Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Calcutta News

খুনের সুপারি থেকে মাদকের কারবার, জেলবন্দি প্রেমিকের হয়ে ব্যবসা সামলান এই ছাত্রী!

দমদম সেন্ট্রাল জেলের এই ঘটনায় রীতিমতো হতবাক পুলিশ কর্তারা। এত কম বয়সে এত নিপুণ হাতে সব কিছু সামলাচ্ছেন এক কলেজ ছাত্রী!

জেলের মধ্যে হেরোইন পাচারে ধৃত ছাত্রী। —নিজস্ব চিত্র।

জেলের মধ্যে হেরোইন পাচারে ধৃত ছাত্রী। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৮ ১১:০৭
Share: Save:

জেলে বসে রয়েছে প্রেমিক। আর জেলের বাইরে তার হয়েই সাম্রাজ্য সামলাচ্ছেন প্রেমিকা! তোলাবাজি থেকে বাইক চুরি, ডাকাতি থেকে খুনের সুপারি— সবটাই একা হাতে নিয়ন্ত্রণ করতেন মধ্যমগ্রামের আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ওই ছাত্রী! জেলের ভিতরে থাকা দাগী এক অপরাধীকে হেরোইন পাচার করতে গিয়েই মঙ্গলবার ধরা পড়ে যান বছর একুশের ওই তরুণী।

সুস্মিতা মালাকার নামে ওই তরুণীকে আটক করার পর পুলিশ প্রথমে তাঁকে ‘চুনোপুঁটি’ বলেই মনে করেছিল। কিন্তু জেরার মুখে জানা যায়, আপাত নিরীহ ওই কলেজছাত্রী বকলমে একটা গ্যাং-এর নেত্রী! জেলে বসে থাকা অপরাধী, যে আসলে ওই তরুণীর প্রেমিক, তারই নির্দেশে চলত তোলাবাজি, ডাকাতি বা খুনের মতো অপরাধ। আর গোটা চক্রটাই একা হাতে সামলাতেন সুস্মিতা!

মঙ্গলবার বিকেলে দমদম সেন্ট্রাল জেলে এসেছিল সুস্মিতা। জেলরক্ষীদের তিনি জানিয়েছিলেন, বিচারাধীন বন্দি ভগীরথ সরকারের সঙ্গে দেখা করতে চান। নিজেকে ভগীরথের আত্মীয় বলে পরিচয় দিয়েছিলেন। নিরাপত্তারক্ষীদের দাবি, তল্লাশি চালানোর সময় একটি পাউডারের কৌটো পাওয়া যায় ওই তরুণীর কাছে। সেই কৌটোর ভিতরে ছিল হেরোইন। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে আটক করা হয়। এর পরেই শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ। খবর পাঠানো হয় দমদম থানায়। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ওই তরুণীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

দেখুন ভিডিয়ো

পুলিশ জানিয়েছে, সুস্মিতার বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতের ন’পাড়ার নেতাজি পল্লিতে। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র কলেজের দ্বিতীয় বর্ষে সংস্কৃত নিয়ে পড়াশোনা করছেন তিনি। থানায় নিয়ে গিয়ে সুস্মিতাকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। পুলিশ জানতে পারে, উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গা এলাকার কুখ্যাত অপরাধী ভগীরথের হয়েই তার গ্যাং চালাচ্ছে সুস্মিতা। ভগীরথের বিরুদ্ধে এই মুহূর্তে ৬টি মামলা ঝুলছে। তোলাবাজি-ডাকাতি-খুনের জন্য নিয়মিত জেলেও থেকেছে সে। বীজপুরে একটি ডাকাতির ঘটনায় মাস কয়েক ধরেই দমদম জেলে বিচারাধীন হিসাবে বন্দি রয়েছে ভগীরথ। প্রতি সপ্তাহে দু’বার করে জেলে ভগীরথের সঙ্গে দেখা করতে আসতেন সুস্মিতা। এই দেখা করার নাম করেই ভগীরথকে জেলের ভিতরে হেরোইন পৌঁছে দিতেন সুস্মিতা।

তদন্তে জানা গিয়েছে, ভগীরথের সঙ্গে বছরখানেক আগে ফেসবুকে আলাপ হয় সুস্মিতার। সেই সময় থেকেই তাঁদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা। অপরাধে ভগীরথের হাতে খড়ি বাইক চুরি দিয়ে। তার পর মাদক পাচারের ব্যবসাও শুরু করে সে। এর মধ্যে সুপারি নিয়ে খুনের অভিযোগও ওঠে তার বিরুদ্ধে। কুখ্যাত অপরাধী ভগীরথ জেলে থাকলেও তার চক্রের কাজকর্ম কিন্তু থেমে থাকেনি। পুলিশ এবং জেলরক্ষীদের একাংশের সন্দেহ ছিল, জেলের বাইরে থাকা কেউ তাকে সাহায্য করছে। তবে সেই ব্যক্তি কে, তা নিয়ে কোনও ধারণা ছিল না কারও। শেষে সুস্মিতা গ্রেফতার হতেই পর্দার আড়ালে থাকা সেই ‘ব্যক্তি’র পরিচয় ফাঁস হয়ে যায়।

আরও পড়ুন: নিহতের স্কুটার চেপে ঘুরেছিল ধৃতেরা
আরও পড়ুন: ‘ভুল গ্রুপের’ রক্ত শরীরে, প্রাণ সংশয়

সুস্মিতাকে গ্রেফতারের পরেই পর্দাফাঁস হয়ে যায় আড়ালে থাকা গ্যাংলিডারের পরিচয়। —নিজস্ব চিত্র।

এত কম বয়সে, এত নিপুণ হাতে সব কিছু সামলাচ্ছেন এক কলেজ ছাত্রী! দমদম সেন্ট্রাল জেলের এই ঘটনায় রীতিমতো হতবাক পুলিশ কর্তারা। এক তদন্তকারীর কথায়, ‘‘২০১৭ সালে আমডাঙাতে বাইক চুরিকে কেন্দ্র করে এক যুবক খুন হয়ে যান। সেই ঘটনাতে বড় ভূমিকা ছিল সুস্মিতার। ওই ঘটনায় ভগীরথ ভাড়াটে খুনি হিসাবে কাজ করেছিল। খুনের পর সে গা ঢাকা দেয়। সেই সময় ভগীরথের ভাগের টাকা লেনদেন হয় সুস্মিতার মাধ্যমে। ভগীরথ গ্রেফতার হওয়ার পরে ওর বাইক চুরির গ্যাং-এর ‘অপারেশন’ পুরোটাই দেখতেন এই ছাত্রী।’’ পুলিশের দাবি, ভগীরথের নির্দেশেই জেলের বাইরে তার হয়ে তোলাবাজি, খুনের সুপারির নেওয়ার মতো কাজকারবার দেখতেন সুস্মিতা।

সুস্মিতার পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্য দিনের মতো মঙ্গলবারও তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। কিন্তু, রাত পর্যন্ত বাড়ি না ফেরায় দত্তপুকুর থানায় অভিযোগ জানানো হয়। তখনই জানা যায় দমদম থানার পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করেছে।

বুধবার বারাসত আদালতে পেশ করা হয় ওই ছাত্রীকে। তাঁকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানিয়েছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Drug Trafficking Dum Dum Central Jail Video
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE