পশুদের গায়ে রং না দেওয়ার আবেদনে প্রচার। নিজস্ব চিত্র
ফি বছরই দোলের সময় এক শ্রেণির মানুষ পথ কুকুরদের গায়ে রং ছিটিয়ে ‘মজা’ পান।
এই প্রবণতা আটকাতে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা থেকে শুরু করে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে নানা ভাবে সচেতনতামূলক প্রচারও চলে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এক শ্রেণির মানুষের ‘মানবিকতা’ ফেরে না বলে অভিযোগ।
পুরসভা সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, কলকাতা ও শহরতলিতে পথ কুকুরের সংখ্যা দু’লক্ষেরও বেশি। অভিযোগ, দোলের সময় কচিকাঁচা থেকে যুবকেরা অনেকেই এই অবলা প্রাণীদেরই পিচকিরির ‘টার্গেট’ করেন। কিন্তু রং পথ কুকুরদের পক্ষে ভীষণই বিপজ্জনক বলেই মত শহরের পশু চিকিৎসকদের।
প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক অমলেন্দু চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘কুকুরের চামড়া মানুষের চামড়ার তুলনায় ছ’গুণ পাতলা। ফলে কুকুরের গায়ে রং ছেটালে তার মধ্যে থাকা বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ সহজেই কোষের মধ্যে ঢুকে ক্ষতের সৃষ্টি করে। এমনকী ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে।’’
রাজ্যের প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শৈবাল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কুকুরের শরীরে দু’রকম পরজীবী থাকে। কুকুরকে রং মাখালে রঙের বিষাক্ত উপাদান পরজীবীর সংস্পর্শে এসে তাদের দেহে স্থায়ী ক্ষতের সৃষ্টি করে। এই ক্ষত খুবই সংক্রামক। আক্রান্ত কুকুরের থেকে সংক্রমণ শীঘ্রই পাশের সুস্থ কুকুরের শরীরেও ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল।’’ রঙের মধ্যে বিষাক্ত টক্সিক উপাদানের সংস্পর্শে কুকুরের আয়ুও কমে যায় বলে জানাচ্ছেন পশু চিকিৎসকেরা। শৈবালবাবুর কথায়, ‘‘রঙের মধ্যে থাকা বিষাক্ত রাসায়নিক চোখে গেলে কুকুরের অন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও প্রবল।’’
পশু চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, কুকুরের চামড়া ভীষণই সংবেদনশীল। ‘ব্রাউন টিক’ নামে এক ধরনের পোকা এমনিতেই সহজে কুকুরের দেহে বাসা তৈরি করে। সেই ক্ষতের উপরে দোলের রং পড়লে তা আরও বেড়ে গিয়ে প্রাণঘাতী হতে পারে বলে মনে করছেন পশু চিকিৎসকেরা।
প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক সুনীতকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ঘ্রাণশক্তি কুকুরের প্রধান অস্ত্র। দোলের রঙের বিষাক্ত রাসায়নিকের প্রভাবে ওদের স্নায়ুশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। অনুভূতি শক্তিও কমে যায়। নিজের সহজাত ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তারা।’’ পশু চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, আবির বা রং কুকুর নিজের জিভ দিয়ে চেটে পরিষ্কার করে। পশু চিকিৎসক অমলেন্দু চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘চাটার ফলে রঙের বিষাক্ত উপাদান পেটে ঢুকে অন্ত্রে ক্ষত সৃষ্টি করে। বমি হয়। বারবার বমি থেকে ডিহাইড্রেশন হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy