Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়

ভর্তির পরীক্ষা হবে কি না, ঠিক করবে বিভাগই

উত্তর মিলল না গভর্নিং বোর্ডের বৈঠকেও। শুক্রবার ওই বৈঠকে প্রবেশিকা পরীক্ষার মাধ্যমে ছাত্র ভর্তি হবে কি না, তা ঠিক করার ভার সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলির উপরেই ছাড়ল প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী ওই সংস্থা। কোনও বিভাগ প্রবেশিকা পরীক্ষা নিতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সব রকম সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৪৪
Share: Save:

উত্তর মিলল না গভর্নিং বোর্ডের বৈঠকেও।

শুক্রবার ওই বৈঠকে প্রবেশিকা পরীক্ষার মাধ্যমে ছাত্র ভর্তি হবে কি না, তা ঠিক করার ভার সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলির উপরেই ছাড়ল প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী ওই সংস্থা। কোনও বিভাগ প্রবেশিকা পরীক্ষা নিতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সব রকম সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় ভাবে প্রবেশিকা পরীক্ষা নেওয়া যায় কি না, তারও চেষ্টা চালানো হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর। প্রবেশিকা পরীক্ষা নিতে রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডকে ইতিমধ্যেই আবেদন জানিয়ে নিরাশ হয়েছে প্রেসিডেন্সি। কারণ, নিজেদের কাজ সামলে আরও ২০-২২ হাজার আবেদনকারীর পরীক্ষার বন্দোবস্ত করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে জয়েন্ট বোর্ড।

অন্য কোনও সংস্থাকে এই দায়িত্ব দেওয়া যায় কি না বা বড় ক্যাম্পাসের কোনও স্কুল-কলেজে পরীক্ষার বন্দোবস্ত করারও পরিকল্পনা করছেন কর্তৃপক্ষ। সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়গুলির সঙ্গে যোগাযোগ করা হতে পারে বলে জানাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সূত্র। এমনকী, রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় একাধিক কেন্দ্রে পরীক্ষা নেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে। যেমন, মালদহ বা তার উত্তরের জেলাগুলির প্রার্থীদের জন্য শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ির কোথাও পরীক্ষাকেন্দ্র করা হতে পারে।

যদিও এই প্রথম নয়। গত কয়েক বছর ধরেই কলকাতার বাইরে, এমনকী দিল্লিতে পরীক্ষাকেন্দ্র করে প্রবেশিকা পরীক্ষা নিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে শেষ পর্যন্ত কী হবে, তা স্থির করতে আরও কয়েকটি বৈঠকে বসা হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। জুনে ছাত্রভর্তি হওয়ার কথা। তাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য এখনও বেশ কিছুটা সময় হাতে আছে বলে সব দিক দেখে এগোতে চাইছেন কর্তৃপক্ষ।

কিন্তু প্রবেশিকা পরীক্ষা নিয়ে এই অনিশ্চয়তার কারণ কী? বিগত বেশ কয়েক দশক ধরে প্রেসিডেন্সিতে ছাত্রভর্তি হয় প্রবেশিকা পরীক্ষার মাধ্যমে। বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পরে ওই প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য আবেদনকারী পড়ুয়ার সংখ্যা বেড়েছে— এই যুক্তিতে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে প্রবেশিকা পরীক্ষা না নেওয়ার পক্ষপাতী কর্তৃপক্ষ।

যদিও প্রাক্তন উপাচার্য তথা গভর্নিং বোর্ডের সদস্য মালবিকা সরকার বলেন, ‘‘যেহেতু আবেদনকারী ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন বোর্ডের, তাঁদের যোগ্যতা বিচার করতে প্রবেশিকা পরীক্ষা প্রয়োজন।’’

কয়েক মাস ধরে প্রেসিডেন্সিতে ভর্তির প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা চলছে। বিভাগীয় প্রধানদের কাছে ই-মেল করে এ নিয়ে তাঁদের মতও জানতে চেয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। ছাত্র-শিক্ষকদের বড় অংশই প্রবেশিকা পরীক্ষার পক্ষপাতী বুঝে সম্প্রতি উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া জানিয়েছিলেন ভর্তি হবে প্রবেশিকা পরীক্ষা নিয়েই। তার পরেও অবশ্য ফের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলিই ভর্তির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানান কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গেই বলা হয়েছিল, এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে শুক্রবারের গভর্নিং বোর্ডের বৈঠকে।

কিন্তু প্রবেশিকা পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি হবে কি না, তা নিয়ে জট কাটেনি এ দিনও। উপাচার্য জানান, গভর্নিং বোর্ডের অধিকাংশ সদস্যই প্রবেশিকা পরীক্ষার পক্ষপাতী। বোর্ড-সদস্য তথা প্রেসিডেন্সির প্রাক্তন ছাত্র, বিজ্ঞানী বিকাশ সিংহও এ দিন বলেন, ‘‘প্রবেশিকা পরীক্ষা নেওয়াটাই কাম্য। আমি তো ব্যক্তিগত ভাবে ইন্টারভিউ নেওয়ারও পক্ষপাতী। তবে ২০ হাজারেরও বেশি ছাত্রছাত্রীর ইন্টারভিউ নেওয়া কঠিন।’’

আর এক প্রাক্তনী, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, মেন্টর গ্রুপের চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল সাংসদ সুগত বসু জানান, তাঁরাও সুপারিশ করেছিলেন প্রবেশিকা পরীক্ষা নেওয়া উচিত। যদিও সব দিক বিচার করে বিশ্ববিদ্যালয়েরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলেও জানান তিনি।

কর্তৃপক্ষ আবার ঠিক করেছেন, কোন বিভাগ পরীক্ষা নেবে, কারা দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার নম্বরের ভিত্তিতে ভর্তি করবে, তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সংশ্লিষ্ট বিভাগই। সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে জরুরি সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য।

এ দিন রাষ্ট্রবিজ্ঞান, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ও গণিত বিভাগের পক্ষ থেকে পরীক্ষা নিয়ে ছাত্রভর্তি হবে বলেই জানানো হয়েছে। ইংরেজি, প্রাণিবিদ্যা-সহ কিছু বিভাগ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে শিক্ষক সংখ্যা কম থাকায় সমাজতত্ত্ব, দর্শন ইত্যাদি বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষা নেওয়া কঠিন বলে এ দিনের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।

ছাত্রছাত্রীরা অবশ্য পরীক্ষার দাবিতে অনড়। এ দিনই সেই দাবিতে উপাচার্যকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানান ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক তৃষা চন্দ। তিনি বলেন, ‘‘বিভাগগুলির সঙ্গে কথা বলব। উপাচার্যের মতও জানতে চাইব।’’

মেন্টর-বৈঠকের রিপোর্ট মমতাকে

প্রথম বৈঠকের নির্যাস জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে স্বল্পদৈর্ঘ্যের রিপোর্ট পাঠাবে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবগঠিত মেন্টর গ্রুপ। মেধার ভিত্তিতে যোগ্যতম শিক্ষক বাছাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক উন্নয়ন, পরিকাঠামোর উন্নতি ও প্রেসিডেন্সির দুশো বছর পূর্তি উদ্‌যাপনের ব্যাপারে মেন্টর গ্রুপের পরিকল্পনার উল্লেখ রাখা হবে সেই রিপোর্টে। শুক্রবার এ কথা জানিয়েছেন মেন্টর গ্রুপের চেয়ারম্যান সুগত বসু। তবে মেন্টর গ্রুপের পরবর্তী পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট রাজ্য সরকারের কাছে জমা পড়বে আগামী জুলাই মাসে।

বছর দুয়েক পরে গত বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসেছিল মেন্টর গ্রুপ। সেখানে শিক্ষক নিয়োগ, পরিকাঠামো উন্নয়ন-সহ ওই বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ দিন সুগতবাবু বলেন, ‘‘আগের দফায় যখন শিক্ষক নিয়োগ হয়েছিল, তখনও মেন্টর গ্রুপের কিছু সুপারিশ ছিল। ফের শিক্ষক নির্বাচন ও নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হবে। তাই এ নিয়ে আমাদের কিছু প্রস্তাব ও পরামর্শ দেওয়ার আছে।’’ পাশাপাশি ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্সির দুশো বছর পূর্তি উপলক্ষে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে বেশ কিছু আলোচনা সভা ও অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছেন সুগতবাবু। মেন্টর গ্রুপের সদস্যেরা তো বটেই, উপদেষ্টা অমর্ত্য সেনও এ ব্যাপারে উদ্যোগী বলে জানিয়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE