নারকেলডাঙা থানা এলাকায় দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব, বোমাবাজি।
মেয়েকে স্কুলে পৌঁছে দিতে গলির মুখ থেকে বেরিয়ে ছিলেন নারকেলডাঙার বাসিন্দা সুরিন্দর সিংহ। রাস্তা পার হওয়ার সময়েই বিকট শব্দে থেমে গেলেন। ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছে চারপাশ। একটি মোটরবাইকে চেপে হেলমেট পরা দু’জনকে দ্রুত গতিতে চলে যেতে দেখলেন তিনি। ধোঁয়া সরতেই দেখা গেল, রাস্তার এক পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন এক যুবক। আর এক পাশে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন এক প্রৌঢ়া।
পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল সাতটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে নারকেলডাঙা থানা এলাকায়। জখম দু’জনের নাম মহম্মদ দানিশ ও কৌশল্যা প্রসাদ। বছর চব্বিশের মহম্মদ দানিশের ডান উরুতে গুলি লেগেছে। তাঁকে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, দানিশের পরিবার এলাকায় প্রোমোটিংয়ের সঙ্গে যুক্ত। এলাকার আর এক বাসিন্দা কৌশল্যা প্রসাদের বুকে বোমার টুকরো এসে লাগলেও প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
লালবাজারের কর্তারা জানিয়েছেন, জখম দানিশের কথায় অনেক অসঙ্গতি রয়েছে। দানিশ প্রথমে দু’টি মোটরবাইকে দুষ্কৃতীদের আসার কথা বললেও পুলিশি জেরায় পরে সেই বয়ান বদলে একটি বাইকে দু’জন দুষ্কৃতীর আসার কথা বলেন। এ ছাড়াও পুলিশের ধারণা, যে গুলিতে দানিশ জখম হয়েছেন, সেটি তিনি নিজেও চালিয়ে থাকতে পারেন। আঘাতের চিহ্ন দেখে মনে হচ্ছে, খুব কাছ থেকে সেটি চালানো হয়েছে। জখমের জায়গায় পুড়ে যাওয়ার চিহ্ন রয়েছে। যা একমাত্র কয়েক ফুটের মধ্যে গুলি চললে সম্ভব। এক তদন্তকারী অফিসার জানান, এলাকার সিসিটিভিতে ঘটনার সময়কার কোনও সন্দেহজনক মোটরবাইক দেখা যায়নি। কৌশল্যাদেবীও জানিয়েছিলেন, তিনি ঘটনার পরে কোন মোটরবাইক দেখেননি। দানিশের বয়ানে একাধিক অসঙ্গতি মেলার পরেই সকালের ঘটনা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে তদন্তকারীদের মনে। ওই ঘটনায় দু’জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হলেও বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। আপাতত ফরেন্সিক পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়ার অপেক্ষা করা হচ্ছে বলে লালবাজার জানিয়েছে।
সকালের ঘটনার পরে পুলিশের অনুমান ছিল, পুরনো শত্রুতার জেরেই এ দিন হামলা চালানো হয়েছে। এবং সেই হামলার লক্ষ্য ছিলেন দানিশ। স্থানীয় বাসিন্দারাও একই অভিযোগ করেন। ওই পাড়ায় একটি ফ্ল্যাট তৈরি করছেন দানিশের বাবা মহম্মদ শাহজাহান। সেই নির্মীয়মাণ বাড়ির ইট-বালি-সিমেন্ট সরবরাহ নিয়েই আর এক গোষ্ঠীর সঙ্গে গোলমাল চলছিল দানিশদের। তার জেরেই ওই ঘটনা বলে সুরিন্দর-সহ এলাকার কয়েক জন বাসিন্দার দাবি। পুলিশ সব অভিযোগ খতিয়ে দেখছে।
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। পুলিশের একটি গাড়িও দাঁড়িয়ে রয়েছে ঘটনাস্থলের সামনে। কৌশল্যাদেবী জানান, সকালে দুধ-পাউরুটি কিনতে নারকেলডাঙা পোস্ট অফিসের সামনের একটি দোকানে গিয়েছিলেন তিনি। তখনই হঠাৎ বিকট আওয়াজ কানে আসে। বুকের বাঁ দিকে জ্বালা অনুভব করেন কৌশল্যাদেবী। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, বোমার স্প্লিন্টার বুকে লেগেছে তাঁর।
(শহরের প্রতি মুহূর্তের সেরা বাংলা খবর জানতে পড়ুন আমাদের কলকাতা বিভাগ। )
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy