মাঝখানে একটা ছোট্ট মেয়ে। দু’পাশে দু’জন। সাদা কাগজে মা-বাবার সঙ্গে একটি ছোট্ট মেয়ের ছবি শিশুটি এঁকে চলেছে সারাক্ষণ। ছড়া বলতে বললেই, ‘জনি, জনি, ইয়েস পাপ্পা’ কলকলিয়ে উঠছে। সকলে হাততালি দিতেই এ বার হাত-পা নেড়ে ‘টুইঙ্কল টুইঙ্কল লিট্ল স্টার’-এর সঙ্গে ঝলমলিয়ে উঠল সে। সব সময়েই মুখ জুড়ে হাসি। তাকে দেখে কে বলবে, শুক্রবার থেকে অনাথ আশ্রমই একমাত্র ঠিকানা এই একরত্তি মেয়ের!
বছর দুয়েক আগেই শিশুটির বাবা মারা গিয়েছেন। মা-ও চলে গিয়েছেন অন্যত্র। পিসি পূর্ণিমা দাসের কাছ থেকে মেয়েটিকে নিয়ে আসে টিটাগড়ের বাসিন্দা শ্যামল সেন ও তার স্ত্রী সন্ধ্যা সেন। তারা জানিয়েছিল, আপন সন্তানের থেকেও বেশি যত্নে তাকে মানুষ করবে। কিন্তু গত শুক্রবার ছ’বছরের সেই শিশুকন্যার গোপনাঙ্গে লঙ্কার গুঁড়ো ঠেসে দেয় পালিকা মা-ই। শিশুটির ‘অপরাধ’, ঘুমের মধ্যে সে মাঝেমধ্যে বিছানা ভিজিয়ে ফেলে।
আর জি কর হাসপাতালে চিকিৎসার পরে এ যাত্রায় বেঁচে গিয়েছে শিশুটি। তার পিসি পূর্ণিমাদেবীই সব জেনে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন ‘চাইল্ড লাইন’-এ। অভিযোগ পেয়ে টিটাগড় থানার পুলিশ ওই দম্পতিকে গ্রেফতার করেছে। শ্যামল জামিন পেলেও সন্ধ্যাকে পাঠানো হয়েছে জেলে। পূর্ণিমাদেবী এ দিন বলেন, ‘‘আমরা খুব গরিব। আমি আয়ার কাজ করি। আমার পক্ষে ওকে দেখভাল করা সম্ভব নয়।’’ ‘চাইল্ড লাইন’-এর উত্তর ২৪ পরগনা জেলার কো-অর্ডিনেটর শিবাশিস দাস বলেন, ‘‘মেয়েটির যেহেতু কেউ নেই, তাই আমরা তাকে সরকারি হোমে রাখার জন্য শিশুকল্যাণ কমিটির কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম।’’ শুক্রবার ‘চাইল্ড লাইন’ কর্তৃপক্ষ এবং টিটাগড় থানার পুলিশ মেয়েটিকে শিশুকল্যাণ কমিটির হাতে তুলে দেন। কমিটি মেয়েটিকে মধ্যমগ্রামের একটি আবাসিক হোমে রাখার ব্যবস্থা করে। শিশুকল্যাণ কমিটির চেয়ারম্যান ( জেলা) অরবিন্দ দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘এমন ফুটফুটে একটি শিশুর সঙ্গে এই ধরনের নির্মম ঘটনায় আমরা স্তম্ভিত। শিশুটির শারীরিক চিকিৎসার পাশাপাশি তার মানসিক চিকিৎসাও গুরুত্ব দিয়ে করা হবে। আমরাও প্রতিনিয়ত বিষয়টি নজরে রাখব।’’
এর পাশাপাশি প্রশ্ন উঠেছে, দত্তক নেওয়ার পদ্ধতি এবং পুলিশের সঙ্গে শিশুকল্যাণ কমিটির সমন্বয় নিয়েও। এ ব্যাপারে অরবিন্দবাবু বলেন, ‘‘মা-বাবার মানসিক অবস্থা যাচাই করে তবেই কোনও শিশুকে দত্তক দেওয়া হয়। এই পদ্ধতি এখন যথেষ্ট বিজ্ঞানসম্মত। সরকারি ভাবে যে সব শিশুকে দত্তক দেওয়া হয়েছে, তারা কেমন আছে, এই ঘটনার পরে তা-ও আমরা স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে খোঁজ নিয়ে দেখব।’’
এখানে একটি শিশুর ভবিষ্যতের প্রশ্ন জড়িয়ে। সেখানে টিটাগড় থানা নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে কেন শিশুকল্যাণ কমিটিকে বিষয়টি জানাল না? অরবিন্দবাবু বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়ে পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে তৎপর হয়েছে। পালিকা মায়ের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা এবং শিশুটির চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আবার ঘটলে সরাসরি কমিটিকে জানানোর জন্য আমরা পুলিশকে বলেছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy