Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

ক্রেতার অভাবে শিল্পতালুক ডুবছে ক্ষতিতে

স্ট্যান্ডে ভর্তি অটো। কিন্তু যাত্রী কোথায়? অটোচালকদের বক্তব্য, স্বাভাবিক দিনে তো ব্যস্ত সময়ে স্ট্যান্ডেই গাড়ি ভরে যায়। কিন্তু এ ভাবে চললে মালিককে নির্দিষ্ট টাকা দেওয়া দূর, গাড়ির খরচই উঠবে না।

সুনসান: করোনাভাইরাস সংক্রমণের আতঙ্কে উধাও সল্টলেকের তথ্যপ্রযুক্তি তালুকের চেনা ভিড়। বৃহস্পতিবার। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

সুনসান: করোনাভাইরাস সংক্রমণের আতঙ্কে উধাও সল্টলেকের তথ্যপ্রযুক্তি তালুকের চেনা ভিড়। বৃহস্পতিবার। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

কাজল গুপ্ত
শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০২০ ০৪:৩৭
Share: Save:

এক ঝলক দেখলে মনেই হবে না যে সপ্তাহের কোনও কাজের দিন। চেনা ভিড়টা কোথাও নেই। রাস্তার ধারের দোকানদারদের কথায়, গত কয়েক দিন ধরেই এমন পরিস্থিতি। বিক্রিবাটা প্রায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। ফলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন দোকানদার, রিকশাচালক ও অটোচালকেরা। সল্টলেক থেকে নিউ টাউনের তথ্যপ্রযুক্তি তালুকের বিভিন্ন জায়গায় এমনই অবস্থা।

স্ট্যান্ডে ভর্তি অটো। কিন্তু যাত্রী কোথায়? অটোচালকদের বক্তব্য, স্বাভাবিক দিনে তো ব্যস্ত সময়ে স্ট্যান্ডেই গাড়ি ভরে যায়। কিন্তু এ ভাবে চললে মালিককে নির্দিষ্ট টাকা দেওয়া দূর, গাড়ির খরচই উঠবে না। অটো ইউনিয়নের নেতা নির্মল দত্ত জানাচ্ছেন, ব্যবসা এখনই অর্ধেকে নেমে গিয়েছে। এক অটোচালকের কথায়, ‘‘করুণাময়ী থেকে মেট্রো চালু হওয়ায় এমনিতেই যাত্রী কমেছিল। এ বার করোনা-আতঙ্কে মাথায় হাত পড়েছে। ১৫০ কিলোমিটার গাড়ি চালিয়ে দিনে ৭০০ টাকাও রোজগার হচ্ছে না। মালিককে টাকা দেব, না গ্যাসের খরচ তুলব সেটাই বুঝতে পারছি না।’’ সমস্যায় পড়েছেন রিকশাচালকেরাও। কমবেশি প্রভাব পড়েছে ট্যাক্সি এবং অ্যাপ-ক্যাবের ব্যবসাতেও। এক রিকশাচালক জানাচ্ছেন, অন্য সময়ে যা আয় হত, তার অর্ধেকেরও বেশি কমে গিয়েছে।

ইতিমধ্যেই পাঁচ নম্বর সেক্টরের বেশ কিছু সংস্থা বাড়ি থেকে কাজ করায় ছাড় দিয়েছে। একাধিক প্রতিষ্ঠানের অফিস আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফলে জনসমাগম ঘটে এমন জিএন, ইএন, বিপি, ইকিউ, ইপি, ডিএন ব্লকগুলি তুলনায় ফাঁকা। যার প্রভাব পড়েছে খাবারের দোকানেও। স্বাভাবিক কাজের দিনে সল্টলেকে সিজিও কমপ্লেক্সের বাইরে রাস্তার খাবারের দোকানগুলি সকাল-সন্ধ্যা গমগম করে। বৃহস্পতিবার দেখা গেল, চা থেকে ফলের দোকান— সর্বত্র ক্রেতার আশায় বসে বিক্রেতারা।

সিজিও কমপ্লেক্সের গেটের বাইরে চায়ের দোকান রয়েছে সুবল বিশ্বাসের। কয়েক দিন ধরেই বিক্রি তলানিতে। বাজারের অবস্থা যে খারাপ মানছেন সুবল। রাস্তার ধারে ভাতের স্টল চালান সদানন্দ মণ্ডল। তিনি জানাচ্ছেন, লোক অনেক কম। যাঁরা আসছেন, তাঁরা খাওয়া নিয়ে বিশেষ সতর্ক। এক দোকানদার জানাচ্ছেন, ৭-১০ হাজার টাকার বিক্রি দু’হাজারে আগেই নেমে গিয়েছিল। গত দু’দিনে আরও খারাপ হয়েছে। ক্ষতি সামলাতে আশপাশের অনেক দোকান ঝাঁপ নামিয়েছে। ওয়েবেলের কাছের কয়েকটি দোকানে দেখা গেল, মাস্ক-গ্লাভস পরে খাবার সরবরাহ করছেন বিক্রেতারা। ব্যবসায়ী দীপঙ্কর মণ্ডল বলেন, ‘‘শুনছি, কিছু দিনের মধ্যেই অফিসগুলিতে কর্মীদের আসা বন্ধ হবে। তখন কী করব জানি না। আয় বাড়াতে বেশি সময় ধরে দোকান খোলা রাখতে হচ্ছে।’’

পাঁচ নম্বর সেক্টরে কর্মরত মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা তন্ময় অধিকারীর কথায়, ‘‘ভিড় এড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসক থেকে প্রশাসনের বড় অংশ। স্পর্শ থেকে দূরে থাকার কথা বলা হচ্ছে। স্বাভাবিক ভাবেই দোকানের খাবার কিনে খেতেও

আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে।’’ এ দিকে ব্যবসা তলানিতে ঠেকায় কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পাঁচ নম্বর সেক্টরের হকার ইউনিয়নের এক কর্তা ভবতোষ সরকারের। তিনি বলেন, ‘‘করোনাভাইরাসের আতঙ্কে বিভিন্ন সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে। যার জেরে পাঁচ নম্বর সেক্টরে অফিসে আসা কর্মী কমছে। এর প্রভাব তো পড়বেই ওই এলাকার হকারদের ব্যবসায়। তবে জানি না এ ভাবে কত দিন চলবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Saltlake
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE