প্রতিবাদ: এ বার থামুক শিশু নির্যাতন। পোস্টারে সরব অভিভাবকেরা। শুক্রবার, জিডি বিড়লা স্কুল চত্বরে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
অপরাধীকে অনেক সময়ে পশুদের সঙ্গে তুলনা করা হয়। কিন্তু ভেবে দেখলে, পশুদের জীবনযাপনেও কিছু সহজাত নিয়ম আছে, যা তারা কদাচিৎ লঙ্ঘন করে। আহার-বিহার-যৌনতা, সব কিছুই তাদের প্রাকৃতিক ভাবে নিয়ন্ত্রিত। কোনও গরু, কুকুর, বাঘ কখনও মিথ্যে কথা কয় না, চুরি করে না, তাদের ধর্ষণ বা বলাৎকারও নেই। সুতরাং, ব্যবহারিকতায় তারা বরং মানুষের চেয়ে অনেক উৎকৃষ্ট। নিকৃষ্টতার প্রতিযোগিতায় মানুষ তাদের অনায়াসে হারিয়ে দেবে।
জি ডি বিড়লা স্কুলে যে মর্মভেদী ঘটনার কথা শুনছি, তার সত্যতা অবশ্যই যাচাই করা হবে। যদি সত্যতা প্রমাণিত হয়, যদি যৌন বিকারগ্রস্ত মানুষের স্বরূপ প্রকাশ পায়, তা হলে আমাদের ভয় ও অসহায়তা সীমানা ডিঙিয়ে যাবে। মানুষের কাছে তার সন্তানের চেয়ে প্রিয় ও মধুর আর কী আছে? সন্তানের নিরাপত্তার এতটুকু হানি ঘটলে কাপুরুষও বাঘ হয়ে ফুঁসে ওঠে।
শিশুর ক্ষমতা নেই নিজেকে রক্ষা করার। সে দুষ্ট ও শিষ্টের পার্থক্য করতে শেখেনি, তার রিফ্লেক্স তীক্ষ্ণ নয়। তার চিন্তায় কল্পনার জগৎ, মায়াময়তা, নানা বিস্ময়। জীবনের কুৎসিত দিকগুলিকে সে চেনে না। তাই তাকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, চকলেট বা খেলনার লোভ দেখিয়ে চেনা-জানার গণ্ডির বাইরে টেনে নেওয়া যায়। ‘মা ডাকছে’ বললে সব শিশুই খেলা ছেড়ে ছুটে আসে। বলা হয়, শিশুরা পৃথিবীর ফুল। কিন্তু এমন রাক্ষসও আছে, ফুলকে দলিত করায় যার বীভৎস আনন্দ।
এই সমাজে শিশুরাই কিন্তু সব চেয়ে বেশি অরক্ষিত। এখনও শিশুদের নিরাপত্তার জন্য তেমন প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেই। অধিকাংশ স্কুলেই নজরদারির ব্যবস্থা অপ্রতুল। তার উপরে যদি রক্ষকই ভক্ষক হয়, তা হলে তো সোনায় সোহাগা।
আরও পড়ুন: যন্ত্রণায় ছটফট করা মেয়েকে কোলে নিয়েই থানায় দৌড়লেন বাবা-মা!
ওই দুই শিক্ষক যথার্থই এই জঘন্য অপরাধে অপরাধী কি না, তা আমরা জানি না। প্রকৃত তদন্ত হলে অবশ্যই সত্য উদ্ঘাটিত হবে। কিন্তু তখনও কি মানুষ স্বস্তির শ্বাস ফেলতে পারবে? কারণ, কোন মনুষ্যাকৃতির মধ্যে কোন ঘাতক লুকিয়ে আছে, কে জানে!
মানুষের চেতন মনের চেয়ে বহু বহু গুণ বড় হচ্ছে তার অবচেতন মন। সেখানে অনন্ত আলো-আঁধারিতে কত রহস্যময় বৃত্তি ও প্রবৃত্তির জন্ম হচ্ছে, তার হিসেব নেই। আমরা জানি, মানুষের ছয় রিপু। কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য। এই ছয় রিপুতেই কিন্তু মানুষের বিকার সীমাবদ্ধ নয়। এই রিপুরাও পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত ও মিলিত হয়ে নিত্যই নতুন নতুন রিপুর জন্ম দেয়। মানুষের অবচেতনে এই রাক্ষস-খোক্কসদের অবস্থান। কোন রিপু কখন কোন মানুষের ঘাড়ে সওয়ার হবে, তার তো কোনও নির্দেশিকা নেই। তাই মাঝে মাঝে মানুষের কৃত পাপ ও অপরাধ আমাদের স্তম্ভিত করে দেয়। অপরাধের ইতিহাসের পাতা ওল্টালে তাই গা শিউরে ওঠে, মনুষ্যজন্মকে ধিক্কার দিতে ইচ্ছে হয়।
জি ডি বিড়লার মতো সম্ভ্রান্ত স্কুলে যদি এ রকম ঘটনা সত্যিই ঘটে থাকে, তা হলে তা আমাদের সকলকেই কলঙ্কিত করেছে। তবে আমরা দেখেছি, শিশুদের উপরে যৌন নির্যাতন হলে শনাক্ত হওয়ার ভয়ে সাধারণত শিশুটিকে হত্যা করা হয়। এ রকম খবর আমরা প্রায়ই দেখতে পাই। এ ক্ষেত্রে সেটা অন্তত হয়নি। কিন্তু মেরে না ফেলা হলেও শিশুটি কিন্তু সারা জীবন এই ঘটনাজনিত ভয়, আতঙ্ক আর ঘেন্না থেকে সহজে মুক্তি পাবে না। এই ঘটনার রেশ কি শিশুটিকে সারা জীবনই বহন করতে হবে না?
কী হবে কে জানে! আমরা তো ভবিষ্যৎ দেখতে জানি না। শুধু জানি, আমরা ভাল নেই। একটুও ভাল নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy