পুরসভার জল এতটাই অপরিষ্কার, দেখাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বৃহস্পতিবার, গড়িয়ার কামডহরিতে। ছবি: শৌভিক দে
পুরসভার জলের উপরে ভরসা নেই। কেনা জল খেয়েও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাই কী জল খাবেন, তা ভেবেই কূলকিনারা করে উঠতে পারছেন না গড়িয়া কামডহরি পূর্বপাড়া রেল কো-অপারেটিভের বাসিন্দা শ্যামলী বসু।
মঙ্গলবার রাত থেকে পেটে ব্যথা শুরু হয় শ্যামলীদেবীর। সঙ্গে বমি। বুধবার পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে দেখে তিনি চিকিৎসকের দ্বারস্থ হন। চিকিৎসক তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিলেও শেষ পর্যন্ত তিনি হননি। বৃহস্পতিবার শ্যামলীদেবী বলেন, ‘‘বাড়িতে শুধু আমি ও আমার স্বামী থাকি। হাসপাতালে ভর্তি
হলে এ দিকটা কে সামলাবে। তাই চিকিৎসককে জানাই যে, বাড়িতেই চিকিৎসা করতে হবে। এখন আরও খারাপ কিছু হলে নিশ্চয়ই হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। কিন্তু কেনা জল খেয়েও যদি এমন হয়, তা হলে তো বুঝতে পারছি না কী জল খাব!’’
শ্যামলীদেবী জানাচ্ছেন, এমনিতে পুরসভার জলে বাড়ির বাসন মাজা, জামা-কাপড় কাচা-সহ অন্য কাজ হয়। বাইরে থেকে জল কিনেই খান। কিন্তু তাতেও শরীর খারাপের হাত থেকে নিস্তার না পাওয়ায় জল নিয়েই সংশয় তৈরি হয়েছে। শ্যামলীদেবীর কথায়, ‘‘বোতলে যে জল বিক্রি হয়, তা কিনে খাই। কিন্তু এ বার তো তার উপরেও ভরসা রাখা যাচ্ছে না।’’ শ্যামলীদেবী আরও জানালেন, সংক্রমণের খবর পেয়ে স্থানীয় পুরকর্মীরা বাড়িতে এসে খোঁজখবর করেছেন। বাড়ির জলের নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যাওয়ারও কথা বলেছেন। তাঁরা ওষুধ, ওআরএসও দিয়েছেন। শ্যামলীদেবী বলেন, ‘‘আজ পুরকর্মীরা এসে জানতে চাইছিলেন কী হয়েছে। তার পরে ওষুধ দিয়েছেন। প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি হতে বলেছেন।’’
প্রসঙ্গত, শ্যামলীদেবীর মতো কামডহরি পূর্বপাড়া রেল কো-অপারেটিভের আরও অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কলকাতা পুরসভার ১১১ নম্বর ওয়ার্ডের ওই জায়গায় নতুন করে আন্ত্রিকের সংক্রমণ ছড়িয়েছে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য, এই এলাকা শহরের আন্ত্রিকের মানচিত্রে নতুন সংযোজন! শুধু ওখানেই নয়, বিধানপল্লি, পঞ্চাননতলা-সহ একাধিক জায়গাতেও অসুস্থতার খবর পাওয়া গিয়েছে এ দিন।
আরও পড়ুন: নোটবন্দিতে পোয়াবারো অন্য মোদীর
ওই এলাকারই আর এক বাসিন্দা সোমনাথ মণ্ডলও অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। ওষুধ খাওয়ার পরে আপাতত খানিকটা সুস্থ তিনি। তবে সোমনাথবাবু ক্ষোভ উগরে দিলেন পুরসভার জলের উপরে। জানালেন, পুরসভা থেকে যে জল সরবরাহ করা হয়, তার ভিতরে নোংরা ভর্তি থাকে। সেই জল ভরসা করে ব্যবহার করা যায় না। সোমনাথবাবু বলেন, ‘‘পুরসভার জল ব্যবহার করব কী ভাবে! ও জলে তো নোংরা ভর্তি!’’ সোমনাথবাবুও জানালেন, এ দিন তাঁর বাড়িতেও পুরসভার কর্মীরা এসেছিলেন। সোমনাথবাবুর কথায়, ‘‘সোমবার অসুস্থ হয়েছিলাম। আর ওআরএস পাচ্ছি বৃহস্পতিবার!’’
স্থানীয় সিপিএম কাউন্সিলর চয়ন ভট্টাচার্য জানান, ১১১ নম্বর ওয়ার্ডের একাধিক এলাকাতেই আন্ত্রিক সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু পুরসভার গাফিলতির কারণে এখনও আক্রান্ত রোগীদের সম্পর্কে পুরো তথ্য পাওয়া যায়নি! কারণ, প্রথম থেকেই এ নিয়ে পুরসভার একটা গা-ছাড়া ভাব ছিল বলে অভিযোগ চয়নের। চয়নের কথায়, ‘‘প্রথম থেকে পুরসভার একটা ঢিলেমি থাকায় রোগীদের সম্পর্কে পুরো তথ্য পাওয়া যায়নি। কিন্তু সেই তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছি। জল যাতে ফুটিয়ে খাওয়া হয়, তা নিয়ে লাগাতার প্রচার চালাচ্ছি।’’ যদিও মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘ওই এলাকায় সেই অর্থে কোনও সংক্রমণের খবর আমাদের কাছে নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy