Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

মামলার ফাঁসে আটকে বাড়ি সাফাইয়ের কাজ

জমা জল আর জমা জঞ্জালই যে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়াবাহী মশার আঁতুড়ঘর, সেই প্রচার করে কলকাতাবাসীকে সতর্ক করছে পুর প্রশাসন।

রুদ্ধ: ভাঙা অংশের আবর্জনায় আটকে গিয়েছে কমার্শিয়াল বিল্ডিংয়ের স্ট্র্যান্ড রোডের দিকের গেট। নিজস্ব চিত্র

রুদ্ধ: ভাঙা অংশের আবর্জনায় আটকে গিয়েছে কমার্শিয়াল বিল্ডিংয়ের স্ট্র্যান্ড রোডের দিকের গেট। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৮ ০০:০১
Share: Save:

শহরে পরপর বেশ কয়েক জনের মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গি ও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে। এই পরিস্থিতিতে জমা জল আর জমা জঞ্জালই যে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়াবাহী মশার আঁতুড়ঘর, সেই প্রচার করে কলকাতাবাসীকে সতর্ক করছে পুর প্রশাসন। জল, জঞ্জাল জমে থাকতে দেখলে দ্রুত সাফ করে ফেলারও নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বড়বাজার এলাকায় ২৩ নম্বর নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু রোডে শহরের অন্যতম পুরনো একটি বাণিজ্যিক ভবন ক্রমশই মশার বংশ বিস্তারের অনুকূল হয়ে উঠছে। বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কিত ওই বাড়ির বাসিন্দারা। ভবনটি নিয়ে ভাড়াটে ও মালিকপক্ষের মধ্যে মামলা চলায় সাফাইয়ের কাজেও কেউ হাত দিচ্ছেন না বলে জানা গিয়েছে। বাসিন্দাদের আবেদন, পুর প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নিক।

কলকাতা পুরসভার ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডের ওই ভবনটি এলাকায় কমার্শিয়াল বিল্ডিং নামে পরিচিত। পুরনো ওই ভবনের একটি দিক স্ট্র্যান্ড রোডে, অন্য দিক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু রোডের উপরে। বাড়ির ভিতর দিয়ে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার সঙ্গে যোগাযোগ থাকায় এক সময়ে ব্যবসা জমজমাট ছিল। বাড়ির ভিতরে ও বাইরে রয়েছে বহু পুরনো দোকান। স্থানীয় এক ব্যবসায়ী জানান, ওই ভবনের মালিকানা বদলের পর থেকে সমস্যা বাড়তে থাকে। এক সময়ে বাড়িটির একাংশ বিপজ্জনক বলে চিহ্নিত করে পুরসভা। এমনকি, ওই অংশ ভেঙে দেওয়ার কাজও শুরু হয়। ব্যবসায়ীরা আদালতের দ্বারস্থ হওয়ায় সেই কাজ সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু ভাঙা অংশের আবর্জনায় আটকে যায় স্ট্র্যান্ড রোড দিয়ে ঢোকার পথ। সম্প্রতি ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, ভাঙা অংশের উপরে আবর্জনা বেড়েই চলেছে। পাশের ভবনের এক নিরাপত্তারক্ষী বলেন, ‘‘এখানে মশার উপদ্রব খুব। সব সময়ে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া নিয়ে ভয়ে থাকি।’’

বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু রোডে বেরোনোর বড় লোহার দরজাটি স্থায়ী ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ওই দরজার মধ্যেই ছোট একটি অংশ খুলে যাতায়াতের ব্যবস্থা রয়েছে। ওই অংশটি এতই ছোট যে একসাথে এক-দু’জনের বেশি সেখান দিয়ে যাতায়াত করতে পারেন না। বাসিন্দাদের আশঙ্কা, কোনও ভাবে আগুন লাগলে বাড়িটি থেকে বেরোতেই পারবেন না তাঁরা।

বাড়িটির বাইরের অবস্থাও করুণ। স্ট্র্যান্ড রোডের উপরেই ফুটপাথ জুড়ে পড়ে আবর্জনা ও বাড়ির ভাঙা অংশ। এ নিয়ে পুলিশ বা পুরসভা কেউই ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। তাঁদের দাবি, ওই রাস্তা পুরসভার অধীন, তাই পুরসভার জঞ্জাল অপসারণ দফতরেরই দায়িত্ব সেগুলি সরানোর। ওই দফতরের এক আধিকারিক জানান, মামলার কারণে সাফাই করা যায়নি। ডেঙ্গি প্রতিরোধ কর্মসূচিতে অবশ্য বারবার বলা হচ্ছে এই কাজে কোনও বাধা মানা হবে না। কোনও বাড়ি নিয়ে মামলা চললেও সেখানে ঢুকবেন পুরকর্মীরা। তা সত্ত্বেও এই বাড়িটির ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন, তা নিয়ে পুরসভার তরফে সদুত্তর মেলেনি।

বিষয়টি তাঁর গোচরে আছে কি না, জানতে চাওয়া হলে ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, কংগ্রেসের সন্তোষ পাঠক বলেন, ‘‘বাড়িটির বেশ কিছু ব্যবসায়ী এ নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন একাধিক বার। পুরসভার অফিসারদের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলাও হয়েছে। কিন্তু কোনও কাজ হচ্ছে না।’’ তিনি জানান, বাগ়ড়ি মার্কেটের অগ্নিকাণ্ডের পরে কমার্শিয়াল বিল্ডিংয়ের অগ্নি-সুরক্ষার বিষয়টিতেও নজর দেওয়া দরকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE