Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Indian Railways

নীরবে দূষিত হচ্ছে ঝিল, রেল ও পুরসভার চাপান-উতোর

ডিকেডি ঝিল নামে স্থানীয় ভাবে পরিচিত এই ঝিলে প্রতি বছর ছটপুজো উপলক্ষে প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি লোকের সমাগম হয়।

অবহেলিত: ডিকেডি ঝিলের জলে ভাসছে কাঠামো। নিজস্ব চিত্র

অবহেলিত: ডিকেডি ঝিলের জলে ভাসছে কাঠামো। নিজস্ব চিত্র

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২০ ০৪:০৪
Share: Save:

কলকাতা পুরসভা এলাকার মধ্যে থাকা কয়েক একরের ঝিলটির জলে এখনও ভাসছে দুর্গা প্রতিমার কাঠামো। তার আশপাশের এলাকায় আবর্জনার স্তূপ। এই জলেই প্রতি বছর ছটপুজো এবং ছটের সামগ্রীর ভাসান— চলে সবই। বছরের পর বছর কোনও সংস্কার ছাড়া এ ভাবেই দূষিত হয়ে চলেছে ডিকেডি ঝিল। যদিও কলকাতা পুরসভার দাবি, বেলগাছিয়া মেট্রো স্টেশনের পাশ দিয়ে গিয়ে দক্ষিণদাঁড়ি রেল কোয়ার্টার্সের সামনে থাকা এই বিরাট ঝিলটি পূর্ব রেলের অধীনে। আর ঝিলের দূষণ নিয়ে রেল কর্তৃপক্ষের কোনও মাথাব্যথা নেই বলেই অভিযোগ পুরসভার। যদিও এ বিষয়ে তাদের কিছু জানা নেই বলেই দাবি করেছে রেল।

ডিকেডি ঝিল নামে স্থানীয় ভাবে পরিচিত এই ঝিলে প্রতি বছর ছটপুজো উপলক্ষে প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি লোকের সমাগম হয়। স্থানীয়দের পাশাপাশি লাগোয়া লেক টাউন, সল্টলেক, পাতিপুকুর-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে ছটপুজোর জন্য ওই ঝিলে আসেন অনেকে। এ বছরেও একই ভাবে ওই ঝিলে ছটের বিসর্জন হবে বলেই জানাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

পরিবেশ আদালত এবং হাইকোর্টের নির্দেশে এ বছরে রবীন্দ্র সরোবরের পাশাপাশি পূর্ব কলকাতার সুভাষ সরোবরে ছটপুজোয় নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। করোনা সংক্রমণ রোখার পাশাপাশি সুভাষ সরোবরকে দূষণের হাত থেকে বাঁচানো এই নির্দেশের অন্যতম উদ্দেশ্য। তবে ডিকেডি ঝিল সংলগ্ন বাসিন্দারা অবশ্য এই নির্দেশ নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ। তাঁদের দাবি, কোর্টের নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে শুধুমাত্র ওই দুই সরোবরের জন্য, ডিকেডি ঝিলের জন্য নয়। রেণুদেবী সাউ নামে এক স্থানীয় মহিলার কথায়, ‘‘ঘরে ছট বিসর্জন দেওয়া তো সম্ভব নয়। তাই ঝিলেই বিসর্জন দিতে হবে।’’ কিন্তু এ ভাবে তেল, ঘি, ফুল-পাতা ফেলা হলে বদ্ধ জলাশয় যে দূষিত হবে, সে বিষয়ে বিশেষ হুঁশ নেই তাঁর। হেসে বলছেন, ‘‘শুনেছি করোনার জন্য ওই দু’জায়গায় এ বার নামা বারণ। তবে পুলিশ বলে গিয়েছে যে, একসঙ্গে সকলে জলে নামতে পারবেন না।’’

পরিবেশকর্মীদের দাবি, পুজোর সামগ্রী ফেলা হলে তা থেকে যে কোনও বদ্ধ জলাশয়ই দূষিত হয়। যে কারণে রবীন্দ্র সরোবর বা সুভাষ সরোবরকে দূষণমুক্ত করতে তাঁরা আন্দোলন করে চলেছেন। পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের স্পষ্ট বক্তব্য, ‘‘২০১৬ সালে ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনাল রায় দিয়েছিল, কোনও ধরনের জলাশয়েই ছট বিসর্জন করা যাবে না। জলে কিছু ফেললে তা সঙ্গে সঙ্গে তুলে নিতে হবে। জলাশয়ের আশপাশে জাল দিয়ে কিংবা বেড়া দিয়ে দিতে হবে। স্থানীয় পুর প্রশাসনকে জলের নমুনা পরীক্ষা করতে হবে।’’

কিন্তু ডিকেডি ঝিলের দূষণ নিয়ে রেলের কোনও মাথাব্যথাই নেই বলে অভিযোগ করছে পুরসভা। পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর তথা সাংসদ শান্তনু সেনের দাবি, রেল এ ব্যাপারে উদাসীন। তিনি বলেন, ‘‘বহু বার ওই ঝিলের সংস্কারের ব্যাপারে রেলকে বলা হয়েছে। কিন্তু তারা উদাসীন। রেল নিজেও কিছু করে না, পুরসভাকেও কিছু করতে দেয় না।’’ ডিকেডি ঝিলের দূষণ নিয়ে পূর্ব রেলের সিপিআরও নিখিল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি।’’

কিন্তু জল বা জলাশয়ের জীব‌বৈচিত্র রক্ষা করতে মানুষকে সচেতন করার দায়িত্ব কি পুরসভার নয়? শান্তনুবাবুর জবাব, ‘‘আমরা চেষ্টা করি। কিন্তু মানুষ নিজে সচেতন না হলে কী করার আছে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Indian Railways KMC Pollution Belgachia Metro
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE