Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

সাত প্রকল্পের সাতকাহন

বিধানসভা ভোটে বিপুল জয় পেয়েছে তাঁর দল। এর পিছনে তাঁর স্বাস্থ্যনীতিরও অবদান আছে বলে মানেন অনেকে। তবে প্রথম ইনিংসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা করা সাতটি স্বাস্থ্য প্রকল্প চালু হয়নি এখনও। কেন? সরেজমিন দেখে এলেন পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়। মূলত দুর্ঘটনায় গুরুতর আহতদের দ্রুত চিকিৎসায় প্রাণ বাঁচাতে আর জি করে ট্রমা কেয়ার ইউনিটের পরিকল্পনা হয়েছিল বাম আমলে। ২০১১ সালে ক্ষমতায় এসে মমতা ঘোষণা করেন, ২০১৩- জুলাইয়ে চালু হয়ে যাবে সেই ইউনিট।

শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৬ ০০:৪৮
Share: Save:

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে ট্রমা কেয়ার সেন্টার

মূলত দুর্ঘটনায় গুরুতর আহতদের দ্রুত চিকিৎসায় প্রাণ বাঁচাতে আর জি করে ট্রমা কেয়ার ইউনিটের পরিকল্পনা হয়েছিল বাম আমলে। ২০১১ সালে ক্ষমতায় এসে মমতা ঘোষণা করেন, ২০১৩- জুলাইয়ে চালু হয়ে যাবে সেই ইউনিট। শেষমেশ ২০১৫-র মার্চে চালু হয় ট্রমা সেন্টার। প্রস্তাবিত ২০০ শয্যার বদলে মাত্র ৩০টি নিয়ে, যার মধ্যে মাত্র ৪টি নিউরো সার্জারির এবং বাকি ২৬টি নিউরো মেডিসিনের। ইমার্জেন্সি নিউরোসার্জারি হয় না। চালু হয়নি সার্জারি আর অর্থোপেডিক্স শয্যাও।

মমতার দ্বিতীয় ইনিংসে শুধু নিউরো সার্জারি-র শয্যা বেড়ে হয়েছে ৮টি। চলতি বছর টেনেটুনে ৬০টি শয্যা চালু করা যাবে কি না, তা নিয়েই স্বাস্থ্য দফতর চিন্তায়। আবার ২০০-র মধ্যে ৬০ শয্যা যদিও বা চালু হয়, তা হলেও জরুরি অস্ত্রোপচার আদৌ চালু হবে কিনা স্বাস্থ্যকর্তারা জানেন না। অধ্যক্ষ শুদ্ধোদন বটব্যাল বলেন, ‘‘নিউরো সার্জন না পেলে কী ভাবে হবে? স্বাস্থ্যভবন সবই জানে।’’ আর স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘চেষ্টা চলছে। আমরা বসে নেই।’’ ফল? দুর্ঘটনাগ্রস্তদের জরুরি ভিত্তির চিকিৎসা এখনও অথৈ জলেই।

বি সি রায় শিশু হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক ও ইমার্জেন্সি

রাজ্যের একমাত্র শিশুরোগী রেফারাল কেন্দ্র। অথচ তাতে ব্লাডব্যাঙ্ক নেই। বিকেল চারটের পরে ইমার্জেন্সিতে আসা গুরুতর অসুস্থ শিশুর অস্ত্রোপচারও হয় না। মমতা ক্ষমতায় এসে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, অবিলম্বে দুটোই করা হবে। কিন্তু এসএনসিইউ চালু হওয়ার পরে আজও সেখানে ব্লাডব্যাঙ্ক নেই। অসুস্থ সদ্যোজাতের রক্ত দরকার হলে অভিভাবকদের ছুটতে হয় মানিকতলা ব্লাডব্যাঙ্কে। বিকেল চারটের পর এলে রেফার করে দেওয়া হয় অস্ত্রোপচার-যোগ্য শিশুকে।

ইন্দিরা মাতৃসদন সংস্কার করে আর জি করের শাখা হাসপাতাল

দীর্ঘকাল ধরে ধুঁকছে পাইকপাড়ার এই হাসপাতাল। অথচ, অবস্থানগত ভাবে ভাল জায়গা, জমিও অনেকটা। আর জি করের চাপ কমাতে সেখানকার প্রসূতি বিভাগকে এই হাসপাতালে স্থানাস্তরের পরিকল্পনা করেছিলেন মমতা। হয়নি।
তার পরে পরিকল্পনা করেন, ইন্দিরা মাতৃসদনে বিএসসি নার্সিং ট্রেনিং সেন্টার এবং আরজিকরের অর্থোপেডিক্স এবং ক্যানসার রোগীদের রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার হবে। সেই কাজও একচুল এগোয়নি। দ্বিতীয় ইনিংসে কী হবে? স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের জবাব, ‘‘বলা কঠিন।’’

এসএসকেএম হাসপাতালের ইনফার্টিলিটি সেন্টার

কম খরচে বন্ধ্যত্বের চিকিৎসা দিতে ২০১৪ সালে সুপার স্পেশ্যালিটি এসএসকেএম হাসপাতালে ‘ইনফার্টিলিটি ট্রিটমেন্ট সেন্টার’ চালুর কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কয়েক জন নামী বেসরকারি বন্ধ্যত্ব বিশেষজ্ঞ এখানে পরিষেবা দেবেন বলে স্থির হয়। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, ফাইল তৈরি হয়ে নবান্নে যায় এবং সবুজ সঙ্কেতও মেলে। কিন্তু তার পরে রহস্যজনক ভাবে সেই ফাইল বেপাত্তা হয়ে যায়। আজ পর্যন্ত চালু হয়নি সেই সেন্টারও। এসএসকেএম ও স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রকল্পটি পুরোপুরি সরকারি হবে নাকি পিপিপি মডেলে চলবে, তা নিয়ে গোল বেধেছে কর্তাদের মধ্যেই। ফলে ওই কেন্দ্র চালু হওয়াও দূর অস্ত্‌।

রামরিক হাসপাতাল পুনর্গঠন

খুঁড়িয়ে-খুঁড়িয়ে চলছিল রামরিক হাসপাতাল। মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি মিলিয়ে ৬৮টি শয্যা। অস্ত্রোপচার হতো না বললেই চলে। হাসপাতাল চত্বরের অনেকটাই চলে গিয়েছিল দখলদারদের হাতে। ২০১৩ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, রামরিক হাসপাতাল সংস্কার করে সেখানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে এসএসকেএমের অস্থি বিভাগকে। এর জন্য ২০১৪ সালের জুলাই মাস থেকে রামরিক বন্ধও করে দেওয়া হয়। কিন্তু সংস্কারের কাজ শেষ হয়নি দু’বছরেও। এ দিকে, এসএসকেএমে অস্থি বিভাগে স্থানাভাবে ফিরে যেতে হচ্ছে অসংখ্য গুরুতর রোগীকে। কিংবা দিনের পর দিন পড়ে থাকতে হচ্ছে উডবার্ন ওয়ার্ডের একতলার স্যাঁতসেতে, অন্ধকার ওয়ার্ডে। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী শুধু বলেন, ‘‘ফাইল চালাচালি হচ্ছে। তাই রামরিক নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’’

মেয়ো হাসপাতালের ইন্ডোর

বছরের পর বছর বন্ধ হয়ে পড়ে থাকা মেয়ো হাসপাতাল চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মমতা। ২০১৫ সালে প্রথম ইনিংসের একেবারে শেষ পর্বে মেডিক্যাল কলেজের শাখা হিসেবে চালু করা গিয়েছে শুধু কয়েকটি বিভাগের আউটডোর। মুখ্যমন্ত্রীর দ্বিতীয় ইনিংসেও কবে সব বিভাগের আউটডোর এবং ইন্ডোর চালু হবে, তা বলতে পারছেন না স্বাস্থ্যকর্তারা। কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন ডাক্তারের অভাবকে।

বৃহত্তর কলকাতা অঞ্চলের স্টেট জেনারেল হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসাকেন্দ্র

কলকাতার লাগোয়া বরাহনগর স্টেট জেনারেল, নর্থ সাবার্বান হাসপাতাল, বিজয়গড় স্টেট জেনারেল ও বাঘা যতীন স্টেট জেনারেল হাসপাতাল নিয়ে আলাদা পরিকল্পনা ছিল মমতার। ঠিক ছিল, এর এক-একটিতে এক-এক বিষয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা হবে— কোথাও গাইনি, কোথাও নিউরো, কোথাও বা কার্ডিওলজি। সবটাই এখনও পরিকল্পনা স্তরে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kolkata government hospitals
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE