অবহেলা: এ ভাবেই রাখা থাকে শববাহী যান। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
খবর এসেছে। দ্রুত যেতে হবে। শববাহী গাড়ি সদর পেরোতেই বালতি-ভর্তি জল নিয়ে ঝাঁটা হাতে ছুটে গেলেন এক নিরাপত্তাকর্মী। গজগজ করতে করতে উঠোন সাফসুতরো চলল আরও কয়েক মিনিট। এক রাশ বিরক্তি ঝরানো গলায় বললেন, ‘‘এই উঠোনে বসে নাকি মানুষের সমস্যা শুনতেন গাঁধীজি! এখন সেখানে মরার গা়ড়ি রাখছেন এঁরা?’’
এক দুপুরে গিয়ে দেখা গেল, বেলেঘাটার গাঁধী ভবনের ঠিক সামনে রাখা রয়েছে শববাহী কাচের গাড়ি। সূত্রের খবর, ওই গাড়ি গাঁধী ভবনে রাখার ব্যবস্থা করেছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা রাজু নস্কর। গাড়িটির গায়ে উদ্বোধক হিসাবে নাম লেখা রয়েছে বেলেঘাটার বিধায়ক পরেশ পালের। কিন্তু ওই ঐতিহ্যমণ্ডিত বাড়ির ভিতরে গাড়ি রাখা নিয়ে ইতিমধ্যেই বিতর্ক শুরু হয়েছে।
ওই বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পূর্ত দফতরের। ওই ভবনের এক কর্মী বলেন, ‘‘বিষয়টি ফোনে পূর্ত দফতরকে জানানো হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি যে কে সেই।’’ তাঁর অভিযোগ, সম্ভবত ওই নেতাদের প্রভাবের কথা ভেবেই কেউ কিছু করছেন না। এ কথা মানছেন পূর্ব কলকাতা গাঁধী স্মারক সমিতির সদস্যরাও। সমিতির যুগ্ম সম্পাদক পাপ়ড়ি দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘গাঁধী ভবনের মতো ঐতিহ্যশালী ভবন চত্বরে শববাহী গাড়ি রাখা হচ্ছে। এ কাজ কোনও ভাবেই করা যায় না। কিন্তু কাকে বলব? বলে তো কাজই হবে না।’’ ওই সমিতির বর্ষীয়ান সদস্য মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘শুধু গাড়ি রাখা কেন, ওই ভবনের আরও অনেক বিষয় মেনে নিতে পারছি না।’’
১৯৪৭ সালে দেশব্যাপী হিংসা চলাকালীন বেলেঘাটার ১৫০ বি, সুরেশচন্দ্র ব্যানার্জি রোডের এই বাড়িতেই বেশ কয়েক দিন কাটিয়েছিলেন মহাত্মা গাঁধী। সে সময়ে এই বাড়িতেই তাঁর কাছে অস্ত্র সমর্পণ করেছিলেন বেশ কয়েক জন। আগে নাম ছিল ‘হায়দারি মঞ্জিল’, পরে গাঁধী ভবন নামে ইতিহাসে পরিচিত হয় বাড়িটি। পরে তার একাংশে একটি সংগ্রহশালা তৈরি হয়। সেখানে গাঁধীর কাছে সমর্পণ করা অস্ত্রের পাশাপাশি রয়েছে তাঁর ব্যবহার করা খড়ম, গ্লাস, হ্যারিকেন-সহ বিভিন্ন জিনিস।
পূর্ত দফতরের সুপারিন্টেন্ডেন্ট ইঞ্জিনিয়র সিদ্ধার্থ মণ্ডলের দাবি, গাঁধী ভবনের ঐতিহ্য ভেঙে সেখানে শববাহী গাড়ি রাখার কথা জানাই ছিল না তাঁর। পাশাপাশি তিনি বললেন, ‘‘ওই বাড়িতে এমন কিছু হয়ে থাকলে তা অন্যায়। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ ওই বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত পূর্ত দফতরের আরও এক আধিকারিক বলেন, ‘‘বেশ কিছু দিন ধরে এমন অভিযোগ কানে আসছে। বিষয়টি দেখব।’’
রাজুবাবুর দাবি, ‘‘দ্রুত কোথাও পাঠানোর জন্য ওখানে শববাহী গাড়ি রাখলে সুবিধা হয়। তাই রেখেছিলাম। আপত্তি থাকলে বার করে নেওয়া হবে।’’ বিধায়ক পরেশ পালের মতে, ‘‘মানুষের জন্য ওই গাড়ি দিয়েছিলাম। ওখানে রাখা হচ্ছে জানতাম না। এখনই বার করে নিতে বলছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy