মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়
‘মেয়র ইন কাউন্সিল’ আনুষ্ঠানিক ভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরিত করেনি। অথচ তিন বছর আগে মেয়র পরিষদের
এক বৈঠকে হঠাৎই বকেয়া সম্পত্তিকরের উপরে জমা সুদ ও জরিমানা মকুবের ক্ষমতা মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের হাতে কেন্দ্রীভূত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তার পর থেকে পুরসভায় জমা পড়া এ সংক্রান্ত সব আবেদন একক ভাবে মেয়রের হাত দিয়ে পাশ হয়েছে। ‘মেয়র-ইন-কাউন্সিল’ ক্ষমতা হস্তান্তর না করা সত্ত্বেও এ ভাবে পাশ করাটা আইনসিদ্ধ কি না, এ বিতর্কে আঁচ পেতেই এ বার সংশোধনী আনছে কলকাতা পুরসভা।
আগের সিদ্ধান্তের ‘ত্রুটি’ সংশোধন করে বকেয়া সম্পত্তিকরের সুদ ও জরিমানা মকুবের বিষয় মেয়রের হাতে কেন্দ্রীভূত হতে চলেছে। পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, তিন বছর আগের সিদ্ধান্তে কিছু ‘ত্রুটি’ থাকায় তা সংশোধন করা হচ্ছে। পুরসভা সূত্রের খবর, কলকাতা পুর (সংশোধনী) আইন, ২০১৪ সালের ২১৭ (৬) ধারা অনুযায়ী, কোনও করদাতা যদি বকেয়া কর জমা দিতে অক্ষমতার কথা লিখিত ভাবে জানান, তা বিবেচনা করে বকেয়া করের উপরে জমা সুদের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত মকুবের ক্ষমতা ‘মেয়র ইন কাউন্সিলে’-এর রয়েছে। পুর প্রশাসনের যুক্তি, বিষয়টি অর্থ সংক্রান্ত হওয়ায় কারও একার হাতে দায়িত্ব না রেখে মেয়র পরিষদকে সমবেত ভাবে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু ২০১৫ সালের জুলাইয়ে মেয়র পরিষদের এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বকেয়া করের উপরে জমা সুদের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত মকুবের সিদ্ধান্ত নেবেন মেয়র। ওই বছরই আরও একটি সিদ্ধান্ত হয়, বকেয়া করদাতার ৯৯ শতাংশ জরিমানা মকুবের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তও নেবেন মেয়রই। যদিও তখন কোথাও এটা উল্লেখ করা হয়নি, সুদ মকুবের ক্ষমতা ‘মেয়র ইন কাউন্সিল’ মেয়রকে হস্তান্তর করেছে কি না।
এমনিতে ‘মেয়র ইন কাউন্সিল’ নিজেদের যে কোনও ক্ষমতাই পুর আইনের ৪৮ (২) ধারা অনুযায়ী মেয়র বা পুর কমিশনারকে হস্তান্তর করতে পারে। কিন্তু এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উল্লেখ না করায় স্বাভাবিক ভাবেই জটিলতা থেকে গিয়েছে। কারণ, পুরসভা সূত্রের খবর, গত তিন বছরে বকেয়া করের উপরে জমা সুদ ও জরিমানা মকুবের প্রায় ১৬ হাজার আবেদন জমা পড়েছে পুরসভায়। অনেকগুলি মেয়রের সম্মতিতে পাশও হয়েছে। কিন্তু আইনি ক্ষমতা হস্তান্তরিত না হওয়ায় মেয়রের পাশ করা সুদ ও জরিমানা মকুবের সিদ্ধান্ত আইনসিদ্ধ কি না, সেই প্রশ্নও উঠেছে। প্রাক্তন মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আগে সকলে জানতেন,
সেটা এখন এক জন জানেন। ফলে কত টাকা মকুব হচ্ছে, কী ভাবে হচ্ছে, তা নিয়ে দুর্নীতির আশঙ্কা থাকছেই।’’ কংগ্রেস কাউন্সিলর প্রকাশ উপাধ্যায় বলেন, ‘‘দুর্নীনিতে ভরে গেছে পুরসভা। আমরা বারবার বলেছি মেয়রের কাজে স্বচ্ছতা নেই।’’
বিতর্ক এড়াতে সম্প্রতি পুর প্রশাসনের বৈঠকে প্রস্তাব পাশ করানো হয়েছে, বকেয়া করের উপরে জমা সুদ ও জরিমানা মকুবের ক্ষেত্রে ‘মেয়র ইন কাউন্সিল’ ক্ষমতা মেয়রকে হস্তান্তর করবে। শুধু তাই নয়, গত তিন বছর ধরে মেয়র একা যে সব ফাইল পাশ করিয়ে এসেছেন, মেয়র পারিষদেরা সেই সব ফাইলেও সম্মতি দেবেন। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘সুদ, জরিমানা মকুবের প্রতিটি কেস মেয়র পরিষদের বৈঠকে তোলা সময়সাপেক্ষ। দ্রুত যাতে কাজ হয় তাই ত্রুটি সংশোধন করতে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।’’
যদিও এ বিষয়ে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এটা ইতিমধ্যেই আইন হয়ে গিয়েছে। নতুন কিছু নয়। ফলে বাকি সংশোধন যদি কিছু হয়েও থাকে, তাতে বিশেষ কিছু পরিবর্তন হবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy