্যাটে খেলছিল গুনগুন। সঙ্গম আর সঙ্গীতাও ছিলেন। সঙ্গম জানান, ‘‘ফ্ল্যাটের দক্ষিণ দিকের ছোট বারান্দাটা গ্রিল দিয়ে ঘেরা। গ্রিলের একটা অংশ জামাকাপড় শুকোনোর জন্য খোলা যায়। সে দিন ওই অংশটা যে খোলা রয়েছে, তা আমরা খেয়াল করিনি। বারান্দার বেসিনে মুখ ধুচ্ছিলাম। কোন ফাঁকে গুনগুন নিঃশব্দে এসে গ্রিল বেয়ে উঠে ওই খোলা অংশে পৌঁছে গিয়েছে।’’ ঘটনার কথা বলতে-বলতে মুখ সাদা হয়ে যাচ্ছিল সঙ্গমবাবুর। ‘‘হাত বাড়িয়ে ধরার আগেই চোখের সামনে আমার মেয়ে গ্রিলের ওই খোলা জায়গাটা দিয়ে পড়ে গেল। আমার চোখের সামনে সব কেমন ধূসর হয়ে যাচ্ছিল। কিছু শুনতে পাচ্ছিলাম না।’’
পড়ার সময়ে এই পাঁচিলে ধাক্কা খায় সে।
সঙ্গমবাবুর আর্তনাদ শুনে আশপাশের ফ্ল্যাটের লোক ছুটে এসেছিলেন। গুনগুন ততক্ষণে আছড়ে পড়েছে নীচের পাঁচিলের উপর। সেখান থেকে মাটিতে। নীচে বসেছিলেন নিরাপত্তাকর্মী শঙ্কর ভৌমিক। তাঁর কথায়, ‘‘হঠাৎ ধুপ করে ভারী কোনও জিনিস পড়ার আওয়াজ পেলাম। উপর থেকে চিৎকারও শুনলাম। তাড়াতাড়ি গিয়ে দেখি, বাচ্চাটা অজ্ঞান হয়ে পড়ে রয়েছে।। কোলে করে উঠিয়ে আনলাম। ও বেঁচে ফিরেছে এখনও ভাবতে পারছি না।’’
ছোট্ট গুনগুন এখন বাড়ি ফিরে দিব্যি গান গাইছে, ছড়া আওড়াচ্ছে আর লোকজন দেখলেই হাত তুলে আশ্বাসের ভঙ্গিতে আধো গলার বলছে— ‘‘সব থিক আছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy