‘পুরসভার মেয়র পরিষদ বৈঠকে সব দফতরের কন্ট্রোলিং অফিসারদের রাখা ঠিক হচ্ছে না’— এমনই মনে করছেন কলকাতা পুরসভার একাধিক মেয়র পারিষদ। তাঁদের কথায়, মেয়র পরিষদ বৈঠক গোপন বিষয়। পুরবোর্ডের নীতি কী হবে, কোন কোন কাজকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে, পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা থাকলে তা কোথায়, পুর-পরিষেবা যথার্থ হচ্ছে কি না, না হলে কার গলদ এ সব নিয়ে চলে বৈঠক। একাধিক মেয়র পারিষদ জানান, নীতি নির্ধারণে কখনও তর্কবিতর্কও চলে সদস্যদের মধ্যে। অনেক সময় একতরফা সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। তা নিয়ে কোনও সদস্যের প্রতিবাদ থাকলে অফিসারদের সামনে কেউ মুখ খুলতে চান না। পুরবোর্ডকে স্বচ্ছ রাখতে সকলের সিদ্ধান্ত শোনা দরকার। প্রয়োজন সমালোচনারও। কিন্তু বিভাগীয় অফিসারেরা থাকায় অনেকেই নীরব থাকেন। তাই মেয়র পরিষদ বৈঠকে অফিসারদের সব সময় থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করল। পুরসভা সূত্রের খবর, প্রায় প্রতি সপ্তাহে পুরসভার মেয়র, ডেপুটি মেয়র এবং ১০ জন মেয়র পারিষদকে নিয়ে ওই বৈঠক হয়। কিন্তু ২০১০ সালে তৃণমূল বোর্ডের আমল থেকে মেয়র পরিষদ বৈঠকে পুরসভার সব দফতরের কন্ট্রোলিং অফিসারদেরও রাখা শুরু হয় বলে জানা গিয়েছে।
পুরসভা সূত্রের খবর, ২০০০ সালে কলকাতা পুরসভার বোর্ড ছিল তৃণমূল ও বিজেপি জোটের হাতে। মেয়র ছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তাঁর আমলে কী হতো জানতে চাওয়া হলে তৎকালীন মেয়র তথা বর্তমানে রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অফিসারদের রাখব কেন? বৈঠক তো মেয়র ও মেয়র পারিষদদের।’’ তিনি জানান, আইন মোতাবেক পুর-কমিশনার থাকতেন। সুব্রতবাবুর পরে মেয়র হন সিপিএমের বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। এ নিয়ে তাঁর বক্তব্যও একই। বললেন, ‘‘মেয়র পরিষদ বৈঠকে সব কন্ট্রোলিং অফিসারদের থাকার কথা নয়। আমাদের সময়েও রাখা হতো না।’’ বিশেষ কোনও দফতরের ব্যাপারে কিছু জানার হলে বাইরে অপেক্ষমান অফিসারদের মধ্যে নির্দিষ্ট কাউকে ডেকে পাঠানো হতো। তবে বর্তমান মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তাতে কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।’’ আর অতীতেও এমনটা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
পুরসভা সূত্রের খবর, পুরসভার বিভিন্ন দফতরের ডিরেক্টর জেনারেল (ডিজি), চিফ ম্যানেজার শুধু নয়, কখনও কখনও তার নিচের পদমর্যাদার একাধিক অফিসারকেও মেয়র পরিষদের বৈঠকে রাখা হয়। তাতে আপত্তি কেন? জানতে চাইলে মেয়র পারিষদদের একাংশ জানান, ত্রিফলা আলো, লেক মলের লিজ দেওয়া থেকে রক্সি বিল্ডিং, সিঙ্গুরের কারখানা ভাঙার খরচ-সহ নানা ঘটনায় বিব্রত হতে হয়েছে পুরবোর্ডকে। কখনও মেয়র পারিষদ, কখনও বা অর্থ দফতর প্রতিবাদের চেষ্টা করেছে। বলা হচ্ছে, ওই সব বিষয় নিয়ে মেয়র পারিষদদের মতামত ঠিক ভাবে প্রতিফলিত হলে পুর প্রশাসনকে অস্বস্তিতে পড়তে হতো না। তাঁদের কথায়, মেয়র বা কোন সদস্য যে কেউ কোনও প্রস্তাব তুললে তার ভাল, খারাপ দুটো দিকই বিবেচনা করা দরকার। শুধু একতরফা ভাবে কোনও সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া ঠিক নয়। আলোচনা হলে নানা জনের নানা পরামর্শে ত্রুটি থাকলে তা শুধরে দেওয়ার সুযোগ থাকে। তাতে হয়তো শাসক দলের সদস্যদের মধ্যে বিতর্ক হবে, ঝগড়াও হবে। আর তা যে ভালর জন্যই সেটা বোঝা দরকার। কিন্তু বৈঠকে অফিসার থাকলে সেটা হয়ে ওঠে না। কারণ অফিসারদের সামনে মেয়র যদি কাউকে বকাবকি করেন, তা হলে সেই সদস্য অপমানিত বোধ করেন। কেউ কেউ বলেও দিলেন, ‘‘মেয়র বকাবকি করলে হাজির থাকা অফিসারেরা আর আমাদের রেয়াত করবে? এ সব জেনেবুঝেই চুপ করে থাকতে হয়।’’ উল্টোটাও ঘটতে পারে, যা মেয়রকেও বিব্রত করতে পারে। আরও যুক্তি, এক একটা দফতরের দায়িত্বে রয়েছে তাঁদের উপর। দফতরের খুঁটিনাটি তো তারা জানেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy