Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

জানলার কাচ কি ভাঙতে হত আগেই

দমকলের আর এক প্রাক্তন শীর্ষ কর্তার মতে, ‘‘এলপিজি সিলিন্ডারে আগুন লাগলে জলই দেওয়া হয়। পাশাপাশি, দাহ্য গ্যাসকে ছড়িয়ে দেওয়াটাই নিয়ম।’’

সাফাই: বাগড়ি মার্কেটের ধ্বংসস্তূপ সরাতে ব্যস্ত পুরসভার কর্মীরা। —ফাইল চিত্র

সাফাই: বাগড়ি মার্কেটের ধ্বংসস্তূপ সরাতে ব্যস্ত পুরসভার কর্মীরা। —ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:১৫
Share: Save:

বাগড়ি মার্কেটের ভিতরে জল দিতে বুধবার রবার বুলেট দিয়ে জানলার কাচ ভেঙেছিল পুলিশ। সেই কাজ আরও আগে করলে লাভ হত কি না, সে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, ফরেন্সিক পরীক্ষায় জানা গিয়েছে, সুগন্ধীর কৌটো ফেটে এক ধরনের দাহ্য গ্যাস তৈরি হয়েছিল। তা আবদ্ধ হয়ে ছিল মার্কেটের ভিতরেই। জল দিয়ে সেই গ্যাসকে পুরোপুরি বাগে আনা সম্ভব নয়। দমকলের অভিজ্ঞ কর্তারা বলছেন, এই ধরনের ঘটনায় যত দ্রুত গ্যাসকে ছড়িয়ে নিষ্ক্রিয় করাটাই শ্রেয়।

দমকলের আর এক প্রাক্তন শীর্ষ কর্তার মতে, ‘‘এলপিজি সিলিন্ডারে আগুন লাগলে জলই দেওয়া হয়। পাশাপাশি, দাহ্য গ্যাসকে ছড়িয়ে দেওয়াটাই নিয়ম।’’ তবে পুলিশ ও দমকলের কর্তারা বলছেন, পরিস্থিতি বুঝেই পদক্ষেপ করা হয়েছে। যে ভাবে আগুন জ্বলছিল, তাতে জানলা ভেঙে দিলে আগুনের শিখা আশপাশের বাড়িতে ছড়িয়ে পড়তে পারত। ঘিঞ্জি ক্যানিং স্ট্রিটের কথা মাথায় রেখেই ওই গ্যাসকে মার্কেটের ভিতরে আবদ্ধ রেখে ধীরে ধীরে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে।

কাচ ভাঙার আগে বাইরের গ্রিলও কাটতে হয়েছে।কেউ কেউ এ-ও বলছেন, দাহ্য রাসায়নিকে জল দিলে আগুন ছড়িয়ে প়ড়বেই। সে ক্ষেত্রে কেন টানা জল দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা হল? জলের বদলে ফোম জাতীয় কিছু দিয়ে আগুন নেভানো সম্ভব ছিল কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। দমকলের প্রাক্তন ডিরেক্টর বিভাস গুহ বলছেন, ‘‘মার্কেটের ভিতরে দমকলকর্মীরা ঢুকতেই পারেননি।

—ফাইল চিত্র।

এই পরিস্থিতিতে বাইরে থেকে ফোম দিয়ে কোনও লাভ হত না। জল দেওয়াটাই শ্রেয়।’’ কী গ্যাস তৈরি হয়েছিল বাগড়ির ভিতরে? ফরেন্সিক বিভাগের বিজ্ঞানীরা জানান, বাগড়ি মার্কেটের নীচে এবং ভিতরে প্রচুর পরিমাণ সুগন্ধী (ডিওডোর‌্যান্ট) মজুত ছিল। ওই ধরনের সুগন্ধীর ক্ষেত্রে গ্যাসকে উচ্চচাপে তরলে পরিণত করে কৌটোয় ভরে রাখা হয়। সেগুলি ফেটে কম বায়ুচাপে এসে ফের বাষ্পে পরিণত হয়েছে এবং আয়তনে বেড়ে বড় এলাকায় ছড়িয়ে প়়ড়েছে। সুগন্ধীতে থাকা প্রোপেন ও বিউটেন মিশে দাহ্য গ্যাস তৈরি করেছে। ফরেন্সিক বিভাগের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘এই ধরনের গ্যাস জল পড়লেই অন্যত্র সরে যায়। একে তাই হাইড্রোফোবিক গ্যাস বলে। ফলে জল পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা লুকোচুরি খেলার মতো সরে গিয়েছে এবং অতিরিক্ত তাপ এবং কোথাও কোথাও খোলা বিদ্যুতের তার পেয়ে আগুন জ্বালিয়েছে। সেই আগুনে জল দিলে তা আবার অন্য জায়গায় সরে গিয়েছে।’’ দমকলের একটি সূত্র বলছে, ভিতরের তাপমাত্রা মারাত্মক বেশি ছিল। তাই ক্রমাগত জল দিয়ে বাড়ির দেওয়ালকে ঠান্ডা রাখাটাও ছিল চ্যালেঞ্জ। তা না হলে অতিরিক্ত তাপে ওই বহুতল ভেঙেও পড়তে পারত।

ফরেন্সিক সূত্রের খবর, ওই গ্যাস ছাড়া বাগ়ড়ির ভিতরে আর কী কী দাহ্য বস্তু ছিল, তা-ও জানা প্রয়োজন। তাই পোড়া মার্কেট থেকে সংগ্রহ করা নমুনার বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পরীক্ষা করা হবে। তা কিছুটা সময়সাপেক্ষ। এর পাশাপাশি, আগুনের উৎসে পৌঁছনোর জন্য একেবারে উপরের তলা থেকে ধাপে ধাপে নীচে নেমে পরীক্ষা করা হবে। ফরেন্সিক বিভাগের অধিকর্তা ওয়াসিম রাজা বলেন, ‘‘এই ধরনের ঘটনার তদন্ত অনেকটা সিনেমার মতো। এক-একটি দৃশ্য জুড়ে জু়ড়ে গোটা ঘটনা কী ঘটেছিল, তা জানার চেষ্টা করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE