Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Consumer Court

সিলিন্ডারের আগুনে মৃত্যুতে ১৬ লক্ষ টাকা দিতে নির্দেশ

বরাহনগরের বারুইপাড়ায় ২০০৮ সালের এই দুর্ঘটনায় বাবা-মাকে হারান সৌরভ দাস। তখন তাঁর বয়স আঠারো।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

মেহবুব কাদের চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২০ ০৫:২৬
Share: Save:

ওভেনের সঙ্গে সিলিন্ডার যোগ করে পরে গ্যাস জ্বালানোর পরে গৃহকর্ত্রী দেখেছিলেন, আগুনের শিখা স্বাভাবিক নয়। দ্রুত নিকটবর্তী গ্যাস ডিলারকে ফোন করে বিষয়টি জানান। কিন্তু দু’দিন ধরে বারবার জানানোর পরেও সেখান থেকে কেউ আসেননি। বাধ্য হয়ে এক মিস্ত্রিকে ডেকে এনে ওভেন সারানোর সময়েই গোটা ঘরে আগুন লেগে যায়। পুড়ে মৃত্যু হয় গৃহকর্তা, তাঁর স্ত্রী এবং ওই মিস্ত্রির।

বরাহনগরের বারুইপাড়ায় ২০০৮ সালের এই দুর্ঘটনায় বাবা-মাকে হারান সৌরভ দাস। তখন তাঁর বয়স আঠারো। বরাহনগরের ওই গ্যাস ডিলারের কাছে ক্ষতিপূরণের দাবিতে তিনি বারবার গেলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। চিঠি দিয়েছিলেন গ্যাস সংস্থাকেও। গ্যাস ডিলারের কাছ থেকে সময়মতো লোক না পাঠানোর উদাসীনতায় তাঁর মা-বাবার মৃত্যু হয়েছে, এই মর্মে বরাহনগর থানায় অভিযোগও দায়ের করেছিলেন সৌরভ। শেষমেশ ২০০৯ সালে রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা দায়ের করেন তিনি। সম্প্রতি আদালত ওই মামলার রায়ে ইন্ডিয়ান অয়েল এবং বরাহনগরের ওই গ্যাস ডিলারকে মোট ১৬ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিয়েছে।

বরাহনগরের বাসিন্দা, পেশায় কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের কর্মী শুভেন্দু দাস ২০০৮ সালের ৫ মার্চ নিকটবর্তী রায়মোহন চ্যাটার্জি রোডের স্নেহা গ্যাস সার্ভিস থেকে ইন্ডিয়ান অয়েল গ্যাস কর্পোরেশনের একটি সিলিন্ডার বুক করেন। ৯ এপ্রিল শুভেন্দুবাবুর স্ত্রী বিষ্ণুপ্রিয়াদেবী ওভেনে সিলিন্ডারটি যুক্ত করে গ্যাস জ্বালাতেই শিখার অন্য রকম রং দেখতে পান। এ ছাড়াও, গ্যাস ঠিকঠাক না জ্বলায় স্নেহা গ্যাস সার্ভিসে খবর দেন শুভেন্দুবাবু। দু’দিন ধরে অপেক্ষা করেও ওই ডিলারের কাছ থেকে কোনও কর্মী না আসায় এক মিস্ত্রিকে ডেকে আনা হয়। শুভেন্দুবাবুর ভাই সুব্রতকুমার দাস বলেন, ‘‘প্রশান্ত দেবনাথ নামের ওই মিস্ত্রি ওভেন মেরামতি করার সময়েই হঠাৎ রান্নাঘরে আগুন লেগে যায়।

বৌদি ওখানেই ছিলেন। চিৎকার শুনে পাশের ঘর থেকে দাদা ছুটে যান। তিন জনেই আগুনে পুড়ে গিয়েছিলেন। হাসপাতালে নিয়ে গেলে সকলকেই মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।’’ তিনি আরও জানান, ওই সিলিন্ডার থেকে গ্যাস বেরোলেও কেউই কোনও গন্ধ পাননি।

২০০৯ সালে সৌরভ ইন্ডিয়ান অয়েল গ্যাস কর্পোরেশন এবং ওই গ্যাস ডিলারের থেকে ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করেন। সম্প্রতি আদালতের দুই বিচারক, শ্যামল গুপ্ত এবং উৎপলকুমার ভট্টাচার্য তাঁদের রায়ে বলেন, ‘‘গ্যাস সিলিন্ডার বাড়িতে পৌঁছনোর পরে তাতে কোনও ত্রুটি থাকলে তৎক্ষণাৎ ওই ডিলারের তরফে তা সারানোর ব্যবস্থা করাই নিয়ম। অথচ ওই গ্যাস ডিলার চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। পাশাপাশি, ওই গ্যাস সংস্থাও দায় এড়াতে পারে না।’’ রায় বেরোনোর ৪০ দিনের মধ্যে ১৬ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়েছিল। তবে ৪০ দিন পেরিয়ে গেলেও ক্ষতিপূরণ পাননি অভিযোগকারী।

এই রায় প্রসঙ্গে স্নেহা গ্যাস সার্ভিসের তরফে সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ঘটনাটি দুঃখজনক। তবে পুরোটাই সাজানো। আমরা এবং ইন্ডিয়ান অয়েল এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে জাতীয় ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে যাব। লকডাউনের জন্য আমরা এখনও দিল্লি যেতে পারিনি। শীঘ্রই উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করব।’’

কাকার কাছে বেড়ে ওঠা সৌরভ এখন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তিনি বলেন, ‘‘আমার মা-বাবা ও প্রশান্তকাকুর মৃত্যুর জন্য গ্যাস ডিলার এবং গ্যাস সংস্থা দায় এড়াতে পারে না। এই মামলাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে যত দূর যেতে হয় যাব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Consumer Court Indian Oil Corporation Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE