Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

লক্ষ্মীপুজোয় থিম লক্ষ্মীমন্ত, তাতেই বিতর্ক

দুর্গোৎসবের মতো থিম এ বার লক্ষ্মীপুজোতেও। মধ্য কলকাতার সারপেন্টাইন লেনে ‘উন্নয়ন দ্য কোটেরি সর্বজনীন লক্ষীপুজো কমিটি’ ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পের সঙ্গে নারীর বিবর্তনকে থিম হিসেবে তুলে ধরেছে।

সারপেন্টাইন লেনের সেই লক্ষ্মীপুজোর মণ্ডপ। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

সারপেন্টাইন লেনের সেই লক্ষ্মীপুজোর মণ্ডপ। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

নীলোৎপল বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৮ ০২:০৮
Share: Save:

পাড়া জুড়ে ‘হল অব ফেম’! এক দিকে কৃতী মহিলাদের নাম-সহ ছবি। অন্য দিকে মাটির কাঠামোয় শৈশব থেকে বার্ধক্য পর্যন্ত নারীর বেড়ে ওঠা। সব শেষে বঙ্গের মানচিত্রের আদলে মণ্ডপ। তাতের ভিতরেই স্থান হয়েছে লক্ষ্মীপ্রতিমার!

দুর্গোৎসবের মতো থিম এ বার লক্ষ্মীপুজোতেও। মধ্য কলকাতার সারপেন্টাইন লেনে ‘উন্নয়ন দ্য কোটেরি সর্বজনীন লক্ষীপুজো কমিটি’ ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পের সঙ্গে নারীর বিবর্তনকে থিম হিসেবে তুলে ধরেছে। সেই সঙ্গে মণ্ডপসজ্জার অংশ হিসেবে রাখা হয়েছে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের হস্তশিল্পের সংরক্ষণ। এই পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা সুমন পণ্ডিত বলেন, ‘‘এ বার আমাদের পুজোর ২০তম বছর। আমরা থিম করেছি ‘বিশে বিশ্ববঙ্গ, কন্যাশ্রী সততই লক্ষ্মীশ্রী’। লক্ষ্মীকে বাঙালি মেয়ে হিসেবেই দেখা হয়। তাই মেয়েবেলা থেকে নারীর বেড়ে ওঠা এবং কৃতী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার বিবর্তন এই থিমের মাধ্যমে দেখাতে চেয়েছি আমরা।’’ সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘প্রশাসনিক, সাহিত্য, চলচ্চিত্র, ক্রীড়া এবং কর্মক্ষেত্রে কৃতী নারীদের ছবির হল অব ফেম বানিয়েছি আমরা। কন্যাশ্রী প্রকল্প নারীর চলার পথে সাহায্য করেছে মাত্র। কন্যাশ্রী প্রকল্পের আগেও একাধিক কৃতী নারীর জন্ম দিয়েছে এই বাংলা। আমাদের মেয়েরা যে
আদতে লক্ষ্মীমন্তই।’’

যদিও এই থিম ঘিরে ইতিমধ্যেই নানা মহলে উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন। তবে কি লক্ষ্মীমন্ত হওয়াই নারীর বিবর্তনের চূড়ান্ত পর্যায়? লেখিকা তিলোত্তমা মজুমদার বলছেন, ‘‘থিম হিসেবে বিষয়টা প্রশংসনীয়। তবে এ যদি নারীকে লক্ষ্মীমেয়ে করে তোলার সেই পুরনো রীতি হয়, তা হলে আমার আপত্তি আছে। কোনও মেয়ের বেড়ে ওঠা মানেই লক্ষ্মী হয়ে ওঠা হতে পারে না। তা ছাড়া কার কোন আচরণটা লক্ষ্মীমন্ত এবং কোনটা নয়, তা সমাজ ঠিক করতে পারে না।’’ সেই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘‘দুর্গাপুজোর থিম হলে তবু বোঝা যেত। বিবর্তনের পথ ধরে নারীর চূড়ান্ত শক্তির রূপ ধারণের কথা উঠতে পারে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তো তা-ও নয়!’’

ভারতের মহিলা ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক ঝুলন গোস্বামীর মতে, ‘‘নারী এবং পুরুষকে এ ভাবে আলাদা করে দেখারই মানে নেই। পৃথিবীর সকলেই সমান। পুজোর থিম হিসেবে নারীর অধিকার প্রায়ই বিভিন্ন জায়গায় উঠে আসছে। তবু তো নারীর প্রতি দুর্ব্যবহার কমছে না। কিন্তু নারীর ক্ষমতায়নের জন্য পুরুষ-নারীর মধ্যে ভেদাভেদ বাড়ানোর কোনও প্রয়োজন নেই। তা ছাড়া, নারীদের নিয়ে থিম হলে পুরুষদের নিয়েও তো থিম হওয়া উচিত।’’ ঝুলনের পরামর্শ, ‘‘উৎসবের স্বার্থে এই থিমকে স্বাগত জানালেও একটা কথা বলতে চাই, সামাজিক শিক্ষাই সবচেয়ে বড় শিক্ষা হওয়া উচিত।’’

সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলছেন, ‘‘পুজোর থিম হিসেবে এই বিষয়টি আমার বেশ ভালই লেগেছে। লক্ষ্মীশ্রী নারীর ধারণা দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। বর্তমান সময়ে নারীদের এমন পরিচয় নিয়ে প্রতিবাদ, বিতর্ক থাকতেই পারে। তবে আমরা অন্তত সন্তান এবং স্বামী হিসেবে এমন লক্ষ্মীশ্রী নারীকেই দেখে এসেছি।’’

প্রাক্তন ব্যাঙ্ক কর্তা অরুন্ধতী ভট্টাচার্যের মতে, ‘‘সামাজিক দিক থেকে এই বিষয়টি খুবই ভাল। সবচেয়ে বড় কথা, মহিলাদের সাবলীল করার পক্ষে এই থিম ভাবনা অত্যন্ত কার্যকর।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Controversy Theme Laxmi Puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE