পরিবর্ত: বন্ধ টিভি। খেলা দেখতে তাই ভরসা মোবাইলই। শনিবার, দমদমের শীলবাগানের এক ক্লাবে। ছবি: সুমন বল্লভ
শুক্রবার রাতে মিস হয়েছে রোনাল্ডোর ফ্রি-কিক। শনিবার সন্ধ্যায় বিশ্বকাপের ময়দানে মেসির প্রথম নামাও দেখা হল না শহরের সেই ফুটবলপ্রেমীদের। কেব্ল টিভিতে সংশ্লিষ্ট চ্যানেল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই বিশ্বকাপের বাকি খেলাগুলিও আদৌ তাঁরা দেখতে পাবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
শুক্রবার বিশ্বকাপের প্রথম বড় ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল স্পেন-পর্তুগাল। মধ্যরাতের অনেক আগেই খেলা শুরু হওয়ায় দর্শকেরা সবে গুছিয়ে বসেছিলেন টিভির সামনে। সপ্তাহান্ত তো বটেই, ইদের জন্যও শনিবার অনেক অফিস ছুটি। ফলে রাত জাগার ক্লান্তি নিয়ে শনিবার অফিস দৌড়নোর তাড়া ছিল না। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর কয়েক মিনিটের গোলের পরে তখন সবে সমতা ফিরিয়েছেন স্পেনের দিয়েগো কোস্টা। হঠাৎ শহরের বহু জায়গায় টিভির পর্দা থেকে উধাও সোচি শহরের ফিশ্ট স্টেডিয়াম। গোড়ায় অনেকে ভেবেছিলেন, টিভির সমস্যা। কিন্তু দীর্ঘ অপেক্ষার পরেও ছবি না আসায় বোঝা গেল, সম্প্রচারই বন্ধ। শনিবার খোঁজ নিয়ে জানা গেল, সংশ্লিষ্ট চ্যানেলের সঙ্গে একটি এমএসও-র গোলমালের মাসুল দিতে হল হাজার হাজার গ্রাহককে।
যদিও কোনও কোনও এলাকায় ওই এমএসও-র সংযোগে খেলা দেখা গিয়েছে বলেও খবর এসেছে। তবে তা কী করে সম্ভব হল, জানা যায়নি।
গ্রাহকদের একাংশের অভিযোগ, মন্থন নামের ওই এমএসও-র পরিষেবায় বিশ্বকাপের চ্যানেলটি শুক্রবার রাত ১২টার পর থেকেই বন্ধ। তাঁরা জানান, অনেকেই ওই চ্যানেলটি দেখতে এই এক মাসের জন্য বাড়তি টাকা দিয়েছেন। তাঁদের প্রশ্ন, গাঁটের কড়ি খরচ করেও কেন বঞ্চিত হতে হবে?
ওই রাতে এবং পরদিন শনিবার অনেকে বহু বার মন্থনের দফতরে ফোন করলেও সাড়া মেলেনি। এ দিনও রাত পর্যন্ত ওই চ্যানেলে খেলা দেখা যায়নি। কবে থেকে দেখা যাবে, তা-ও অনিশ্চিত। চ্যানেল কর্তৃপক্ষ এবং এমএসও-কর্তারা এ নিয়ে আলোচনায় বসেছেন কি না, তা-ও স্পষ্ট নয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, মন্থনের কাছে বকেয়া অর্থ না পেয়েই সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছে সোনি। এর আগে আইপিএল-এর সময়েও মন্থনের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ উঠেছিল।
এ দিন সোনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও রাত পর্যন্ত জবাব মেলেনি। মন্থনের অন্যতম ডিরেক্টর সুদীপ ঘোষকে ফোনে পাওয়া যায়নি। সংস্থার দফতরে অপেক্ষার পরে জানানো হয়, এ নিয়ে কেউ কথা বলতে পারবেন না। বিশ্বকাপের বাকি খেলাগুলি দেখানো হবে কি না, সে বিষয়েও কিছু জানা যায়নি।
লেক টাউন-কালিন্দী অঞ্চলের কেব্ল অপারেটর সুবীর সাহা বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন মন্থনের সঙ্গে ব্যবসা করেছি। কিন্তু বহু সময়েই সমস্যা হয়েছে। গোলমাল হয়েছে আইপিএল-এর সময়েও। ফলে ওদের সংযোগ ছেড়ে অন্য এমএসও-র সংযোগ নিয়েছি। কারণ, চ্যানেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এমএসও-র পাওনা নিয়ে গোলমাল গ্রাহকেরা বুঝতে চান না। আমরাই গ্রাহকের ক্ষোভের মুখে পড়ি।’’ কিছু কেব্ল অপারেটর অবশ্য জানিয়েছেন, দ্রুত এই সমস্যার মোকাবিলা করা হবে বলে আশ্বাস মিলেছে।
এ শহরের অন্য এমএসও, যেমন ‘সিটি কেব্ল’-এর সুরেশ শেঠিয়া, ‘বেঙ্গল ব্রডব্যান্ড’-এর মৃণাল চট্টোপাধ্যায়, বা ‘হ্যাথওয়ে’র তৃণাঞ্জন মাইতির দাবি, বিশ্বকাপ বা আইপিএল-এর বড় খেলা দেখতে গ্রাহকেরা যাতে সমস্যায় না পড়েন, সে জন্য আগাম ব্যবস্থা নেন তাঁরা।
টাকা দিয়েও খেলা দেখতে না পাওয়ায় গ্রাহকেরা ক্রেতা সুরক্ষা দফতরে যাওয়ার কথা ভাবছেন। যদিও ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের বক্তব্য, সেখানে না গিয়ে থানায় অভিযোগ জানানোই যথেষ্ট। কারণ, এটি সরাসরি ‘চিটিং’ বা প্রতারণার ঘটনা। তবে হাইকোর্টের আইনজীবী দীপাঞ্জন দত্ত বলেন, ‘‘পুলিশে অভিযোগ করলে হয়তো অপরাধীর বিচার হবে। কিন্তু ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে না। ক্রেতা সুরক্ষা দফতরে মামলা করলে ক্ষতিপূরণের সুযোগ থাকবে।’’ ক্রেতা সুরক্ষামন্ত্রী সাধন পাণ্ডে বলেন, ‘‘এ বিষয়ে মামলা হলে যথাযোগ্য ব্যবস্থা নেব। এমনটা চলতে পারে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy