Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

উদ্বেগই সার, হুঁশ ফেরেনি মহানগরের

এক পশলা ভারী বর্ষণের পরেই প্রতিটি বাজার এলাকায় জলের সঙ্গে ভেসে আসছে প্লাস্টিক। তা গিয়ে পড়ছে নিকাশি নালার সামনে। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে নালার মুখ। জল আর নামছে না।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৭ ১৩:০০
Share: Save:

মেয়রের উদ্বেগই সার। প্লাস্টিক ব্যবহার নিয়ে তাঁর আবেদনে সাড়াই দিল না কলকাতা। আর প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে পুরসভাকেও কোনও অভিযানে নামতে দেখা গেল না।

কলকাতায় জল জমার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে প্লাস্টিক ব্যবহারকে দায়ী করে তোপ দেগেছিলেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছিলেন, পুলিশের সাহায্য নিয়ে বাজারে বাজারে অভিযান চালাবে পুরসভা। কিন্তু পুরসভার সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মী-অফিসারদের কাছে যেমন এই সংক্রান্ত কোনও নির্দেশিকা পৌঁছয়নি, তেমনই পুরসভার পক্ষ থেকেও পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি। তাই প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করতে কলকাতা পুরসভা কতটা দায়বদ্ধ, উঠেছে সেই প্রশ্ন।

আমজনতা প্লাস্টিকের ব্যবহার এতটুকু কমায়নি। দোকানদারেরাও নির্দ্বিধায় ক্রেতাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন প্লাস্টিকের প্যাকেট। নিষিদ্ধ (৫০ মাইক্রনের কম) প্লাস্টিকের ব্যাগ জমছে জঞ্জালের ভ্যাটে, নিকাশি নালার মুখে, গালিপিটে। এক পশলা ভারী বর্ষণের পরেই প্রতিটি বাজার এলাকায় জলের সঙ্গে ভেসে আসছে প্লাস্টিক। তা গিয়ে পড়ছে নিকাশি নালার সামনে। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে নালার মুখ। জল আর নামছে না।

মধ্য কলকাতার এক বাজার সমিতির কর্তা জানিয়েছেন, ব্যবসায়ী সমিতিগুলির কাছে প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করা সংক্রান্ত পুরসভার নির্দেশটি পরিষ্কার নয়। পুরসভা কিংবা পরিবেশ দফতরের তরফে সেই বিভ্রান্তি কাটানোর চেষ্টাও হয়নি কখনও। শহরের কোনও পরিবেশ আন্দোলনকারী সংগঠনও ওই বিভ্রান্তি কাটানোর জন্য তাদের কাছে আসেনি। পুরসভা ও পুলিশের যৌথ অভিযান শুরুর আগে ব্যবসায়ী সমিতিগুলিকে প্লাস্টিক সংক্রান্ত আইন সম্পর্কে যাতে ঠিকমতো অবহিত করা হয়, সেই আর্জি জানিয়েছেন বিভিন্ন বাজারের দোকানদারেরা।

দক্ষিণ কলকাতার একটি বাজারে ঘুরে দেখা গেল, মানুষ কিন্তু প্লাস্টিকের ব্যাগে আনাজ নিতেই বেশি উৎসাহী। ওই বাজারেই কয়েক দিন আগে একটি সংস্থা প্লাস্টিক ব্যাগ বর্জনের জন্য সচেতনতা-অভিযান চালিয়েছিল। ক্রেতাদের হাতে হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল চটের ব্যাগ। কিন্তু শুক্রবার গিয়ে দেখা গেল, যাঁরা সে দিন চটের ব্যাগ পেয়েছেন, তাঁদের অনেকের হাতেই একাধিক প্লাস্টিকের ব্যাগ। এর মধ্যেই বিভিন্ন বাজারে এক শ্রেণির ক্রেতা কিন্তু প্লাস্টিক ব্যাগ কখনই ব্যবহার করেন না। তাঁদের সংখ্যাটা ক্রমেই সংখ্যালঘু হয়ে পড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন উত্তর কলকাতার এক বাজারের এক দোকানদার।

প্লাস্টিকের ব্যাগ নিষিদ্ধ করা নিয়ে যাঁরা সরব, তাঁরা বলছেন, প্লাস্টিকের প্যাকেট বন্ধ হলে তার জায়গায় আসবে চটের ব্যাগ অথবা কাগজের ঠোঙা। চটের ব্যাগের ব্যবহার বাড়লে পশ্চিমবঙ্গের চটকলগুলি অন্তত বাঁচবে। কাগজের ঠোঙা বেশ কিছু পরিবারের জীবনধারণের মান বাড়াতে সাহায্য করবে। তবে অধিকাংশ মানুষই এ ব্যাপারে সচেতন না হওয়ায় প্লাস্টিক-বিরোধী আন্দোলন জোরদার হচ্ছে না বলে মনে করেন পরিবেশবিদেরা।

প্লাস্টিকের ব্যবহার ঠেকাতে পুলিশকে নিয়ে অভিযানের কথা মেয়র ঘোষণা করলেও কেন চুপচাপ বসে আছে পুরসভা? মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমি পরিবেশ দফতরের সঙ্গে এ ব্যাপারে বৈঠক করে কী ভাবে অভিযান হবে, তা ঠিক করব।’’ মেয়রের আশ্বাস, প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ হবেই। মেয়র পারিষদ (পরিবেশ) স্বপন সমাদ্দার বলেন, ‘‘মেয়র পারিষদের বৈঠক ডেকে শীঘ্রই আমরা প্লাস্টিকের ব্যবহার কী ভাবে বন্ধ করা যায়, তা ঠিক করব।’’

‘‘কিন্তু এ বছর যে ভাবে বৃষ্টি হচ্ছে কলকাতায়, তাতে অভিযান শুরু করতে যত দেরি হবে, ততই কিন্তু প্লাস্টিকে আরও বেশি করে নিকাশি নালার মুখ বন্ধ হতে থাকবে। ভাসবে শহর,’’ মন্তব্য কলকাতা পুরসভার এক নিকাশি-কর্তার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE